নিউজ ডেস্ক:
৮৬ বছর বয়সী সানোয়ার আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবীণ ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের একজন। সুন্দর ও নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় ২৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মৌলভীবাজারের সন্তান সানোয়ার। শত চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত গ্রিনকার্ড পাননি। তাই বাধ্য হয়েই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দিনাতিপাত করছেন। প্রতি মুহূর্তেই তাড়া করে ফিরছে গ্রেফতার আর আমেরিকা থেকে বহিস্কার হওয়ার আতঙ্ক।
পেটের দায়ে নিউইয়র্কের রাস্তায় অনেকের দান-দক্ষিণায় সাজিয়েছিলেন পান-সুপারি আর ঝাল-মুড়ির দোকান। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ৭৩ স্ট্রিটে পড়ন্ত বয়সী সানোয়ারের এ দোকান সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে। সহানুভূতিতে অনেকে ঝাল-মুড়ি ক্রয়ও করেন। ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় মধ্য বয়সেও যেমন প্রত্যাশিত চাকরি পাননি, এই পড়ন্ত বয়সে সে সুযোগ আর নেই। তবুও হাল ছাড়েননি সানোয়ার।
দেশে রেখে আসা স্ত্রী-সন্তানের কথা ভেবে খরতাপ আর হাড় কাঁপানো শীতেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝাল-মুড়ি-পান-সুপারি বিক্রি করেন। কিন্তু এটিও কারও কারও সহ্য হচ্ছে না। ওই রাস্তার পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ প্লাজার কোনো ব্যবসায়ী ফোন করেন পুলিশকে। সিটির স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তাসহ পুলিশ এসে কয়েক দফা জরিমানার টিকিট দেয়। তিন দফায় জরিমানা টিকেট আসায় সানোয়ার স্থানীয় আদালতকে জানান। আদালত তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাতে নিউইয়র্কের পুলিশ থেমে থাকেনি। কয়েক মাস আগে সানোয়ারের সেই ‘স্বপ্নের ঝাল-মুড়ি’র দোকান জব্দ করে নিয়ে যায়।
সানোয়ারের এমন অসহায় অবস্থায় মাঠে নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দেশিজ রাইজিং আপ মুভিং (ড্রাম)। তারা সিটি স্বাস্থ্য দফতরে গেলে জানানো হয় যে, নিকটস্থ প্রেসিঙ্কটে নেয়া হয়েছে দোকানটি। প্রেসিঙ্কটে গেলে পুলিশ জানায় যে, সেটি গার্বেজ করা হয়েছে। অথচ ওই দোকানটিই ছিল সানোয়ারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। অবশেষে ড্রামের সহায়তায় সানোয়ার মামলা করেছেন নিউইয়র্ক সিটির বিরুদ্ধে। তার সাথে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণের এ মামলায় সামিল হবেন আরও অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। কারণ, নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় তাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা সভ্যতার পরিপন্থি এবং নাগরিক অধিকারের লংঘন।
সোমবার জ্যাকসন হাইটসে দেশিজ রাইজিং আপ মুভিংয়ের কার্যালয়ে সানোয়ার বলেন, এর আগে আরও তিনবার আমাকে হাজার ডলারের টিকিট দেয়। প্রথমবারের টিকিটের জরিমানা কয়েক কিস্তিতে পরিশোধের পরই আরেকটি দেয়। সেটিও কিস্তিতে পরিশোধ করছিলাম। তেমনি অবস্থায় আরেকটি টিকিট দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এ দুটি টিকিট হাতে দেখে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমি এমন নিষ্ঠুর আচরণের বিচার চাই।
আরবান জাস্টিস সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাটর্নি ম্যাথিউ সারপো বলেন, জীবিকার জন্যে ভ্রাম্যমাণ রাস্তায় অস্থায়ী দোকান সাজিয়েছেন। এটি তাদের মানবিক অধিকার। এজন্যে স্বাস্থ্য বিভাগ এমন বর্বর আচরণ করতে পারে না, যা পেটে লাথি দেয়ার মতো হয়। আমরা এমন আচরণ বন্ধের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দাবিতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ৭৩ স্ট্রিট বাংলাদেশিদের দখলে। এই স্ট্রিটেরই বাংলাদেশ প্লাজার সামনে ‘ঝাল-মুড়ি-পান-সুপারি’র দোকান বসিয়েছেন সানোয়ার। কে বা কারা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার মতলবে মাঝে মধ্যেই পুলিশ ডেকে থাকেন। সম্প্রতি দেশিজ রাইজিং আপ মুভিংয়ের সহায়তায় সানোয়ার আবার দোকান সাজিয়েছেন।
সানোয়ার বলেন, দেশে স্ত্রী-সন্তানদের টাকা পাঠাতে পারছি না কয়েক মাস যাবৎ। অর্থাভাবে ছেলেটি লেখাপড়া ঠিক রাখতে পারছে না। তাদের জন্য ‘ঝাল-মুড়ি-পান-সুপারি’র এই দোকান চালিয়ে যেতে আমি সকলের সহায়তা চাই।