শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান

ক্রিকেট মাঠে তারা

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৪:০৪:১৯ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৮৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

তাঁরা কেউই ক্রিকেট খেলেন না। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে মাঠে থাকতে হয় তাঁদের। কেউ মাঠের বাউন্ডারির পাশ ঘেঁষে, কেউবা স্টুডিওতে। দেশ-বিদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে খেলার খবরাখবর পৌঁছে দেন তাঁরা। এ কারণে তাঁরা এখন সবার পরিচিত মুখ। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) সরব ছিলেন ক্রিকেট মাঠের এই মেয়েরা—সামিয়া, মারিয়া, আমব্রিন ও ভারতের শীনা চৌহান। ক্রিকেট খেলা নিয়ে নানা অনুষ্ঠান উপস্থাপন বা মাঠে থেকে সরাসরি খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁরা আমাদের চেনা মানুষে পরিণত হয়েছেন।

রাস্তায় যানজট, পৌনে পাঁচটায় অনুষ্ঠান ধরতে হবে। ধানমন্ডির বাসা থেকে যেতে হবে মিরপুর স্টেডিয়াম। গাড়ি চলে না, চলে না। নেমে পড়তে হয়, শুরু হয় হাঁটা। হাই হিল পরে বেশি দূর যাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে হিল খুলে নিতে হলো হাতে, তারপর গাউনটা আলতো উঁচু করে দৌড়! রাস্তায় লোকজন তাকাচ্ছে, কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ‘মারিয়া না? দৌড়াচ্ছে কেন!’ মাঠে যাওয়ার পর জানতে পেরেছেন, শো আরও এক ঘণ্টা পর, মানে পৌনে ছয়টায়। এ হচ্ছে ক্রিকেট উপস্থাপিকা মারিয়ার কাহিনি। রেডিওতে কথাবন্ধু হয়ে শুরু করেছিলেন কাজ। পরে পরিচিতি পান ‘ক্রিকেটকন্যা’ হিসেবে। শব্দটা তাঁর ভীষণ পছন্দের। শুনতে নাকি ‘বিউটিফুল’ লাগে।
স্টুডিও বা মাঠ থেকে ক্রিকেট নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বেশ কজন নারী। কত মজার ও তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁদের। সেসব গল্প শুনতে ও পাঠককে শোনাতে আমরা একত্র করার চেষ্টা করি তিন ক্রিকেট উপস্থাপিকাকে। বিপিএলের এবারের আসর শেষ হচ্ছে আগামীকাল। সোমবার কোনো খেলা ছিল না। অবসরের এই দিনে আড্ডা দিতে রাজি হন তাঁরা। আগে থেকে দিনক্ষণ ঠিক করে সোমবার বিকেলে হলো দেখা। আড্ডা শুরুর আগে অবশ্য তাঁরা দাঁড়ালেন আলোকচিত্রীর ক্যামেরার সামনে। রাজধানীর বনানী ১১ নম্বর সড়ক সেতুর ওপর অনেকক্ষণ চলল ছবি তোলা। সবার আগে সেখানে হাজির হন মারিয়া নূর। একে একে আসেন আমব্রিন ও সামিয়া আফরীন।
খেলা নেই, আজ তাহলে তো ছুটি? তিনজনের উত্তর, ‘আজ কাজ আরও বেশি। একটানা খেলার জন্য অনেক কাজ জমে গিয়েছিল। নতুন কাজের মিটিং, পোশাক বানাতে দরজিবাড়ি যাওয়া, ফ্যাশন হাউসের ফটোশুট, তারপর পারিবারিক কাজ।’ সুতরাং ছবি তুলতে তুলতে পথেই হলো কথা। পাশ থেকে যাওয়ার সময় গাড়ির কাচ নামিয়ে তাকাচ্ছিলেন যাত্রীরা। কেউবা আড় চোখে দেখছিলেন, হয়তো ভাবছিলেন, মাঠের মেয়েরা আজ সড়কে কেন!
ছয় বছর ধরে খেলাবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় যুক্ত সামিয়া। শুরুটা ছিল ফুটবলবিষয়ক অনুষ্ঠান দিয়ে। উপস্থাপনার ব্যাপারে আলাদা একটা টান কাজ করে তাঁর। বললেন, ‘সেই ভালোবাসার জায়গাটাকে এখন আরও গভীরভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। খুব উপভোগ করি।’ সামিয়া এখন স্টুডিওর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। তবে দর্শকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে মাঠের উপস্থাপনায় বেশি মজা। বাইরের খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলাপনের ব্যাপারটাও অনেক মজার। তাঁর মতে, ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে তাঁদের জানাশোনার গণ্ডি আরও প্রসারিত হচ্ছে। এ কাজে আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে? সামিয়া বললেন, ‘যখন দেখলাম ভারতের মেয়েরা ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছে, তখন। ২০১০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে কাজ করেছিলাম।’ সামিয়া মনে করেন, এই পেশায় আরও অনেক মেয়ে আসবে। নতুনদের গ্রুমিং করাচ্ছেন তিনি।
আমব্রিন এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন বছর খানেক হলো। ২০০৭ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সেরা দশে থাকা আমব্রিনকে পরিচিতি দিয়েছে এ অনুষ্ঠান। ছোটবেলায় ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেললেও তিনি কখনো ভাবেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন। বছর খানেক আগে চ্যানেল নাইন থেকে প্রস্তাব পেয়েই লুফে নিয়েছিলেন। এখন কেমন লাগে জানতে চাইলে আমব্রিন বলেন, ‘আমাকে অনেকে “বিপিএল বেব” বলে ডাকেন। শুনতে বেশ লাগে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল যে আমাকে মাঠে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যখন মনে হয়, পুরো বিশ্ব আমাকে দেখছে, তখন দায়িত্ব অনেকখানি বেড়ে যায়। সব থেকে বেশি ভালো লাগে যখন বিদেশি খেলোয়াড়েরা আমার নাম ধরে ডাকেন।’
বিপিএল উপস্থাপনা করতে গিয়ে অনেক খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমব্রিন। সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের বেলায়। যেদিন তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন, সেদিন মিরাজ বললেন, ‘আপু, আপনি বাংলা পারেন তো?’ আমব্রিন বললেন, ‘না, তোমার সঙ্গে বলতে বলতে প্র্যাকটিস হয়ে যাবে।’ মিরাজও খুব মেধাবী। তিনি বললেন, ‘আমারও তাহলে আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ইংরেজির চর্চা হয়ে যাবে। আর ব্রাভোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাঁকে বলছিলাম নেচে দেখাতে। তিনি নেচেছিলেনও।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী

ক্রিকেট মাঠে তারা

আপডেট সময় : ০৪:০৪:১৯ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউজ ডেস্ক:

তাঁরা কেউই ক্রিকেট খেলেন না। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে মাঠে থাকতে হয় তাঁদের। কেউ মাঠের বাউন্ডারির পাশ ঘেঁষে, কেউবা স্টুডিওতে। দেশ-বিদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে খেলার খবরাখবর পৌঁছে দেন তাঁরা। এ কারণে তাঁরা এখন সবার পরিচিত মুখ। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) সরব ছিলেন ক্রিকেট মাঠের এই মেয়েরা—সামিয়া, মারিয়া, আমব্রিন ও ভারতের শীনা চৌহান। ক্রিকেট খেলা নিয়ে নানা অনুষ্ঠান উপস্থাপন বা মাঠে থেকে সরাসরি খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁরা আমাদের চেনা মানুষে পরিণত হয়েছেন।

রাস্তায় যানজট, পৌনে পাঁচটায় অনুষ্ঠান ধরতে হবে। ধানমন্ডির বাসা থেকে যেতে হবে মিরপুর স্টেডিয়াম। গাড়ি চলে না, চলে না। নেমে পড়তে হয়, শুরু হয় হাঁটা। হাই হিল পরে বেশি দূর যাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে হিল খুলে নিতে হলো হাতে, তারপর গাউনটা আলতো উঁচু করে দৌড়! রাস্তায় লোকজন তাকাচ্ছে, কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ‘মারিয়া না? দৌড়াচ্ছে কেন!’ মাঠে যাওয়ার পর জানতে পেরেছেন, শো আরও এক ঘণ্টা পর, মানে পৌনে ছয়টায়। এ হচ্ছে ক্রিকেট উপস্থাপিকা মারিয়ার কাহিনি। রেডিওতে কথাবন্ধু হয়ে শুরু করেছিলেন কাজ। পরে পরিচিতি পান ‘ক্রিকেটকন্যা’ হিসেবে। শব্দটা তাঁর ভীষণ পছন্দের। শুনতে নাকি ‘বিউটিফুল’ লাগে।
স্টুডিও বা মাঠ থেকে ক্রিকেট নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বেশ কজন নারী। কত মজার ও তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁদের। সেসব গল্প শুনতে ও পাঠককে শোনাতে আমরা একত্র করার চেষ্টা করি তিন ক্রিকেট উপস্থাপিকাকে। বিপিএলের এবারের আসর শেষ হচ্ছে আগামীকাল। সোমবার কোনো খেলা ছিল না। অবসরের এই দিনে আড্ডা দিতে রাজি হন তাঁরা। আগে থেকে দিনক্ষণ ঠিক করে সোমবার বিকেলে হলো দেখা। আড্ডা শুরুর আগে অবশ্য তাঁরা দাঁড়ালেন আলোকচিত্রীর ক্যামেরার সামনে। রাজধানীর বনানী ১১ নম্বর সড়ক সেতুর ওপর অনেকক্ষণ চলল ছবি তোলা। সবার আগে সেখানে হাজির হন মারিয়া নূর। একে একে আসেন আমব্রিন ও সামিয়া আফরীন।
খেলা নেই, আজ তাহলে তো ছুটি? তিনজনের উত্তর, ‘আজ কাজ আরও বেশি। একটানা খেলার জন্য অনেক কাজ জমে গিয়েছিল। নতুন কাজের মিটিং, পোশাক বানাতে দরজিবাড়ি যাওয়া, ফ্যাশন হাউসের ফটোশুট, তারপর পারিবারিক কাজ।’ সুতরাং ছবি তুলতে তুলতে পথেই হলো কথা। পাশ থেকে যাওয়ার সময় গাড়ির কাচ নামিয়ে তাকাচ্ছিলেন যাত্রীরা। কেউবা আড় চোখে দেখছিলেন, হয়তো ভাবছিলেন, মাঠের মেয়েরা আজ সড়কে কেন!
ছয় বছর ধরে খেলাবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় যুক্ত সামিয়া। শুরুটা ছিল ফুটবলবিষয়ক অনুষ্ঠান দিয়ে। উপস্থাপনার ব্যাপারে আলাদা একটা টান কাজ করে তাঁর। বললেন, ‘সেই ভালোবাসার জায়গাটাকে এখন আরও গভীরভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। খুব উপভোগ করি।’ সামিয়া এখন স্টুডিওর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। তবে দর্শকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে মাঠের উপস্থাপনায় বেশি মজা। বাইরের খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলাপনের ব্যাপারটাও অনেক মজার। তাঁর মতে, ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে তাঁদের জানাশোনার গণ্ডি আরও প্রসারিত হচ্ছে। এ কাজে আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে? সামিয়া বললেন, ‘যখন দেখলাম ভারতের মেয়েরা ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছে, তখন। ২০১০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে কাজ করেছিলাম।’ সামিয়া মনে করেন, এই পেশায় আরও অনেক মেয়ে আসবে। নতুনদের গ্রুমিং করাচ্ছেন তিনি।
আমব্রিন এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন বছর খানেক হলো। ২০০৭ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সেরা দশে থাকা আমব্রিনকে পরিচিতি দিয়েছে এ অনুষ্ঠান। ছোটবেলায় ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেললেও তিনি কখনো ভাবেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন। বছর খানেক আগে চ্যানেল নাইন থেকে প্রস্তাব পেয়েই লুফে নিয়েছিলেন। এখন কেমন লাগে জানতে চাইলে আমব্রিন বলেন, ‘আমাকে অনেকে “বিপিএল বেব” বলে ডাকেন। শুনতে বেশ লাগে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল যে আমাকে মাঠে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যখন মনে হয়, পুরো বিশ্ব আমাকে দেখছে, তখন দায়িত্ব অনেকখানি বেড়ে যায়। সব থেকে বেশি ভালো লাগে যখন বিদেশি খেলোয়াড়েরা আমার নাম ধরে ডাকেন।’
বিপিএল উপস্থাপনা করতে গিয়ে অনেক খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমব্রিন। সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের বেলায়। যেদিন তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন, সেদিন মিরাজ বললেন, ‘আপু, আপনি বাংলা পারেন তো?’ আমব্রিন বললেন, ‘না, তোমার সঙ্গে বলতে বলতে প্র্যাকটিস হয়ে যাবে।’ মিরাজও খুব মেধাবী। তিনি বললেন, ‘আমারও তাহলে আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ইংরেজির চর্চা হয়ে যাবে। আর ব্রাভোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাঁকে বলছিলাম নেচে দেখাতে। তিনি নেচেছিলেনও।’