রিপোর্ট : ইমাম বিমান
সাংবাদিকতার সোর্সকে আজ উলঙ্গ করা হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফ প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আহমেদ আবু জাফর। এ নিয়ে তার মন্তব্য কলাম তুলে ধরা হলো ।
আজকাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকতার সোর্সকে উলঙ্গ করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দিলেই সোর্সকে নিরাপত্তাহীন করে তোলা হচ্ছে। যা রীতিমত সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা পরিপন্থী। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন সাংবাদিকদের তার সোর্স বা স্বাক্ষীসহ উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রদান কিংবা জবাব দিতে প্রস্তুত কিনা সেটিই মূখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অহরহ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের নোটিশ সাংবাদিকদের কাছে আসছেই। সম্প্রতি দুদকে অনুরুপ নোটিশ দেয়ারপর সাংবাদিক সংগঠনের তোপের মুখে চিঠি প্রত্যাহার করতেও বাধ্য হয়েছিলেন। এ ধরনের কার্যকলাপের তীব্র বিরোধীতা করছে সাংবাদিকদের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএএসএফ) ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি (সানিপ্রক)।গণমাধ্যমকে নিয়ে এসব কী হচ্ছে? দূর্ণীতিবাজরা গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরতেই নিত্য নতুন ফন্দি শুরু করছে দূর্ণীতির বরপুত্ররা ।
এটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ছিল; যখন সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতো। জনগণ সুফল পেত। আর এখন সংবাদ প্রকাশের পর উল্টো সাংবাদিককে হয়রাণীর জন্য তার সোর্সসহ প্রশাসনের নিকট টাইম টেবিলমত হাজির হতে বলা হয়। যেন সাংবাদিকরা তার অধস্তন চাকরীজীবি। যা নির্মম দূ:খ এবং হতাশাজনক। যদ্দুর জানাযায়, সাংবাদিকরা নিশ্চিত মৃত্যুর কাছে হার মানবে অথচ তার সোর্সের নাম প্রকাশ করবেন না। কিন্তু প্রশাসন কি শুরু করলো? নোটিশ দিয়ে সোর্স সহ হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হল লালমনিরহাটের বাংলা নিউজের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি খোরশেদ আলম সাগরকে। যেখানে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করে ওসির ঘুষ গ্রহনের সংবাদের অডিও- ভিডিও ভাইরাল ইতিমধ্যে। তবুও ওসি মাহফুজ আলমকে ঢাকায় ষ্ট্যান্ড রিলিজ করে সম্মান বড় করা হয়েছে। এ ধরনের অপকর্ম করার পর তাকে খাগড়াছড়ি কিংবা বান্দরবানে না পাঠিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে তার ওজন আরেকদফা বাড়িয়ে দেয়া নয় কি ? জেলা পুলিশ প্রধান আবিদা সুলতানার নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগরের ব্যক্তিনামে তাকে নোটিশ করা হয়। আগামিকাল ১৬ আগস্ট তাকে তথ্যপ্রমানসহ হাজির হতে বলা হয়।
তারপরও কেন সাংবাদিকতার মাথা খেতে তার সোর্স আপনার নিকট উপস্থাপন করতে হবে? সাংবাদিকরা আপনার নিকট তার সোর্স উপস্থাপন করতে বাধ্য নন। আপনি প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা যাচাই-বাছাই করুন। পারলে ওসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন এবং শাস্তি দিন। জানিনা পারবেন কিনা ? কারন তার আয়ের ওপর আপনাকে চলতে হয়। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ইত্তেফাক ও মাইটিভি প্রতিনিধি আসাদ উল্লাহ মাদকে সয়লাব গজারিয়া শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের জেরধরে নারায়নগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো: মোস্তাফিজুর রহমান গত ৪ আগস্ট অনুরুপ একখানা নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ অনুযায়ী তাকে নিজ খরচে কোরবানী ঈদের দুদিন আগে ৮০ কিলোমিটার যানজট ডিঙ্গিয়ে একজন এএসআইর সাথে নারায়নগঞ্জে এবং নরসিংদীতে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। কি আশ্চয্য! অভিযুক্ত পুলিশের সঙ্গে একই টেবিলে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল সাংবাদিক আসাদ উল্লাহকে। পুলিশের পক্ষ থেকে সোর্সের নিরাপত্তার কথা বলা হলেও এখন অদৃশ্য কারনে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে আসাদ বিএমএসএফকে নিশ্চিত করেছেন। অথচ সেই অভিযুক্ত পুলিশের কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।
এখন প্রশ্ন সংবাদ প্রকাশের পর কেনো সাংবাদিককে নোটিশ দিয়ে হাজির হতে বলা হলো? সাংবাদিকরাতো সংবাদ প্রকাশই করে ফেলেছেন, তা তদন্ত করুন। সত্য মিথ্যা যাচাই করুন। সংবাদের ব্যাপারে কারো কোনো আপত্তি থাকলে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের স্মরনাপন্ন কিংবা সংশ্লিষ্ট ধারায় আদালতে অভিযোগ করতে পারেন। সাংবাদিকরা আজকের ঘটনা তদন্ত করে কালকেই সংবাদ প্রকাশ করে ফেলেন। অন্যসব দপ্তরের মত বছরের পর বছর ফাইল অাটকে সাংবাদিকরা অনৈতিক দাবি করেন না। আমরা মনে করছি, গণমাধ্যমকে কোনঠাসা করতেই প্রশাসনেরই যত আয়োজন। মনে রাখবেন গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর আপনারা সেই রাষ্ট্রের পাহারাদার। এটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। যা ইচ্ছে তা করার সুযোগ নেই। তাইতো ওসি প্রদীপদের হাতে আজ হাতকড়া। এটি কেবলই বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও তাঁরকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কারনেই তা সম্ভব হয়েছে। তাই আসুন, আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। তাই শপথ নিন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা সত্যিকার প্রতিষ্ঠা করতে সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত একটি আগামির বাংলাদেশের বিকল্প নেই।