নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বারবার নির্দেশনার পরও ভালো গ্রাহকদের সুদে রিবেট বা ছাড় দিতে অনীহা দেখাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক। আর ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের সুদহারে বিশেষ ছাড়ের নির্দেশনা পরিপালন করেছে মাত্র ছয়টি ব্যাংক।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে নীতিনির্ধারণ বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে।বৈঠক সূত্রে আরো জানা যায়, ১৬টি ব্যাংক ওই সুবিধার জন্য মুনাফা থেকে একটি অংশ আলাদাভাবে সংরক্ষণ করেছে। বাকি ৩৪টি ব্যাংক সুবিধা দেবে কি-না তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে দরকষাকষি করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বৈঠকে বলেছে, ১০ শতাংশ সুদ কমানোর যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই পালন করতে হবে। তা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় চলতি ও নতুন মুদ্রানীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের সার্ভিস চার্জ, হলমার্ক গ্রুপের অনুকূলে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল, ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা ও আগের ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় উপস্থিত এক ডেপুটি গভর্নর বলেন, নির্দেশনার আলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সব ব্যাংককে এ সুবিধা দিতে হবে। সুবিধা না দেওয়ার সুযোগ কোনো ব্যাংকের নেই। মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণের সার্ভিস চার্জ ১৪টি থেকে নামিয়ে ছয়টি পর্যায়ে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যা ব্যাংকগুলোকে পরিপালন করতে হবে। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতাদের সুদহারে রিবেট দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত ছিল তা মাত্র কয়েকটি ব্যাংক দিয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোকে রিবেট দেওয়ার জন্য তাগাদা দেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের ঋণের প্রায় ১৪ ধরনের চার্জ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। লোন অ্যাপ্লিকেশন ফি, লোন প্রসেসিং ফি, ডকুমেন্টেশন ফি, সার্ভিস চার্জ, লিগ্যাল ফি, এপ্রাইসাল ফি, সার্ভে ফি, মর্টগেজ ফি, আর্লি সেটেলমেন্ট ফি, ব্যাংক গ্যারান্টি, মনিটরিং ফি, রিনিউয়াল ফি ইত্যাদি নামে চার্জ আদায় করে।
এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি চার্জের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে কোনো কোনো ব্যাংক। এতে ঋণের কার্যকর সুদহার ৪ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। তাই সার্ভিস চার্জ আদায়ের ছয়টি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান গ্রেড যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমানতের বিপরীতে যে পরিমাণে সুদহার কমেছে ঋণের বিপরীতে সেই হারে কমেনি। এতে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক ঠকানো এই কৌশল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলো সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে গ্রাহকের অনুকূলে সৃষ্ট ফোর্সড লোনের বিপরীতে সুদ আদায় করবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া যেসব ব্যাংক পাওনা আদায়ে মামলা করেছিল ওই সব মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।