নিউজ ডেস্ক:
কাজের চাপ অথবা আলস্য, যে কোনও কারণেই হোক আমরা এখন অনেকেই ব্যায়াম বা জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করার সময় পাই না। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে আমাদের ওজনের ওপর।
দিন দিন শরীরের ওজন বেড়েই চলেছে। আর অবস্থা যখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন এর থেকে নিস্তার পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অনেকেই এক্ষেত্রে বাজারচলতি ওজন কমানোর ওষুধ, বেল্ট, খাবার ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। যদিও এগুলো আদৌ কার্যকর কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তো থেকেই যায়। এছাড়াও খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে বা প্রায় উপোস করে অনেকেই ওজন কমানোর চেষ্টা করেন। তাতেও যে চোখে পড়ার মতো ফল লাভ হয়, তা কিন্তু নয়।
আচ্ছা যদি কফি পান করে ওজন কমানো যায়? কি ভাবছেন? ক্যাফেইনে ভরা কফি সত্যিই ওজন কমাতে পারে কিনা? অবশ্যই পারে। আর সেটাই ২০১২ সালে প্রমাণ করেছেন ডা. ওজ। তার মতে, কফির মধ্যে যে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে, তা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়তা করে। যদিও এই কফি বাজারচলতি বাদামি কফি নয়। ওজন কমাতে ব্যবহার করে কাঁচা কফি বিনস বা দানার গুঁড়ো। কিভাবে কফির সাহায্যে ওজন কমাবেন তা জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে হবে।
সবুজ কফিদানার আর কি কি গুণ রয়েছে?
আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেটের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে সবুজ কফিদানার মধ্যে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকায় শর্করা রক্তের সঙ্গে মিশতে বাধা পায়। এর ফলে ডায়াবেটিসের সমস্যাসহ ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দূর হয়। সবুজ কফিদানা রক্ত ধমনীর কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা আমাদের শরীর চালনাতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই তো যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা প্রতিদিন ১৪০-৭২০ গ্রাম সবুজ কফিদানার গুঁড়ো খেলে উপকার পাবেন।
সবুজ বা কাঁচা কফি দানা ঠিক কি?
কফির কাঁচা দানাগুলোকেই গ্রিন কফি বিনস বলা হয়। আমরা বাজারে দোকানে যে কফি দানা দেখি, সেগুলো এই সবুজ দানা, বাদামি করে শুকনো খোলায় ভেজে বানানো হয়। কফির মধ্যে বিশেষ প্রকারের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং কিছু ওষুধি গুণ মজুত থাকে। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল ক্যাফেইন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। এই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। যদিও কফিকে বাজারজাত করার পদ্ধতিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণেই তো কেউ যদি ওজন কমাতে বাদামি কফি পান করেন, সে কোনওদিনই নিজের ওজন কমাতে পারবেন না।
কিভাবে সবুজ কফি বীজ কাজ করে থাকে?
সবুজ কফি দানা গুঁড়ো করলে তার মধ্যে সামান্য পরিমাণে ক্যাফেইন উপস্থিত থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে ক্যাফেইন, উৎসেচকের কাজ ৩-১১% বাড়িয়ে দেয়। যদিও ক্যাফেইন নয়, এই কাজটি করে থাকে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। সবুজ কফি দানা রক্তচাপের সম্ভাবনা কমায় এবং ইন্সুলিনের কাজ বৃদ্ধি করে। আর এর মূল কারণ হল সবুজ কফি দানায় কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। অন্যদিকে, ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড দেহের ওজন কমানো ছাড়াও খাদ্য থেকে যে অতিরিক্ত ফ্যাট আসে, তা আটকাতে সাহায্য করে। লিভার থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট দূর করে। এছাড়াও ফ্যাট ক্ষয়কারি হরমোন, অ্যাডিপোনেকটিনের কাজ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
মানুষের জন্য কতটা উপকারী?
সবুজ কফি দানার গুণাগুণ নির্ধারণে মানুষের ওপরও সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালাতে ৩০ জন অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়। যাদের ওপর ১২ সপ্তাহ এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। যাদের একদলকে রেগুলার বা বাজারচলতি কফি পান করতে দেওয়া হয় এবং অন্যদের রেগুলার কফির মধ্যে সবুজ কফিদানার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করানো হয়। তবে, এদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। এরপর ধীরে ধীরে শূন্য থেকে বারো সপ্তাহের একটি গ্রাফ তৈরি করা হয়। গ্রাফে দেখা যায় যারা রেগুলার কফির সঙ্গে সবুজ কফিদানার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করেছিলেন, তারা ৫.৪ কেজি ওজন কমাতে পেরেছেন।
কিভাবে ব্যবহার করবেন এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সবুজ কফি দানার অনেক রকম গুণাগুণ থাকলেও অনেকেই মাথা ধরা এবং মূত্রাশয়ে সংক্রমণের মতো কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। যদিও, এই ধরণের সমস্যা যে সবুজ কফির থেকেই হচ্ছে এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া, সবুজ কফির মধ্যে ক্যাফেইন থাকায় অনেকেই দুশ্চিন্তা, বুক ধড়পড় করার মতো সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
মূলত, একদিনে অনেকখানি কফি খেলে এরকম কিছু সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই আপনি যদি ক্যাফেইন হজম করতে না পারেন, তাহলে সবুজ কফি পান করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারণ সবুজ চা অনেক সময় আমাশয়ের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। আপনার যদি কফি খেলে কোনো রকম অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এখনই বর্জন করুন। সবুজ কফি গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী নারীর জন্য একদমই ভালো নয়। এমনকি, শিশুদেরও সবুজ কফি একদমই পান করা উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, সবুজ কফি কতটা পরিমাণে পান করতে হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ কোথাও উল্লেখ করা নেই। যদিও, আগেই বলা হয়েছে যে, দিনে ১২০-৩০০ গ্রাম ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাওয়াই যায়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ২৪০-৩০০ গ্রাম সবুজ কফি পান করলে ১২০-৩০০ গ্রাম ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। তাই সবথেকে ভালো হয়, সবুজ কফির বোতলের গায়ে উল্লেখিত নির্দেশাবলী মেনে চললে। আর চেষ্টা করুন খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এই সবুজ কফি পান করতে।
সূত্র: বোল্ডস্কাই