সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা (কালীপূজা) ও শুভ দীপাবলি উৎসব জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। সাধারণত বাংলা আশ্বিন বা কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় প্রতিমা স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বিকাল ৪টায় শুরু হয় দেবী অর্চনার প্রস্তুতি, আর ভক্তি ও আনন্দে সন্ধ্যা ৬টায় সম্পন্ন হয় দেবী অর্চনা। এর পরপরই শুরু হয় শুভ দীপাবলি উৎসব। প্রদীপের আলোয় ঝলমল করে ওঠে ক্যাম্পাসের পূজামণ্ডপ। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস—মনে হচ্ছিল, আলো-আনন্দে ভরে গেছে চারপাশ।
দীপ প্রজ্বলনের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হয় একক ও দলীয় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ধুনুচি নাচ, স্তোত্রগান ও ভক্তিগীতি পরিবেশনায় মুখরিত হয় পরিবেশ। পরবর্তীতে উপস্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. অরবিন্দ সাহার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহিনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ ওবায়দুল ইসলাম, সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পংকজ রায়, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এবার শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা ও দীপাবলি উৎসবের কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শুভ সরকার।
সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগতের সব অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন মা কালী। ভক্তদের কাছে তিনি শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, মহামায়া ইত্যাদি নামে পরিচিত। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে ‘কালী’ নামের উৎপত্তি। হিন্দু পুরাণ মতে, দেবী কালী হলেন দুর্গারই এক শক্তিরূপ; তাই কালীপূজাকে শক্তির পূজাও বলা হয়। গৃহে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ করে, এবং মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী প্রতিমার সামনে মহাসমারোহে কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবে আগত শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “মায়ের আগমন শুধু ধর্মীয় নয়, এটি এক আত্মিক পুনর্জাগরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও ব্যস্ততার ভেতরে এই পূজা আমাদের একাত্মতা ও আনন্দের অনুভূতি দেয়। ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের একান্তই কামনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন দ্রুত একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা হয়—যেখানে আমরা নির্বিঘ্নে আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও নিজেদের সংস্কৃতি চর্চা করতে পারি।”
ইবি পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায় বলেন, “এবার আমরা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে শুভ দীপাবলি ও শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা উদযাপন করছি। এর আগে শুধু দীপাবলি উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। গত বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা ও দীপাবলি উদযাপন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আমাদের এই উৎসব আরও বর্ণিল ও প্রাণবন্ত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের বসবাসের জন্য যেমন একটি স্থায়ী আবাস প্রয়োজন, তেমনি আমাদের ধর্মীয় উৎসব ও পূজা-পার্বণ নির্বিঘ্নে পালনের জন্য একটি স্থায়ী মন্দির অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনের একটি অস্থায়ী মন্দিরকক্ষে পূজা পালন করি, কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় বিভিন্ন উৎসবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাই, যেন অতি দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা হয়।”