নিউজ ডেস্ক:
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হতে লাগতে পারে দেড় দশক। ব্রাসেলসে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তারস স্যামুয়েলসেন। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে পরবর্তীতে জোটের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেমন হবে, তা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।
স্যামুয়েলসেন জানান, এ পরিস্থিতির একটি সমাধান প্রয়োজন, যা জোটের সদস্যরা খুঁজে বের করবেন। তবে প্রশ্ন হলো, এ সমাধান বের করতে সময় লাগবে কত দিন। তিনি বলেন, দুই বছরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে; আবার এমনও হতে পারে যে, সমাধান খুঁজে বের করতে ১৫ বছর কালক্ষেপণ করল ইইউ। ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হতে কত দিন লাগবে, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।
গত জুনে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্রিটেনবাসী। দেশবাসীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি মাসের শেষে জোটের লিসবন চুক্তির ৫০ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে। লিসবন চুক্তি প্রয়োগ করলে আলোচনা শুরুর দুই বছরের মধ্যে ব্রিটেনকে জোট ত্যাগ করতে হবে।
এ দুই বছরের মধ্যেই জোটের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক চূড়ান্ত করতে চায় ব্রিটেন। তবে ইইউর প্রধান ব্রেক্সিট আলোচক মিশেল বানিয়েসহ আরো অনেক ইইউ কর্মকর্তা ব্রিটেনের এ পরিকল্পনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। বানিয়ে জানান, ব্রিটেনের প্রস্থান বিল ও জোট ত্যাগের পর ইইউভুক্ত বাকি ২৭ দেশের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান নিশ্চিত করার পরই ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। তবে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হোক বা না হোক, আলোচনা শুরুর দুই বছর পর ব্রিটেনকে অবশ্যই জোট ত্যাগ করতে হবে।
ব্রিটেনের ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস জানান, ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত না করেই ব্রিটেনের জোট ত্যাগ করার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ব্রিটেনকে অবশ্যই এমন পরিস্থিতির ব্যাপারেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
গত সপ্তাহে ডেভিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্যামুয়েলসেন। তিনি বলেন, টেরিসা মে লিসবন চুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করলে কোন বিষয়ের পর কি আলোচনা করা হবে, তার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করবে ইইউ। ব্রিটেনের ব্রেক্সিটমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি। স্যামুয়েলসেন বলেন, দুই বছরের আলোচনা শেষে একটি উচ্চাভিলাষী চুক্তির মাধ্যমে সবকিছু চূড়ান্ত করতে চাইছে ব্রিটেন। তবে আলোচনার জন্য জোটের সবাই প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি।
স্যামুয়েলসেন জানান, এখন শুধু আলোচনা শুরুর অপেক্ষা। আলোচনা শুরুর পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, কোন প্রশ্নটা আগে উত্থাপন করা হবে। এদিকে ব্রিটেনের সাবেক ইইউ-বিষয়ক রাষ্ট্রদূত ইভান রজার্স জানান, এর আগে জোটের সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চূড়ান্ত হতে ‘দীর্ঘ সময়’ লেগেছে। উল্লেখ্য, দায়িত্বরত অবস্থায় রজার্স জানিয়েছিলেন ইইউর সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্রিটেনের কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। এ ধরনের মন্তব্য করায় সে সময় রজার্সকে নিরাশাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেন ব্রিটিশ সরকারের বেশ কয়েক সদস্য। এর ফলে পরবর্তীতে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
রজার্স জানান, আগামী দশকের শুরুতে অথবা মাঝামাঝিতে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চুক্তি চূড়ান্ত না হলে অথবা অন্তর্বর্তীকালীন কোনো চুক্তি গৃহীত না হলে উভয় পক্ষের বিভেদ আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। যার ফলে যুক্তরাজ্য-ইইউ বাণিজ্যকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবলিউটিও) শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে। ডবলিউটিওর শুল্কের আওতায় শুধু গাড়ির ওপরই ১০ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে। এদিকে আলোচনার অনুক‚ল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও জোটভুক্ত দেশগুলো ব্রিটেনকে কোনো ছাড় দেবে না বলে অনুমান করেন স্যামুয়েলসেন। তিনি বলেন, জোটকে আগে নিজের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।