পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের আরাজি শিকারপুর গ্রামে জমি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের ৩০ জন। আহতদের বোদা সদর হাসপাতালে ৪ জন ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
বোদা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রন করেন । এ ঘটনায় দুইপক্ষের ২২ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আরাজি শিকারপুর এলাকার কলেজ শিক্ষক তরিকুল ইসলামের পরিবারের সাথে পার্শ্ববর্তী বানিয়াপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমানের পরিবারের সাথে জমি নিয় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ। ১২ থেকে ১৪ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে জমিটি দখল করে জিয়াউর ও তার স্বজনরা ভুট্টা রোপন করে। চারাগুলো ১১ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারিকুল ও তার স্বজনরা শতাধিক লোক ভাড়া করে ওই ভুট্টা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ দেন। এ সময় জিয়াউর ও তার স্বজনরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত হয় জিয়াউর ও তার স্বজন ইসমাইল। এ সময় গ্রামের একটি অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে তরিকুল ও তার চাচা নজরুল ইসলামের লাঠিয়াল বাহিনীকে ধাওয়া দিয়ে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে এবং ভাড়াটে লাঠিয়াবাহিনী কে ঘেড়াও করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যেই তরিকুলের বাড়ির বেশ কয়েকটি ঘর ও ঘরে রাখা জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে যায়। উঠোনে রাখা দুটি ট্রাক্টর ও ৩ টি মোটরসাইকেলও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সংঘর্ষে দুইপক্ষের ২৬ জন আহত হয়। আহতদের বোদা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২২ জনকে আটক করেছেন । তার মধ্যে তরিকুলের ভাড়াটে লাঠিয়ালরাই বেশি।
কলেজ শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি ঘরে তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। এখন আমাদেরকেই উল্টো ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের ভাজতি রমিলা বেগম বলেন, সকাল থেকেই তরিকুলদের বাড়িতে মোটরসাইকেল নিয়ে বহু ভাড়াটে মানুষ আসে। তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিরোধ জমি গিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করতে গেলে আমাদের লোকজন তাতে বাধা দেয়। তখন তারা নির্মমভাবে আমাদের লোকজনকে মারধর করে। জিয়াউর ও ইসমাইলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রংপুরে পাঠানো হয়েছে। তারা নিজেদের ঘরবাড়িতে নিজেরাই আগুন দিয়ে অন্যদের দোষারোপ করছে। মূলত তরিকুল আওয়ামীলীগের নেতা তার ছোট ভাই আতাউর ছাত্রলীগের নেতা। তারা আওয়ামীলীগের সময়ে সাধারণ মানুষের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। এখনো ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ২২ জনকে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।