শরতের নীল আকাশ, সাদা মেঘ আর কাশফুলের মৌসুমকে বরণ করে নিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য আয়োজন করল ভিন্নধর্মী মেলা— “শরৎ সম্ভাষণ”। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র ডায়না চত্বর যেন পরিণত হয়েছিল আনন্দ, স্মৃতি আর ঐতিহ্যের মিলনমেলায়।
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে ওঠা চত্বরে ছিল নানা আয়োজন। সবার চোখে সবচেয়ে বেশি টেনেছিল বায়োস্কোপ—যা মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ মেলার দিনগুলিকে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে প্রায় বিস্মৃত এই বিনোদন মাধ্যমটিই হয়ে ওঠে মেলার অন্যতম আকর্ষণ। শুধু তাই নয়, মাটির হাড়ি-পাতিল, আসবাবপত্র, আর শিক্ষার্থীদের জন্য আনা দোলনা যেন সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল শৈশবের সেই অমলিন দিনে।
মেলায় অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর ভাষায়, এ ধরনের আয়োজন শুধু বিনোদন নয়, বরং ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন। হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ সংস্কৃতি ও প্রকৃতির প্রতি টানকে নতুনভাবে উপলব্ধি করিয়ে দেয় এ ধরনের উদ্যোগ।
অভয়ারণ্যের সহ-অর্থ সম্পাদক সাদিয়া সাবরিনা বলেন, “আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে মেলাকে সাজিয়েছি। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো ব্যবহার করে নতুনভাবে সাজসজ্জা করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই—অপচয় নয়, পুনঃব্যবহারই পারে পরিবেশকে রক্ষা করতে।”
তিনি আরও জানান, খালি পাখির খাঁচা প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা বোঝাতে চেয়েছেন, “পাখি আকাশের মুক্ত প্রাণী, তাকে বন্দি রাখা মানেই প্রকৃতিকেই বদ্ধ রাখা।”
অভয়ারণ্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, “আজকের মেলার মাধ্যমে আমরা প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমাদের লক্ষ্য সবসময়ই থাকে প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিশ্রণ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা। এই বায়োস্কোপের মাধ্যমে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি বাংলা সাহিত্যের পালাবদল—যেখানে হিন্দুয়ানী কবি ও মুসলমানী কবিদের মধ্যে এক সুন্দর সাংস্কৃতিক মিশ্রণ রয়েছে। পাশাপাশি এখানে ফুটে উঠেছে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার চেতনা।
আজকের বায়োস্কোপে আমরা দুটি বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছি। প্রথমত, আমাদের ঐতিহ্য—যা আমাদের পরিচয়কে দৃশ্যমান করে। দ্বিতীয়ত, সাহিত্যের সঙ্গে স্বাধীনতার সম্পর্ক—যা মনে করিয়ে দেয়, আমরা যদি আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও কল্পকাহিনীর চর্চা করি, তবে তবেই প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারব।”