বুধবার (২৬ জুন) খাগড়াছড়িতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যার অন্যতম এই দুই আসামি প্রায় ২৩ দিন পাহাড়ি এলাকার একটি কালী মন্দিরে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে তারা নিজেদের হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিতেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, মন্দিরে আশ্রয় পেতে তারা হিন্দু নাম ধারণ করেন। স্থানীয়দের কাছে তারা বলতেন কালী মাতার কাছে থাকতে তাদের ভালো লাগে। তাই তারা মন্দির ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
এ সময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, সীতাকুণ্ডের একটি পাহাড়ের নিচে ‘পাতাল কালী মন্দির’ রয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে দুজনেই কালী মন্দিরে থাকতেন। তারা রাতেও সেখানেই থাকতেন। বলতেন, আমরা মাকে বেশি ভালোবাসি, তাই মায়ের পাশেই থাকতে চাই।
হারুন বলেন, মোস্তাফিজ এবং ফয়সাল মিশন সম্পন্ন করে ১৯ তারিখ দেশে ফিরে আসেন। তারপর শাহিনের সঙ্গে কথা বলেন। শাহিন তাদের খরচের জন্য ৩০ হাজার টাকা দেন। এই টাকা নিয়ে তারা এখানে চলে আসেন। কেননা আগে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করায় জায়গাগুলো তাদের চেনা ছিল। ফলে তারা পাতাল কালী মন্দিরে এসে থাকতেন এবং ঘুমাতেন।
এমপি আনার হত্যায় গ্রেফতারদের ভূমিকা সম্পর্কে হারুন বলেন, এমপি আনারকে ক্লোরোফর্ম লাগিয়ে অজ্ঞান করেছিলেন ফয়সাল গাজী। পরে আনারকে চেয়ারে বেঁধে বিবস্ত্র করেন মোস্তাফিজ। পরে আনারের মৃত্যু নিশ্চিত করে শিমুল ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা। আজকে গ্রেফতারের পরপরই মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এছাড়া গ্রেফতার আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
এর আগে বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে খাগড়াছড়িতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এমপি আনার হত্যার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে— গ্রেফতার দুই আসামি বর্তমানে ডিবির হেফাজতে রয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, গ্রেফতার দুই আসামির কাছে আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশকিছু তথ্য রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে সেসব তথ্য পাওয়া যাবে।তথ্যমতে— সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম দুই পলাতক আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ে অবস্থান করছেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ধরতে ডিবির টিম সেখানে হাজির হয়ে অভিযান চালায়। মোস্তাফিজ ও ফয়সালের কাছে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন— সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল সংসদ সদস্য খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। এই দুজনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ডিবি। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়ার বাড়িও একই এলাকায়।
সূত্র বলছে, আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন— এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী ও মো. জামাল হোসেন।
অপর দিকে এমপি আনার অপহরণ মামলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন— আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। এছাড়া পরে গ্রেফতার হন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।
এছাড়া কলকাতার সিআইডির কাছে গ্রেফতার রয়েছেন দুজন। তারা হলেন কসাই জিহাদ হাওলাদার ও মো. সিয়াম হোসেন। সিয়ামকে গ্রেফতার করেছিল নেপাল। পরবর্তীতে কলকাতা পুলিশের কাছে সিয়ামকে হস্তান্তর করে নেপাল।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে— নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এরপরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।