স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ এক সময় রক্তাক্ত ঝিনাইদহের মাঠ কাঁপানো চরমপন্থি নেতা আনোয়ার হোসেন দেবুর মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রোগেশোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, ৪৫ বছর ধরে আত্মগোপনে থাকা আনোয়ার হোসেন রোববার সন্ধ্যায় রাজবাড়ি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। তবে কেও কেও বলছেন তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, ৬ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা রোববার রাতেই মৃতদেহ আনতে রওনা হয়েছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভরতপুর গ্রামে আনোয়ার হোসেন দেবুর বাড়ি। তার বাবার নাম মৃত আনসার আলী। যুবক বয়সে মাঠে কৃষি কাজ ও রাস্তায় মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করা আনোয়ার হোসেন মাত্র ২২ বছর বয়সে যোগ দেন বিপ্লবী কমিউনিষ্ট (হক গ্রুপ) পার্টিতে। গোপন সংগঠনে তার নাম হয় দেবু।
অনুন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা আর পুলিশের নজরদারী এড়িয়ে দেবু বাহিনী নিয়ে ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলে ঘাটি তৈরী করেন। চরমপন্থি দলগুলোর বহুধা বিভক্তির কারণে আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পুর্ববাংলা ও সর্বহারা পার্টির সাথে বহুযুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা শোনা যায়। অল্পদিনে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে জেলার আন্ডারগ্রাউন্ড মহলে।
দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থিদলের আত্মসমর্পন পক্রিয়ার সমন্বয়কারী মীর ইলিয়াস হোসেন দিলিপের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি ২০০০ সালে আত্মসর্পন করেন। তারপর শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের গোপন সংগঠন গনমুক্তি ফৌজে যোগদান করার কথা শোনা যায়। কিছুদিন তিনি জনসমক্ষে চলাফেরা করলেও আবারো আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশ ও র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর আধুনিকায়নের ফলে জেলাব্যাপী চরমপন্থি দমনে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়।
আনোয়ার হোসেন দেবুর অনেক সহযোগী পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে নিহত হয়। এমনকি তার আপন ভাই তপুও কিডন্যাপ হওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। দেশব্যাপী ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে দেবু রাজবাড়ি ও ফরিদপুর এলাকায় আত্মগোপন করেন। উন্নত তথ্য প্রযুক্তির যুগেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি সরকারের কোন বাহিনী। দীর্ঘ ৪৫ বছর আত্মেগোপনে থাকা নিঃসঙ্গ দেবু অবশেষে স্বাভাবিক মৃত্যু পেয়ালায় চুমুক দেন।