|| মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক ||
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) — নামের মধ্যেই যেন জ্ঞানের আলো আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতার মেলবন্ধন। তবে এই সবুজ ক্যাম্পাসের বুকে যে রঙের উৎসব লেগে থাকে, তার সাক্ষী হতে চোখ রাখতে হবে চারপাশের ফুলের বাগানে। মৌসুমের সাথে সাথে রঙে রঙে সেজে ওঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে ফুটিয়ে তুলেছে একেকটি শিল্পকর্ম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ থেকেই শুরু হয় এই ফুলের মিছিল। কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের বাগান যেন এক রঙিন ক্যানভাস, যেখানে ফুটে আছে ইনকা গান্দা, স্টার, চন্দ্রমল্লিকা, ডেনথাচ, জবা আর গোলাপের মনোমুগ্ধকর সমারোহ। সকালে শিশিরভেজা পাপড়িতে রোদের আলোর ছোঁয়া যেন তৈরি করে স্বপ্নিল পরিবেশ।
এরপর চোখে পড়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনের বাগান। এখানে ফুটে থাকা সিলভিয়া, কুইনসুপার আর ইনকা গান্দার বাহার দেখে মনে হয়, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এই স্থানটিকে। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় এই পথ, আর সেই চলার সঙ্গী হয়ে থাকে ফুলের সৌরভ।
নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনেও প্রকৃতির এই বাহার কম নয়। সেখানে পিটুনিয়ার উজ্জ্বল রঙ, ইনকা গান্দার সোনালি আভা আর কুইন সুপারের নীরব সৌন্দর্য যেন এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ভবনের এলিভেটরের উপরে ফুটে থাকা ইনকা গান্দা তো এক আশ্চর্য চমক। উপরে তাকালেই দেখা মেলে হলুদ-কমলা পাপড়ির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র ক্যাফেটেরিয়ার সামনেও ছড়িয়ে আছে সবুজের মাঝে রঙের ছোঁয়া। সেখানে লাগানো হয়েছে টগর আর ইনকা গান্দা — টগরের সাদা সৌন্দর্য আর ইনকা গান্দার রঙিন আভা যেন মিলেমিশে এক অনন্য রূপ তৈরি করেছে।
প্রতিটি ফুলের গন্ধ আর রঙে সেজে ওঠা পাবিপ্রবি শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর বন্ধনের প্রতীক। ব্যস্ত ক্লাসের ফাঁকে, ক্লান্ত দুপুরে কিংবা বিকেলের আড্ডায় — এই রঙিন ফুলেরা যেন মনের ক্লান্তি দূর করে দেয়, এনে দেয় প্রশান্তি আর সজীবতার পরশ।
এই বিষয়ে বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী মো:অমিক মাহমুদ বলেন, “ফুল হলো সৌন্দর্যের প্রতীক।পাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের বাহারি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ প্রতিনিয়তই আমাদের মনকে পুলকিত করে।ফুল গুলো যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন রুপে ক্যাম্পাসে বিরাজমান।তাই ফুল গাছ রোপনে আমরা সবাই এগিয়ে আসি এবং আমাদের ক্যাম্পাসের শোভা বাড়িয়ে তুলি।” এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ইয়াসিন আহনাফ বলেন, “প্রতিবছর ফুলের প্রাচুর্য পাবিপ্রবিকে করে তোলে এক প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ। পুরো বসন্ত জুড়েই পাবিপ্রবি সেজে ওঠে এক অপরূপ সৌন্দর্যে। গুল্ম ও বিরুৎ জাতীয় গাছের পাশাপাশি বৃক্ষ জাতীয় গাছ শুধু বসন্ত নয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতিকে সারা বছরই সৌন্দর্যমন্ডিত রাখতে পারবে।”
পাবিপ্রবির এই ফুলেল সৌন্দর্য কেবল চোখের আরাম নয়, বরং এটি হৃদয়ে ছুঁয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সঙ্গে, জ্ঞানের অনুসন্ধানের সঙ্গে, মনের গভীরে এক শিকড় গাঁথা স্মৃতি হয়ে থেকে যায় এই ফুলেরা। প্রকৃতি আর মানুষের এই সহাবস্থানই তো তৈরি করে এক পরিপূর্ণ শিক্ষাঙ্গনের প্রতিচ্ছবি।
– লেখক
মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়