শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫

গ্যাসের সংকটে শিল্প উৎপাদনে ধস, বেড়েছে লোডশেডিং

নীলকন্ঠ ডেক্সঃ

স্থানীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধি না করার সরাসরি কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে দেশ। পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। বিদ্যুত্-জ্বালানিতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ব্যক্তিক খরচ বাড়লেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। বরং জ্বালানিসংকটে শিল্পের চাকা বন্ধ বা ধীর হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে আবাসিক ও পরিবহন খাতের গ্রাহকরা অন্তহীন ভোগান্তি এবং দিশেহারা পরিস্থিতিতে রয়েছেন।

গত দেড় যুগে সাধারণত শীতকালে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি হতো। মূলত শীতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং সঞ্চালন ও বিতরণে অপচয় বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হতো। তবে গত তিন বছরে এ পরিস্থিতি বদলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কমিয়ে বা নিয়ন্ত্রিত উপায়ে আমদানি করছে সরকার। স্থানীয় মজুত কমতে থাকায় গ্যাস উৎপাদনও বিদ্যমান পরিমাণের চেয়ে বাড়ানোর সুযোগ নেই। এমন অবস্থায় আর্থিক কারণে কিংবা কারিগরি কারণে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এলএনজি আমদানি কমে গেলে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস-সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। গত এক মাস ধরে দেশে গ্যাস ঘাটতি আরো তীব্র হয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুইটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি বন্ধ থাকার কারণে। আগামী আরো প্রায় ১০ দিন গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি প্রায় একই থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একটি সূত্র।

পেট্রোবাংলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বঙ্গোপসাগরে থাকা একটি এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামিটের ঐ এফএসআরইউটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিংগাপুরে রয়েছে। সেটি আজ রবিবার সেখান থেকে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা রয়েছে। আগামী ১২-১৩ জুলাই এটি দেশে পৌঁছাবে। দেশে পৌঁছানোর পর পরিচালনে আসতে আরো তিন দিন লাগবে। ফলে ১৬ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে এটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে পারে। সব মিলিয়ে চলতি জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে এটি সরবরাহ শুরু করলে গ্রাহক পর্যায়ে সংকট দূর না হলেও ঘাটতি কমবে।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪১০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ করা হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। অর্থাত্ চাহিদার এক তৃতীয়াংশের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্যাসের সংকটের কারণে শিল্প কারখানার উৎপাদনে ধস নেমেছে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুত্ উত্পাদন কমেছে। বেড়েছে লোডশেডিং। সিএনজি রিফিলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস না পেয়ে কিংবা কম চাপের কারণে কাক্সিক্ষত পরিমাণের চেয়ে কম গ্যাস নিয়ে ফিরছে অনেক সিএনজিচালিত গাড়ি। এই গ্যাস পাওয়ার জন্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনগুলোর সামনে সারিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।

গ্যাস-সংকটের কারণে কমবেশি ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গত কয়েক দিন ধরে সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ থাকছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলো এ সরবরাহ ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের আশেপাশে থাকছে। কম গ্যাস সরবরাহের  প্রভাব পড়েছে বিদ্যুত্ উত্পাদনে।  রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলায় কমবেশি লোডশেডিংয়ের তথ্য জানিয়েছেন ইত্তেফাকের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।  এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী ১৫-১৬ জুলাইর দিকে দুইটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করা যাবে। আর তিন-চার দিনের মধ্যে বিদ্যুত্ সরবরাহ পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো হবে।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular