শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo রাবিতে ইলা মিত্রকে নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর Logo নোবিপ্রবিতে গবেষণা, বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ Logo রাবি ময়মনসিংহ জেলা সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা Logo “কণিকা”সংগঠনের সচেতনতা সেমিনার ও কুইজ এমইএস কলেজে অনুষ্ঠিত Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী

ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া সন্তানই ২৫ বছর পর খুঁজে নিল মাকে !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৬:২৬:১৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৩ মে ২০১৭
  • ৭৮৪ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

ফুটফুটে এক শিশু। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের আদরে বেড়ে উঠলো সে। তরুণ বয়সে জানতে পারলো তার জীবনের এমন বাস্তবতা যা পাষন্ড মনকেও শীতল করে দেয়। তার জীবনে বাঁকে যে নাটকীয়তা তা সিনেমার গল্প ও নাটককেও হার মানায়।

১৯৮৯ এর ২১ নভেম্বর। ক্যালিফোর্নিয়ার এক পুলিশ অফিসার মাইকেল বুয়েলনা এক অপরাধকাণ্ডের তদন্তে গেছেন কোনো এক স্থানে। হঠাৎ করেই পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে বাচ্চা বিড়ালের ম্যাও ম্যাও এর মতো আওয়াশ শুনতে পেলেন। কী যেন মনে হলো তার, আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলেন। গিয়েই হতভম্ব তিনি! সেখানে পড়ে রয়েছে ফুটফুটে এক শিশু। জন্মের পর তার নাড়ীটাও কাটা হয়নি। হতভাগাকে নিশ্চয়ই ফেলে চলে গেছে তার বাবা কিংবা মা কিংবা অন্য কেউ।

তার দম যায় যায় অবস্থা। কান্নার শক্তিও নেই। কোলে তুলে নিলেন অফিসার। একে কেউ ফেলে রেখে যেতে পারে! বাচ্চাটিকে কাছের এক হাসপাতালে নিলেন বুয়েলনা। জীবন বেঁচে গেলো তার। নাম রাখলেন অ্যাডাম।

অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টারে অ্যাডামের নাম উঠলো এতিমের খাতায়। বুয়েলনা নিজেই ওকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাগজপত্র সময়মতো প্রস্তুত করতে পারলেন না। অরেঞ্জ কাউন্টির এলিজাবেথ বার্টন এবং ড্যানিয়েল দম্পতি অ্যাডামকে তাদের ছেলে হিসাবে নিয়ে গেলেন। তারা অ্যাডামের নাম বদলে রাখলেন রবিন। বার্টন দম্পতি তাকে অন্য শিশুদের মতোই পালতে লাগলেন। বড় হতে থাকলো রবিন। বাবা-মা, সুন্দর একটা বাড়ি রয়েছে তার। কিন্তু সবই অন্যরকম হতে থাকলো যতক্ষণ না রবিন তার জীবনের সেই দুঃস্বপ্নের কাহিনী জানতে পারলেন।

২৪ বছর বয়সের হ্যান্ডসাম এক তরুণ রবিন। জানলেন, নাড়ী ছেঁড়ার পরই তার স্থানর হয়েছিল ময়লার ভাগাড়ে। সেখানে মরেই যেত সে। কিন্তু এক পুলিশ অফিসার পরম আদরে তাকে কোলে তুলে নেন। তার জীবন বাঁচান। সেই মহামানবটিকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেলেন রবিন।

মাইকেল বুয়েলনা তখন অবসর নিয়েছেন। বয়স ৫০ এর মতো। অরেঞ্জ কাউন্টির নিজের বাড়িতেই শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন। তিনিও কখনো ভাবেননি, যেই শিশুটিকে সেই কবে বাঁচিয়েছিলেন তাকে কখনো দেখতে পারবেন। ২৫ বছর বয়সে রবিন হাজির হলেন বুয়েলনার সামনে। সাবেক অফিসার বিস্ময়ভরা চোখে দেখলেই সেই অ্যাডামকে। দুজনের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের বদৌলতেই বুয়েলনাকে একবার হলেও দেখার সৌভাগ্য হলো রবিনে। একসঙ্গে অনেক সময় কাটালেন তারা। প্রাণখুলে কথা বললেন। জীবন বাঁচানোর জন্য বুয়েলনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন রবিন। বার্টন দম্পতিও বুয়েলনাকে পেয়ে দারুণ খুশি। এই মানুষটির জন্যেই তো রবিনকে পেয়েছেন তারা। কিন্তু কাহিনীর এখানেই শেষ নয়।

রবিনের মনে প্রশ্ন রয়েই গেলো। তার আসল বাবা-মা কোথায়? সূত্র ধরে অজানা-অচেনা মানুষকে খুঁজতে তো দক্ষ পুলিশরা। কাজেই এ ক্ষেত্রে রবিনকে সহায়তা করতে পারেন বুয়েলনা। প্রস্তাব দিতে রাজি হলেন সাবেক পুলিশ অফিসার। কয়েক মাস পরই আসলে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রবিন খুঁজে পেলেন তার মাকে, নাম তার সাবরিনা ডিয়াজ। এই নারীই তার জন্মদাত্রী, এই জননীই তার নাড়ী ছেঁড়া ধনকে ডাস্টবিনে ফেলে চলে যান! জানা গেল, সেই সময় সাবরিনার জীবনে অন্ধকার সময় কাটছিল। সেই সময় বেশ কয়েক বছর জেলেও ছিলেন তিনি। হত্যা চেষ্টার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এখন ক্ষমা চাওয়া আর অনুতাপ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। ১৯ বছর বয়সে তিন বছর জেল খেটে ম্যাক্সিকো চলে যান তিনি। কিন্তু এসব ঘটনা রবিনের বেড়ে ওঠা ঠেকাতে পারেনি। ছেলের কথা শুনে তিনি তাকে একনজর দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।

অবশেষে মুখোমুখি হলেন মা আর ছেলে। সাবরিনা দেখলেন অতীত। এই ছেলেটিই সেদিন তার কোলে কাঁদছিল! তিনি তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন! যে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত, সে আজ কত সুন্দর হয়েছে! আজ সেই ছেলেই তার মাকে খুঁজে বের করেছে !

কিন্তু রবিনের কোনো অভিযোগ নেই। সে তার আসল পরিবারকে অন্তত খুঁজে পেয়েই ধন্য। তার পরিবারে আরো ৫টি বোনও রয়েছে।

সিনেমাকেও হার মানানো এই বাস্তব ঘটনার সুখকর সমাপ্তি ঘটলো ঠিকই। কিন্তু আসল সমস্যা এখনো রয়েই গেছে। প্রতিবছর এমন অনেক শিশুর স্থান হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। মায়ের অপরিকল্পিত গর্ভধারণসহ অন্যান্য  আর্থ-সামাজিক কারণে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলেছে। অনেক অ্যাডাম বা রবিনের কোনো খবর কেউ হয়তো পাচ্ছে না।

সূত্র: ইন্টারনেট

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাবিতে ইলা মিত্রকে নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া সন্তানই ২৫ বছর পর খুঁজে নিল মাকে !

আপডেট সময় : ০৬:২৬:১৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৩ মে ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

ফুটফুটে এক শিশু। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের আদরে বেড়ে উঠলো সে। তরুণ বয়সে জানতে পারলো তার জীবনের এমন বাস্তবতা যা পাষন্ড মনকেও শীতল করে দেয়। তার জীবনে বাঁকে যে নাটকীয়তা তা সিনেমার গল্প ও নাটককেও হার মানায়।

১৯৮৯ এর ২১ নভেম্বর। ক্যালিফোর্নিয়ার এক পুলিশ অফিসার মাইকেল বুয়েলনা এক অপরাধকাণ্ডের তদন্তে গেছেন কোনো এক স্থানে। হঠাৎ করেই পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে বাচ্চা বিড়ালের ম্যাও ম্যাও এর মতো আওয়াশ শুনতে পেলেন। কী যেন মনে হলো তার, আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলেন। গিয়েই হতভম্ব তিনি! সেখানে পড়ে রয়েছে ফুটফুটে এক শিশু। জন্মের পর তার নাড়ীটাও কাটা হয়নি। হতভাগাকে নিশ্চয়ই ফেলে চলে গেছে তার বাবা কিংবা মা কিংবা অন্য কেউ।

তার দম যায় যায় অবস্থা। কান্নার শক্তিও নেই। কোলে তুলে নিলেন অফিসার। একে কেউ ফেলে রেখে যেতে পারে! বাচ্চাটিকে কাছের এক হাসপাতালে নিলেন বুয়েলনা। জীবন বেঁচে গেলো তার। নাম রাখলেন অ্যাডাম।

অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টারে অ্যাডামের নাম উঠলো এতিমের খাতায়। বুয়েলনা নিজেই ওকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাগজপত্র সময়মতো প্রস্তুত করতে পারলেন না। অরেঞ্জ কাউন্টির এলিজাবেথ বার্টন এবং ড্যানিয়েল দম্পতি অ্যাডামকে তাদের ছেলে হিসাবে নিয়ে গেলেন। তারা অ্যাডামের নাম বদলে রাখলেন রবিন। বার্টন দম্পতি তাকে অন্য শিশুদের মতোই পালতে লাগলেন। বড় হতে থাকলো রবিন। বাবা-মা, সুন্দর একটা বাড়ি রয়েছে তার। কিন্তু সবই অন্যরকম হতে থাকলো যতক্ষণ না রবিন তার জীবনের সেই দুঃস্বপ্নের কাহিনী জানতে পারলেন।

২৪ বছর বয়সের হ্যান্ডসাম এক তরুণ রবিন। জানলেন, নাড়ী ছেঁড়ার পরই তার স্থানর হয়েছিল ময়লার ভাগাড়ে। সেখানে মরেই যেত সে। কিন্তু এক পুলিশ অফিসার পরম আদরে তাকে কোলে তুলে নেন। তার জীবন বাঁচান। সেই মহামানবটিকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেলেন রবিন।

মাইকেল বুয়েলনা তখন অবসর নিয়েছেন। বয়স ৫০ এর মতো। অরেঞ্জ কাউন্টির নিজের বাড়িতেই শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন। তিনিও কখনো ভাবেননি, যেই শিশুটিকে সেই কবে বাঁচিয়েছিলেন তাকে কখনো দেখতে পারবেন। ২৫ বছর বয়সে রবিন হাজির হলেন বুয়েলনার সামনে। সাবেক অফিসার বিস্ময়ভরা চোখে দেখলেই সেই অ্যাডামকে। দুজনের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের বদৌলতেই বুয়েলনাকে একবার হলেও দেখার সৌভাগ্য হলো রবিনে। একসঙ্গে অনেক সময় কাটালেন তারা। প্রাণখুলে কথা বললেন। জীবন বাঁচানোর জন্য বুয়েলনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন রবিন। বার্টন দম্পতিও বুয়েলনাকে পেয়ে দারুণ খুশি। এই মানুষটির জন্যেই তো রবিনকে পেয়েছেন তারা। কিন্তু কাহিনীর এখানেই শেষ নয়।

রবিনের মনে প্রশ্ন রয়েই গেলো। তার আসল বাবা-মা কোথায়? সূত্র ধরে অজানা-অচেনা মানুষকে খুঁজতে তো দক্ষ পুলিশরা। কাজেই এ ক্ষেত্রে রবিনকে সহায়তা করতে পারেন বুয়েলনা। প্রস্তাব দিতে রাজি হলেন সাবেক পুলিশ অফিসার। কয়েক মাস পরই আসলে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রবিন খুঁজে পেলেন তার মাকে, নাম তার সাবরিনা ডিয়াজ। এই নারীই তার জন্মদাত্রী, এই জননীই তার নাড়ী ছেঁড়া ধনকে ডাস্টবিনে ফেলে চলে যান! জানা গেল, সেই সময় সাবরিনার জীবনে অন্ধকার সময় কাটছিল। সেই সময় বেশ কয়েক বছর জেলেও ছিলেন তিনি। হত্যা চেষ্টার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এখন ক্ষমা চাওয়া আর অনুতাপ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। ১৯ বছর বয়সে তিন বছর জেল খেটে ম্যাক্সিকো চলে যান তিনি। কিন্তু এসব ঘটনা রবিনের বেড়ে ওঠা ঠেকাতে পারেনি। ছেলের কথা শুনে তিনি তাকে একনজর দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।

অবশেষে মুখোমুখি হলেন মা আর ছেলে। সাবরিনা দেখলেন অতীত। এই ছেলেটিই সেদিন তার কোলে কাঁদছিল! তিনি তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন! যে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত, সে আজ কত সুন্দর হয়েছে! আজ সেই ছেলেই তার মাকে খুঁজে বের করেছে !

কিন্তু রবিনের কোনো অভিযোগ নেই। সে তার আসল পরিবারকে অন্তত খুঁজে পেয়েই ধন্য। তার পরিবারে আরো ৫টি বোনও রয়েছে।

সিনেমাকেও হার মানানো এই বাস্তব ঘটনার সুখকর সমাপ্তি ঘটলো ঠিকই। কিন্তু আসল সমস্যা এখনো রয়েই গেছে। প্রতিবছর এমন অনেক শিশুর স্থান হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। মায়ের অপরিকল্পিত গর্ভধারণসহ অন্যান্য  আর্থ-সামাজিক কারণে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলেছে। অনেক অ্যাডাম বা রবিনের কোনো খবর কেউ হয়তো পাচ্ছে না।

সূত্র: ইন্টারনেট