নিউজ ডেস্ক:
অপরাধ দমনের জন্য যুগে যুগে অনেক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে মধ্যযুগের ইউরোপে শাস্তি অনেক নির্মম ছিল। বর্তমান সময় থেকে তখনকার আইন এবং শাস্তি সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। সে সময় কিছু আইন ছিল যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সত্যিই উদ্ভট।
চলুন জেনে নেই মধ্যযুগের কিছু অদ্ভুত আইনের কথা :
মালিকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে : মধ্যযুগীয় ইউরোপে সবথেকে ভয়াবহ আইনের একটি ছিল এটি। বিশেষ করে সমাজের নিচের স্তরের নারীদের ক্ষেত্রে এই আইন চালু ছিল। তৎকালীন আইন অনুসারে, যদি কোনো শ্রমজীবী কৃষক জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে ফেলত তবে তাকে সবথেকে কঠিন সাজা ভোগ করতে হতো। বিষয়টা আরো খারাপ হতো যদি কোনো নারীর স্বামী মারা যেত। তাহলে জমিদার তাকে জোর করত অন্য কাউকে বিয়ে করতে অথবা নিজেই কাউকে নির্বাচন করে দিত সেই নারীর স্বামী হিসেবে। এতে যদি কেই ভিন্নমত পোষণ করত বা সহযোগিতা না করত তাহলে সেই নারীকে শাস্তি ভোগ করতে হতো।
পার্লামেন্ট কক্ষে মৃত্যুবরণ : কখন, কিভাবে এই আইন জারি ছিল হয়েছিল তা অস্পষ্ট। যাই হোক, যুক্তরাজ্যে এখনো এই অদ্ভুত আইনটা চালু রয়েছে যা, ২০০৭ সালে ইতিহাসে সবথকে অর্থহীন আইন হিসেবে নির্বাচিত হয়। পার্লামেন্টে বক্তব্য প্রদানের সময় যদি কেউ হটাৎ মৃত্যুবরণ করেন তবে তা শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং বেআইনি হিসেবে গণ্য হতো।
দাঙ্গা হাঙ্গামার সময়ে চুপ থাকা : মধ্যযুগের ইউরোপে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা মারামারি এমনই একটা বিষয় ছিল যে, কোথাও কোনোভাবে শুরু হয়ে গেলে নিমিষেই তা ছড়িয়ে পড়ত। মারামারিতে কেউ নিহত হলো অথচ সেই মারামারি বন্ধ না করে আপনি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন, এমনটি হলেই আইন আপনার বিপক্ষে! দাঙ্গা চলার সময়ে কেউ খুন হলে আর ভিড়ের মধ্যে খুনি পালিয়ে গেলে, নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যেকোনো সাত জনকে আটক করার ক্ষমতা রাখত। আটকদের নানাভাবে স্বীকার করতে বলা হতো, তারাই খুন করেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল যে, আটকদের কেউ যদি আদালতে সেই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করতেন, আদালত তার কথাগুলোকে নিজ দোষের সাফাই হিসেবে গণ্য করত এবং শাস্তি ঘোষণা করত। সুতরাং মারামারি বেঁধে গেলে হয় নিজেও তাতে লেগে যান নয়তো পালিয়ে বাঁচুন, বিষয়টা এমনই ছিল।
সাজসজ্জা : ইতালিতে মধ্যযুগে ব্যয় নিয়ন্ত্রনের জন্যে অদ্ভুত এক আইন জারি ছিল। এই আইনের ফলে যে কেউ যা খুশি তা পরিধান করতে পারতেন না। নির্দিষ্ট শ্রেণী বা আয়ের উপর ভিত্তি করে সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণ হতো। ফলে একেক শ্রেণী একেক ধরনের পোশাক পরতেন। যদি কেউ অত্যাধিক মাত্রায় ধনী হতেন তিনি চাইলে ইচ্ছে মতো দামি পোশাক পরতে পারতেন। তবে ধনী না হওয়া সত্বেও জিবেল্লিনো (এক ধরনের রত্নখচিত পোশাক) পরে কাউকে দেখা গেলে তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে আইনের মুখোমুখি করা হতো।
পথে মৃতদেহ পড়ে থাকা : ১২৪১ সাল বা তার আগে যদি রাস্তায় পড়ে থাকা কোনো মৃতদেহ কারো চোখে পড়ত, তাহলে তাকে বিস্তারিত বলার জন্য কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যার সঙ্গে তার সম্পৃক্তা নেই তা প্রমাণ করতে না পারতেন ততক্ষণ তাকে জেরা করা হতো। আর যদি তা প্রমাণে ব্যর্থ হতেন তাহলে ওই ব্যক্তিকেই শাস্তি পেতে হতো। এমনকি যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যেত ওই গ্রামের সবাইকে সমস্যায় পড়তে হতো।
ফুটবল খেলা : মধ্যযুগে ফুটবল খেলা এখনকার মত সভ্য বা ভদ্রোচিত ছিলনা। ফুটবল খেলার মাঠ তখনকার সময়ে রণাঙ্গনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ত। এই খেলাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই নানা ক্ষয়ক্ষতি হতো, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটত। ১৩১৪ সালে ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।
মৃত তিমি চুরি : মধ্যযুগে রাজভোগের টেবিলে তিমির মাংসের তৈরি খাবার বিশেষ স্থান পেত। তিমি মাছকে শুধুমাত্র সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের খাবার হিসেবে গণ্য করা হতো। তিমি মানেই মনে করা হতো রাজা-রাণীর খাবার। এজন্য যখন কোনো মৃত তিমি সমুদ্রতীরে ভেসে আসত তা আইনানুসারে রাজার সম্পত্তিতে পরিণত হতো। যাতে সেই মৃত তিমির কোনো অংশ কেউ কেটে নিয়ে যেতে না পারে। তিমির মাথা পেতেন রাজা, আর রাণী পেতেন লেজ।
ক্রিসমাসে মিন্স পাই খাওয়া : মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে ক্রিসমাসের উৎসবের সময় মিন্স পাই (এক ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার) অবৈধ ঘোষণা করা হয়। মূলত ‘পেগান রীতিনীতি’ বাতিল করতেই এই আইন করা হয়েছিল।
ভেড়া অপরিষ্কার রাখা: নিজ পালিত ভেড়ার লোম অপরিষ্কার থাকলে ভেড়ার মালিককে শাস্তি পেতে হতো। ১২০০ সালের দিকে নাথান বেলফস্কির লেখা ‘দ্য বুক অব স্ট্রেঞ্জ অ্যান্ড কিউরিয়াস লিগ্যাল অডিটিস’ বইয়ে পাওয়া যায়, ভেড়া অপরিষ্কার রাখার জন্য একটি পুরো গ্রামের সবাইকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। যদিও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
টেনিস খেলা : মধ্যযুগে ইউরোপের আইন অনুসারে, অভিজাত বংশ ব্যতীত ছোট পেশার যেমন- চাকর বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কোথাও কাজ করছে এমন কোনো তরুণ যদি টেনিস খেলত, তবে সে জুয়াড়ি বা জুয়া খেলাকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করা হতো। এই দোষে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে শাস্তি দেয়া হতো।