নিউজ ডেস্ক:
আমেরিকায় আর মুসলমান চাই না, আমেরিকা মুসলমানদের দেশ নয় এমন বিভিন্ন স্লোগান ধ্বনিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান সিটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে সর্ববৃহৎ মুসলিম বিদ্বেষী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত এ্যাক্ট ফর আমেরিকা’র ডাকে ১০ জুন শনিবার এই কর্মসূচি পালিত হয়। তবে যেখানেই এ কর্মসূচি হয়েছে সেখানেই মুসলমানদের সমর্থনে পাল্টা সমাবেশ হয় এবং পাল্টা সমাবেশের উপস্থিতি ছিল দ্বিগুণেরও বেশী।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলোও মুসলিম বিদ্বেষমূলক কর্মসূচির নাজুক অবস্থার বিবরণ দিয়েছে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রতিটি ধর্মের লোকজনের অধিকার সংহত করার নিশ্চয়তা দিলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মদদে এমন হিংসাত্মক কর্মসূচি’ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার জের হিসেবে মিনেসোটা এবং সিয়াটলে পরস্পর বিরোধী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ দুটি স্থান থেকে অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতারের সংবাদ পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্ক সিটির মুসলিম-বিরোধী কর্মসূচিতে ১০০ জনের মতো ছিলেন। পক্ষান্তরে এই কর্মসূচির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত র্যালিতে ছিলেন কমপক্ষে দুইশত জন। মুসলমানদের পক্ষাবলম্বন করে জুইশরাও ছিলেন সরব।
৫ লাখ ২৫ হাজার সদস্যের সংস্থা ‘এ্যাক্ট ফর আমেরিকা’ এর উদ্যোগে শিকাগো সিটির কর্মসূচিতেও একই চিত্র দেখা গেছে। অর্থাৎ কর্মসূচির বিরোধিতাকারির সংখ্যাই ছিল দ্বিগুন।
আয়োজকরা এটিকে শরিয়া আইন বিরোধী কর্মসূচি হিসেবে দাবি করলেও মূলত মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসা বিস্তারের বাহন হিসেবে পরিচিত করতে চাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থাসমূহের উপর পর্যবেক্ষণকারি নিরপেক্ষ সংস্থা ‘সাউদার্ন পভার্টি ল’ সেন্টার’ এ্যাক্ট ফর আমেরিকা’কে ধর্মীয় বিদ্বেষী সংগঠন হিসেবেই তালিকাভুক্ত করেছে। এটির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন লেবাননের খিষ্টান ইমিগ্র্যান্ট ব্রিজিট গ্যাব্রিয়েল। ব্রিজিট বলেছেন, ‘যারা নিয়মিত মসজিদে যান, তারা সকলেই উগ্রপন্থি। সেজন্যেই প্রতিটি মুসলমান হচ্ছেন বিশ্বের সভ্য মানুষদের দুশমন, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের জন্যে তারা মারাত্মক হুমকি। ’
পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচিতে ক্ষোভ প্রকাশ এবং মুসলমানদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যান। এর অন্যতম হলেন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, কংগ্রেসওম্যান প্রমিলা জয়পাল, কংগ্রেসম্যান জন কনিয়ার্স, কংগ্রেসওম্যান শীলা জ্যাকসন লী, কংগ্রেসওম্যান রুবেন গেলেগো প্রমুখ। তারা ক্যাপিটল হিলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এমন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্স থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রেস মেং পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মুসলিম বিদ্বেষমূলক অপতৎপরতায় গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন এবং আমেরিকান সমাজেও এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে, তেমনি সময়ে এ ধরনের কর্মসূচিকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে এবং মুসলিম-বিদ্বেষমূলক মনোভাবের বিস্তার ঘটাবে। তাই আমি দেশপ্রেমিক প্রতিটি আমেরিকানের প্রতি উদাত্ত আহবান রাখছি, এ ধরনের যে কোন কর্মসূচিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখানের জন্যে। ’
গ্রেস মেং উল্লেখ করেছেন, ‘স্মরণ করা যেতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন মুসলিম নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশ জারি করেন, তখনই আমি কংগ্রেসে একটি বিল উঠিয়েছি। ঐ বিলে প্রস্তাব করেছি ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্যে কোন ধরনের তহবিল না প্রদানের আলোকে। আমার ঐ বিলে এখন পর্যন্ত ৫০ জন কংগ্রেসম্যান সমর্থন দিয়েছেন। গ্রেস মেং বলেছেন, ‘আমাদের এ দেশে বিদ্বেষের কোন স্থান নেই, আমরা এমন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েই যাবো।