বৃহস্পতিবার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | হেমন্তকাল

NilKontho

শিরোনাম :
Logo সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাছপট্টি এলাকায় গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণে ২ জন আহত Logo ইবির আরবী বিভাগের স্নাতক সমাপনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত! Logo খুবিতে ওবিই পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিমার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ! Logo সম্পাদক আশরাফ ইকবালের জন্মদিনে শিক্ষার্থীদের গাছের চারা উপহার দিলেন তরুছায়া Logo মাদকবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শ্যামনগরের ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় Logo নোবিপ্রবিতে শনাক্ত ১৩১ প্রজাতি বন্যপ্রাণী Logo শাহজাদপুরে দুই প্রবাসীর লাশ উদ্ধার Logo সিরাজগঞ্জের বিএনপি নেতা রেজাউল করিমের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার  Logo সিরাজগঞ্জে প্রাণিসম্পদের ব্যর্থ প্রকল্পে তিন কোটি টাকার সরঞ্জাম ঝুঁকিতে

তিন মাসে বাড়ল ১৪ হাজার কোটি টাকা লাগামহীন খেলাপি ঋণ

  • rahul raj
  • আপডেট সময় : ১১:০৭:২৩ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৪ জুন ২০১৮
  • ৭৭৪ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে খেলাপি ঋণ। এর উল্লম্ফনে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী এবার মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তা বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রকৃত চিত্র নয়। খেলাপির তথ্য গোপন করতে ব্যাংকগুলো নানা কৌশল অনুসরণ করে। এ সংক্রান্ত মামলায় বারবার স্টে অর্ডার বহাল রাখা, পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন এবং ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ হিসাবের বাইরে রাখা হয়। সে হিসাবে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পুরো অর্থনীতিকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। দেশের অগ্রগতির চাকা থামিয়ে দিচ্ছে। ভালো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এগোতে পারছেন না। বিপরীতে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদহার। এ ছাড়া দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক পুঁজি সংকটে এক রকম খোলসে পরিণত হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- দেশের ব্যাংকিং খাতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, তিন মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়া বড় উদ্বেগের বিষয়। এ চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকের কিছু দুষ্ট পরিচালক সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। এটা বড় অশনিসংকেত। এ ছাড়া ২০১০ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গঠন করার পর থেকে সরকারি ব্যাংকে ঋণের নামে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। সে ঋণগুলো বারবার খেলাপি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে পুরনো সব ঋণ একসঙ্গে খেলাপি ঘোষণা করা। তাহলে নতুন ঋণগুলো আলাদা করা যেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে এর বাইরে অবলোপন করা ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ মামলায় আটকে আছে। এ ঋণ হিসাবে নিলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অবলোপন করা ঋণ মন্দঋণ হওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী এসব ঋণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে আলাদা করে রাখা হয়। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে বিপুল অঙ্কের খেলাপিযোগ্য ঋণকে খেলাপি না দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনেও এ ধরনের তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- খেলাপি বা শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা আইনগত জটিলতা। খেলাপি গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর বের করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রেণীকরণ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এ সুবাদে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন। কারণ, একজন ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি জাতীয় কোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণখেলাপিকেই গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করছে। ওই গ্রাহক আবার খেলাপি হয়ে আবার আদালতে মামলা করছে। এভাবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে। এটি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর তহবিল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তা আদায় হচ্ছে না। আবার আমানত প্রবাহও কমে গেছে। এতে বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার সামান্য বাড়িয়ে গ্রাহক টানার চেষ্টা করছে। তবে ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয়। এর পরিমাণ ৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো। এ খাতের ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিদেশি ৯ ব্যাংকের বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকা। তবে গত তিন মাসে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
২০১৮ সালের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ শতাংশ। তিন মাস আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মার্চ শেষে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩১ হাজার ২২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০১ শতাংশ। তিন মাস আগে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, এ সময়ে সরকারি মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিন মাস আগেও এই ব্যাংক দুটির একই পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

তিন মাসে বাড়ল ১৪ হাজার কোটি টাকা লাগামহীন খেলাপি ঋণ

আপডেট সময় : ১১:০৭:২৩ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৪ জুন ২০১৮

নিউজ ডেস্ক:নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে খেলাপি ঋণ। এর উল্লম্ফনে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী এবার মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তা বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রকৃত চিত্র নয়। খেলাপির তথ্য গোপন করতে ব্যাংকগুলো নানা কৌশল অনুসরণ করে। এ সংক্রান্ত মামলায় বারবার স্টে অর্ডার বহাল রাখা, পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন এবং ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ হিসাবের বাইরে রাখা হয়। সে হিসাবে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পুরো অর্থনীতিকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। দেশের অগ্রগতির চাকা থামিয়ে দিচ্ছে। ভালো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এগোতে পারছেন না। বিপরীতে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদহার। এ ছাড়া দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক পুঁজি সংকটে এক রকম খোলসে পরিণত হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- দেশের ব্যাংকিং খাতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, তিন মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়া বড় উদ্বেগের বিষয়। এ চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকের কিছু দুষ্ট পরিচালক সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। এটা বড় অশনিসংকেত। এ ছাড়া ২০১০ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গঠন করার পর থেকে সরকারি ব্যাংকে ঋণের নামে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। সে ঋণগুলো বারবার খেলাপি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে পুরনো সব ঋণ একসঙ্গে খেলাপি ঘোষণা করা। তাহলে নতুন ঋণগুলো আলাদা করা যেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে এর বাইরে অবলোপন করা ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ মামলায় আটকে আছে। এ ঋণ হিসাবে নিলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অবলোপন করা ঋণ মন্দঋণ হওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী এসব ঋণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে আলাদা করে রাখা হয়। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে বিপুল অঙ্কের খেলাপিযোগ্য ঋণকে খেলাপি না দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনেও এ ধরনের তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- খেলাপি বা শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা আইনগত জটিলতা। খেলাপি গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর বের করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রেণীকরণ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এ সুবাদে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন। কারণ, একজন ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি জাতীয় কোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণখেলাপিকেই গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করছে। ওই গ্রাহক আবার খেলাপি হয়ে আবার আদালতে মামলা করছে। এভাবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে। এটি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর তহবিল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তা আদায় হচ্ছে না। আবার আমানত প্রবাহও কমে গেছে। এতে বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার সামান্য বাড়িয়ে গ্রাহক টানার চেষ্টা করছে। তবে ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয়। এর পরিমাণ ৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো। এ খাতের ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিদেশি ৯ ব্যাংকের বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকা। তবে গত তিন মাসে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
২০১৮ সালের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ শতাংশ। তিন মাস আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মার্চ শেষে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩১ হাজার ২২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০১ শতাংশ। তিন মাস আগে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, এ সময়ে সরকারি মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিন মাস আগেও এই ব্যাংক দুটির একই পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল।