গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রধান ফটক নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চায় বিএনপি। নির্বাচন যত দেরি হবে, সমস্যা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আজ ছিল প্রথম দিন। এ সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। আজ সকালে এই সংলাপের উদ্বোধন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই এখন বলছে, বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেটুকু (সংস্কার) দরকার তার শেষে নির্বাচনে যেতে চাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি কেন? ড. আলী রীয়াজ বলছেন, সবাই বলছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার নির্বাচন হচ্ছে প্রধান ফটক, প্রধান দরজা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিন নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর মধ্যে একটা নির্বাচন কিন্তু আরেকটা নির্বাচন থেকে ভালো হয়েছে। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানুষ গ্রহণ করেছে। মানুষ এটাকে অত্যন্ত জরুরি মনে করেছে। আমরা যদি তখন রাষ্ট্রপতি শাসনে চলে যেতাম, তখন সেটা মানুষ কিন্তু গ্রহণ করত না।
জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজকের যে প্রক্রিয়াটা চলছে সেটাকে আমি স্বাগত জানাই। কমিশনগুলোকে অনুরোধ করব আপনারা জনগণের সঙ্গে ইন্টারেকশন করার ব্যবস্থা রাখবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাঠামোগত পরিবর্তন অপরিহার্য। তিনি বলেন, “কেবল চাপিয়ে দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে হবে। সঠিক মাইন্ডসেট গড়ে তোলার মাধ্যমেই গণতন্ত্রকে সফল করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই এগোবে। ভুল-ত্রুটি হবে, কিন্তু সেগুলোর মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুসংহত করতে হবে।”
২০১৬ সালে বিএনপি একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে, যেখানে রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই বারের বেশি না রাখার বিধান, এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের মতো বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছিলাম।”
মহাসচিব জানান, ২০২২ সালে বিএনপি প্রথমে ১২ দফা এবং পরবর্তীতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, “দীর্ঘ দুই বছর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই ৩১ দফা চূড়ান্ত করেছি।”
বক্তব্যের একপর্যায়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তর সালকে আমরা কখনো ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।