কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উৎসবমুখর পরিবেশে প্রায় সকল বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর বরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এই বিশেষ অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। একাডেমিক ভবন ও করিডোরগুলো ফুল, বেলুন ও রঙিন ব্যানারে সুশোভিত ছিল, যেখানে নবীনরা উদ্দীপনা ও উৎসাহে পরিপূর্ণ হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নবীনদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং কুশল বিনিময় করেছেন। প্রতিটি বিভাগে নবীন পরিচিতি পর্বের পাশাপাশি গান, আবৃত্তি, নাটক ও নৃত্যের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়, যা নবীনদের মনোরঞ্জনের পাশাপাশি তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার বোধ জাগিয়ে তোলে। অনেকে দিনটি প্রীতিভোজের মাধ্যমে উদযাপন করে আনন্দময় মুহূর্তগুলোর স্মৃতি সংরক্ষণ করেন।
ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী পায়েল রায় বলেন, প্রথমত আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। স্বাভাবিকভাবেই একটু নার্ভাস লাগছিল, তবে তার সাথে ছিল অদম্য এক্সাইটমেন্ট। নতুন নতুন অনেক বন্ধু, সব অপরিচিত অথচ হাসিখুশি মুখ—দেখে মনটা ভরে গেল। সবাই মিলে একসাথে থাকার এই অনুভূতি সত্যিই দারুণ। আমাদের স্যাররা শুরু থেকেই খুব আন্তরিক ছিলেন, আর সিনিয়র ভাই-আপুরাও যেন আপনজনের মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা প্রথমেই ভালোবাসা ও আন্তরিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন—এটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশ্বাস করি, বড় ভাই-আপুরা ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থেকে সাহায্য করবেন। দিনটা সত্যিই অনেক সুন্দর কেটেছে, আর আমি আশাবাদী যে সামনের দিনগুলো আরও সুন্দর হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী আশা জানান, আজকের দিনটি তার জন্য বিশেষ স্মরণীয়। তিনি বলেন, “আজ আমাদের ওরিয়েন্টেশন ছিল। সেই সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ আমার প্রথম দিন। বিভাগের সিনিয়র ভাই-আপু ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। দিনটি বেশ উপভোগ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও অনেক সুন্দর। আশা করছি, বাকি দিনগুলোও ভালোভাবে কাটবে।”
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি নবীনদের স্বপ্নপূরণের সহযাত্রী হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের চোখে স্বপ্ন আর সম্ভাবনা—আমরা শিক্ষক, সিনিয়র ও সহপাঠীরা সবাই সেই স্বপ্ন পূরণের সারথি হতে চাই। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ শুধু একটি বিভাগ নয়, এটি সমাজে সমতা, ন্যায়বোধ ও মানবতার চর্চার এক গবেষণাগার। এই বিভাগ থেকে তোমরা সমাজ বদলের অকুতোভয় সৈনিক হয়ে উঠবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতে প্রতিটি বিভাগে নবীনবরণ আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হলেও, এভাবে একযোগে একই দিনে সকল বিভাগের নবীনদের বরণ করার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম। শিক্ষার্থীদের মতে, এই সম্মিলিত আয়োজন শুধু আনন্দ ও উৎসবের আমেজই বাড়ায়নি, বরং বিভিন্ন বিভাগের নবীনদের মধ্যে বন্ধুত্ব, পরিচয় ও ঐক্যের এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও মনে করছেন, এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসের ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।