শিরোনাম :
Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। Logo ভাতগ্রামে ফ্রী রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হল Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। Logo বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের বিরত রাখা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo কয়রায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ৯ বছরের স্কুলছাত্রী আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু Logo জাতীয় পতাকা ও সংগীত অবমাননাকারি সুন্দরগঞ্জের মিরাজ আটক : মামলা দায়ের

লড়াই করে আদায় করতে হয়েছিল পশু কোরবানির অধিকার

বিশ্বব্যাপী আজ শনিবার (৭ জুন) পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মহাসমারোহে চলছে পশু কোরবানি। যদিও দীর্ঘ ৮০ বছর আগেও বাংলার মুসলিমদের এ অধিকার ছিল না।

কোরবানির প্রশ্ন এলেই নানা ঘটনায় তটস্থ থাকতে হতো তাদের। ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ মুসলমান ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন।

আজ যেভাবে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির আনন্দে মাতোয়ারা সেই অধিকার তাদের বাবা-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ‘বাংলাদেশের উৎসব’ নামক বইয়ে এমনটাই লিখেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানি দিয়ে ফেলি। আশি-একশো দূরে থাকুক পঞ্চাশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়তো অবাক হবে যে, এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে এবং কোরবানি বিশেষ করে গরু কোরবানি দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।’

এই পরিস্থিতি কেন হয়েছিল সে প্রসঙ্গে অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন, তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করা শুরু করলেন। অন্যদিকে গরু বেশি প্রচলিত না থাকার আরেকটি কারণ ছিল আর্থিক দৈন্য। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক দৈন্য এতটাই প্রবল ছিল যে, একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া তাদের পক্ষে খুব দুরূহ ছিল।’

এমনকি উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না। মুঘল আমলে এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। যে কারণে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়েও গরু কোরবানিতে নানা বিধি-নিষেধের বিষয়গুলো চলে আসে।

অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজীর মতে, মুঘল আমলে আকবর যখন সম্রাট হলেন। দীনে এলাহী যখন প্রচলিত হলো ওই সময়ে ঐতিহাসিক আবুল ফজলসহ অনেকে পরামর্শ দিলেন গরুটা যেন জবেহ করা না হয়। কারণ ওই সময়ে এ অঞ্চলে ৯৫ শতাংশই হিন্দুদের বসবাস ছিল। সঙ্গত কারণে এটা জবাই করা মানে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া। কোরবানি করলে তখন সাধারণ হিন্দুদের মনে ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিরূপ চিন্তা আসবে।

অধ্যাপক মামুনের মতে, ১৯৪০-এর দিকে গরু কোরবানিটা বেশি শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের পাট চাষিদের হাতে কিছু টাকা আসতে শুরু করল। তখন কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্ট্যাটাস দেখানোর জন্যও গরু কোরবানি দেওয়া শুরু হলো।

বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর গরু কোরবানির ওপর বিধিনিষেধ বা অজানা ভয় দূর হয়। এরপর দিন দিন গরু কোরবানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তখন কোরবানির আমেজে মাততে থাকেন মুসলমানরা। তারা প্রকাশ্যে গরু কিনে হৈ-হুল্লোড় করে জবাই দিতে শুরু করেন।

আর্থিক দৈন্যের কারণে তখন ঢাকায় অধিকাংশ গরু কোরবানি হতো। গ্রামের বিত্তশালী মাতবর ঘরানার লোকজন গরু কোরবানি করতে পারতেন। অন্যরা ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন। দেশ স্বাধীনের পর মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে।

এ ছাড়া ভাগে গরু কোরবানি দেওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়। ধীরে ধীরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু কেনার হার বাড়ে। সে সঙ্গে নতুন এলাকায় বসতে থাকে পশুর হাট। এক পর্যায়ে গরু কোরবানি ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। পশুর হাটের নাম লোকমুখে হয়ে যায় ‘গরুর হাট’।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

লড়াই করে আদায় করতে হয়েছিল পশু কোরবানির অধিকার

আপডেট সময় : ০২:০৭:৪৭ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

বিশ্বব্যাপী আজ শনিবার (৭ জুন) পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মহাসমারোহে চলছে পশু কোরবানি। যদিও দীর্ঘ ৮০ বছর আগেও বাংলার মুসলিমদের এ অধিকার ছিল না।

কোরবানির প্রশ্ন এলেই নানা ঘটনায় তটস্থ থাকতে হতো তাদের। ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ মুসলমান ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন।

আজ যেভাবে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির আনন্দে মাতোয়ারা সেই অধিকার তাদের বাবা-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ‘বাংলাদেশের উৎসব’ নামক বইয়ে এমনটাই লিখেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানি দিয়ে ফেলি। আশি-একশো দূরে থাকুক পঞ্চাশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়তো অবাক হবে যে, এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে এবং কোরবানি বিশেষ করে গরু কোরবানি দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।’

এই পরিস্থিতি কেন হয়েছিল সে প্রসঙ্গে অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন, তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করা শুরু করলেন। অন্যদিকে গরু বেশি প্রচলিত না থাকার আরেকটি কারণ ছিল আর্থিক দৈন্য। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক দৈন্য এতটাই প্রবল ছিল যে, একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া তাদের পক্ষে খুব দুরূহ ছিল।’

এমনকি উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না। মুঘল আমলে এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। যে কারণে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়েও গরু কোরবানিতে নানা বিধি-নিষেধের বিষয়গুলো চলে আসে।

অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজীর মতে, মুঘল আমলে আকবর যখন সম্রাট হলেন। দীনে এলাহী যখন প্রচলিত হলো ওই সময়ে ঐতিহাসিক আবুল ফজলসহ অনেকে পরামর্শ দিলেন গরুটা যেন জবেহ করা না হয়। কারণ ওই সময়ে এ অঞ্চলে ৯৫ শতাংশই হিন্দুদের বসবাস ছিল। সঙ্গত কারণে এটা জবাই করা মানে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া। কোরবানি করলে তখন সাধারণ হিন্দুদের মনে ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিরূপ চিন্তা আসবে।

অধ্যাপক মামুনের মতে, ১৯৪০-এর দিকে গরু কোরবানিটা বেশি শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের পাট চাষিদের হাতে কিছু টাকা আসতে শুরু করল। তখন কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্ট্যাটাস দেখানোর জন্যও গরু কোরবানি দেওয়া শুরু হলো।

বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর গরু কোরবানির ওপর বিধিনিষেধ বা অজানা ভয় দূর হয়। এরপর দিন দিন গরু কোরবানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তখন কোরবানির আমেজে মাততে থাকেন মুসলমানরা। তারা প্রকাশ্যে গরু কিনে হৈ-হুল্লোড় করে জবাই দিতে শুরু করেন।

আর্থিক দৈন্যের কারণে তখন ঢাকায় অধিকাংশ গরু কোরবানি হতো। গ্রামের বিত্তশালী মাতবর ঘরানার লোকজন গরু কোরবানি করতে পারতেন। অন্যরা ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন। দেশ স্বাধীনের পর মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে।

এ ছাড়া ভাগে গরু কোরবানি দেওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়। ধীরে ধীরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু কেনার হার বাড়ে। সে সঙ্গে নতুন এলাকায় বসতে থাকে পশুর হাট। এক পর্যায়ে গরু কোরবানি ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। পশুর হাটের নাম লোকমুখে হয়ে যায় ‘গরুর হাট’।