বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি; রাবি:
আঁধারের বুক চিরে ভোরের আলোর ঝলকানি। ক্যাম্পাসে হাজারও মানুষের জমায়েত। সারিবদ্ধভাবে শহীদ মিনার চত্বর থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। কপালে বিজয় দিবসের ফ্যাটা, গালে আঁকা লাল-সবুজের পতাকা। প্রত্যেক সারির প্রথমে ফুলে সজ্জিত ডালা নিয়ে অধির আগ্রহে অপেক্ষমাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু কনকনে শীতের মধ্যেও কেন এতো আয়োজন? বাতাসের ক্ষীণ আওয়াজ জানিয়ে দিলেন সে প্রশ্নের উত্তর। আজ যে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এইদিনে ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণ আর অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলা মা তাঁর বিজয় অর্জন করেছিল।
সেই বিজয়গাঁথা স্মরণেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভোর সকাল থেকেই শুরু হয় শ্রদ্ধার্পণ, দোয়া মাহফিল, বর্ধিত আলোচনা সভাসহ নানাবিধ আয়োজন।
বিজয় দিবসের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক মাহমুদ নিশান বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই স্বাধীনতা দিবস আছে। কিন্তু বিজয় দিবস সব জাতির ইতিহাসে নেই। স্বাধীনতা ঘোষণার পর সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন সব জাতিকে করতে হয়নি। বাঙালি জাতি সেই অনন্য সাধারণ কাজটি করেছে বলেই তাদের কাছে বিজয় দিবস খুবই তাৎপর্যময়। বিজয় দিবস বাঙালির বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিবস। যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় যত্নবান হতে হবে। কিন্তু যুদ্ধের পর আমাদের ঐক্য ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তুচ্ছ বিষয়ে রাজনৈতিক সংঘাত দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করতে বড় অন্তরায়। সব বিভেদ ভুলে একাত্তরের মতো সব সমস্যা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই আমাদের আগ্রগতি ঘটবে। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ১৯৭১ সালের এইদিনে বাংলাদেশ নামক দেশটি পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয়। ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ডাক দেন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনসাধারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই অসীম সাহস নিয়ে বাঙালিরা একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাজয় করে। কামার, কুমার, জেলে আপামর জনসাধারণ সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ৯ মাসের যুদ্ধের পর বিজয় ছিনিয়ে আনে।
তিনি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের আশা ব্যক্ত করে আরও বলেন, আজেকর এই বিজয় দিবসে আমাদের সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। যে সমাজে কোনো বঞ্চিত লোক থাকবে না। সবাই নিজ নিজ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে এবং সত্যিকারের সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। বিজয় দিবসে এটাই আমাদের আশা। সবাইকে জানাচ্ছি বিজয়ের শুভেচ্ছা।
এদিন সাংবাদিকদের সংগঠন রাবি প্রেসক্লাব, রাবি সাংবাদিক সমিতি, রাবি রিপোর্টাস ইউনিটি, সামাজিক সংগঠন পাঠক ফোরাম, রাবি সায়েন্স ক্লাব, রাবি ক্যারিয়ার ক্লাব, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিভিন্ন জেলা সমিতিসহ শতাধিক ক্লাব ও সংগঠন শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।