নিউজ ডেস্ক:
শিশু কন্যা সেহানি। মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার আথিক্কা পাড়ায় জন্ম তার।
মাত্র ৪০ দিন আগে জন্ম গ্রহণ করে। জন্মের এক মাসের মধ্যে সেহানিকে দেখতে হয় বিমর্ষ-ভয়ানক চিত্র। নিজ জন্মভূমে অমানুষিক নির্যাতন ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে সেহানিকে পিতা মো. হারুন নিয়ে আসে টেকনাফে। এরই মধ্যে সেহানি আক্রান্ত হয় হাম রোগে। অতঃপর তার ঠিকানা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। গত রবিবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয়।
সেহানির পিতা হারুন বলেন, নিজ দেশে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে টেকনাফে আশ্রয় গ্রহণ করি। কিন্তু এরই মধ্যে ৪০ দিন বয়সী শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর কি হবে আমি জানি না। ভবিষ্যত গন্তব্য অজানা।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফঁড়ি সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যে গুলিবিদ্ধ, বিতাড়িত হওয়া, পালিয়ে আসা এবং নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে সোমবার পর্যন্ত ৮৯ জন চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়, চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে আটজন এবং বর্তমানে ভর্তি আছেন ৭৯ জন। গত ৩১ আগস্ট টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোহিঙ্গা শিশু মো. শোয়েব (১২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শোয়েব মিয়ানমারের মংডু এলাকার এনায়েত উল্লাহর ছেলে। টেকনাফের সোহানী ক্যাম্পে থাকত এই শিশু। তাছাড়া গত ২৬ অগাস্ট ভোরে মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা মুছা নামের একজন মারা যান।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা থেকে আসা রোগীদের আমরা মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং খাবার হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যেসব ওষুধ থাকে না সেগুলো আমরা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে নগদ অর্থে কিনে তাদের দিচ্ছি। তাদের সেবায় কোনো ত্রুটি থাকছে না। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের পুলিশ ফাড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, হাম রোগে আক্রান্ত সেহানি নামের এক শিশুকে বিকাল পাঁচটায় ভর্তি করা হয়। বর্তমানে রোহিঙ্গা থেকে আসা মোট ৭৯ জন চিকিৎসাধীন। সবাইকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মোট ৭৯ জন। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে ১ জন, ৯ নং ওয়ার্ডে ১ জন, ১১ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ১২ নং ওয়ার্ডে ২ জন, ১৪ নং ওয়ার্ডে ১ জন, ১৯ নং ওয়ার্ডে ২ জন, ২৪ নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ২৫ নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ২৬ নং ওয়ার্ডে ৩৮ জন, ২৭ নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ২৮ নং ওয়ার্ডে ৯ এবং ৩৬ নং ওয়ার্ডে ২ জন ভর্তি আছে।
সোমাবার দুপুরে ২৬ নং অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩৮ জন। তবে সবাই হাসপাতালের চিকিৎসা পেয়ে খুশি। মংডু উপজেলার বাঘঘোনা গ্রামের আমান উল্লাহ (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তিনি বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হই। অনেক কষ্টে এখানে এসে ভর্তি হই। এখন ভাল হওয়ার পথে।