নিউজ ডেস্ক:
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোনো কালেই আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐতিহ্য নেই। ওই ঐতিহ্য তাদের উত্তরসূরীরাও এখনো বহন করে চলছে। বিনা বিচারে হত্যার সংস্কৃতি চালু রেখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার প্রয়াসে দেশজুড়ে এখন যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড চলছে, তা নিয়ে যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নের জবাব মিলবে আগামী নাসিক নির্বাচনে। অর্থাৎ দু:শাসনের বিরদ্ধে জাতীয় ইস্যুর সকল ধরণের প্রভাব পড়বে আগামী নাসিক নির্বাচনে। তাই নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই এখন একটিই আলোচনা-কিভাবে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা নারায়ণগঞ্জের মানুষ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভয়ভীতিমুক্ত থেকে ভোট প্রদান করবে, সেটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেশবাসী।
আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নাসিক নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকী। সঙ্কুচিত গণতন্ত্রের পরিসর বাড়ানোর জন্যই নাসিক নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ। নারায়ণগঞ্জবাসী ভোটারবিহীন সরকারের ধারাবাহিক দু:শাসনের বিরুদ্ধে ও মানুষের ভোটাধিকার হরণের জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। সকল যুগে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন পূর্বাপর অভিঘাতে বিদীর্ণ।
তিনি বলেন, ৭৫’ এর একদলীয় বাকশালের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বর্তমানে যে ভয়াবহ দু:শাসন, দেশজুড়ে লুটপাটের মহোৎসব, রাজকোষ লোপাটসহ বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, কথা বলতে গেলেই মামলা-হামলা-কারানির্যাতন, নির্যাতন-নিপীড়ণ, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ চলছে তার বিরুদ্ধে রায় দিতে জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে এতই নাজুক যে ঘরে-বাইরে কোন নাগরিকের এখন কোন ন্যুনতম নিরাপত্তা নেই। মা-বোনরা পর্যন্ত এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেলেও সন্ত্রাসীরা তাদের সহিংস ভঙ্গি প্রদর্শণের নানা আলামত ফুটে উঠছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের মামলার বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। আমরা এর আগেও বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন তৎপরতা নেই।
সুতরাং নাসিক নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটারদের মনেও প্রশ্ন তারা নির্বিঘেœ ভোট প্রদান করতে পারবে কী না ? যদি ভোটাররা ভোটের দিন নির্বিঘেœ, ভয়ভীতিমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে তবে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ।
রিজভী আরো বলেন, যেহেতু নাসিক নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ভোটাররা এখনো শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না, যেহেতু নির্বাচনী এলাকায় অস্ত্রধারীরা নীরবে অবস্থান করছে, সেহেতু ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ কী রঙ ধারণ করবে তা নিয়ে সংশয় জনমনে বিদ্যমান রয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের দাবি সত্বেও সেটিকে পাশ কাটিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছে নির্বাচন কমিশন। এটিও স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে একধরণের সংশয় ও ভীতি কাজ করছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যত নির্বাচন হয়েছে সেগুলো ছিল রক্তাক্ত ভোট সন্ত্রাসের এক অভিনব আখ্যান। কিন্তু সেই ভোটগুলি নিয়ে কমিশনের বিবৃতিগুলো যোগ করলে তা হবে এক বিশাল মিথ্যাচারের দলিল। সেগুলি ছিল সরকারকে খুশী করার বিবৃতি কিন্তু সেগুলি জনগণের নিকট ন্যুনতম গ্রহণযোগ্যতা পায়নি বরং তারা সেটিকে হাস্যকর বলে মনে করেছে।
আমরা আবারো দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-এই নির্বাচন কমিশন তাদের অধীনে রক্তপাতের নির্বাচনের ন্যায় আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নাসিক নির্বাচন আলোহীন, ভোটহীন, ভোটারশুন্য ও অন্ধকারতুল্য প্রবণতার নির্বাচন সফল করার তৎপরতা চালালে সেটি প্রতিহত করার জন্য জনগণ দিবানিশি প্রস্তুত থাকবে। কমিশনের মূঢ়তার আত্মঘাতি কর্মকান্ডের উপযুক্ত জবাব পেতে কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ভোট ডাকাতি ও কারচুপির আশ্রয় নিতে গেলে সেসময় কমিশন নিস্ক্রিয়, নিদ্রামগ্ন ও সরকারের স্বার্থরক্ষায় তৎপর থাকলে সেটির প্রতিক্রিয়ার জন্যও নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।