শিরোনাম :
Logo মাদকবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শ্যামনগরের ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় Logo সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত Logo কচুয়ার ভূঁইয়ারা গ্রামে বিয়ের ঘটনায় সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্ত Logo কচুয়ার পালাখাল মডেল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত জাকির হোসেন মোল্লা Logo সিরাজগঞ্জ কারাগারে আওয়ামীলীগ নেতার মৃত্যু Logo সিসা দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খুবিতে নানা কর্মসূচি Logo ইবিতে সাজিদ হত্যা তদন্তে সন্দেহভাজন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান  Logo সিরাক-বাংলাদেশের উদ্যোগে চাঁদপুরে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo স্টারমারের সফরে ইউরোফাইটার ক্রয় চুক্তিতে নজর তুরস্কের Logo বিলিয়নিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব দিলেন চেক প্রেসিডেন্ট

বিশ্ব হাতি দিবস: শেরপুরে দ্বন্দ্বে মরছে মানুষ ও হাতি

বিশ্ব হাতি দিবসের আলোয় হাতি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার কথা সবাই স্মরণ করে। কিন্তু শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় পাদদেশে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে ভয়াবহ মানুষ–হাতি দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, আবার মানুষের প্রতিরোধে মরছে বন্যহাতি। তবে নেই কোনো স্থায়ী সমাধান।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৭০–৮০টি বন্যহাতির দল বসবাস করছে। ২০০০ সালের দিকে ভারত থেকে খাদ্যের সন্ধানে আসা কয়েকটি হাতি থেকে এ সংখ্যা বেড়ে এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অঞ্চলের মুসলিম, গারো, হাজং, কোচ, বানাই বর্মন ও হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কৃষি ও শ্রমজীবন নিয়ে বসবাস করেন। তাদের জীবন ও জীবিকা হাতির তাণ্ডবে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

গ্রামবাসীরা জানান, হাতির দল দিনে গভীর অরণ্যে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই খাদ্যের খোঁজে তারা লোকালয় ও ফসলি জমিতে আসে। রাতভর তারা হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাক–ঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হন না। পালাক্রমে হাতি বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের কৃষক উকিল উদ্দিন, এরশাদ আলম ও বাদশা মিয়া জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে অনেক জটিলতা পোহাতে হয়। পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ জমি ‘খ’ তফসিলভুক্ত হওয়ায় রেকর্ড না থাকলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। অনেকেই বছরের পর বছর ঘুরেও ক্ষতিপূরণ পান না।

২০১৬ সালে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৩ কিলোমিটার এলাকায় সোলার ফেন্সিং (বৈদ্যুতিক তারের বেড়া) স্থাপন করা হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।

শেরপুর জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের পর গারো পাহাড় এলাকায় হাতির হামলায় ৪২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। একই সময়ে মারা পড়েছে ৩৩টি বন্যহাতি।

বনবিভাগ ২৫টি ‘এলিফেন্ট রেসপন্স টিম’ (ইআরটি) গঠন করলেও সরকারি সুযোগ–সুবিধার অভাবে তাদের কার্যক্রম স্থবির।

মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, “স্থায়ী সমাধান এখনও নেই। তবে হাতির খাদ্যের সংকট মেটাতে কলাগাছসহ বিভিন্ন গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে তারা লোকালয়ে কম আসে। হাতির জন্য করিডর তৈরির প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা, পর্যাপ্ত খাদ্যভাণ্ডার ও নিরাপদ করিডর ছাড়া এই দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাদকবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শ্যামনগরের ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়

বিশ্ব হাতি দিবস: শেরপুরে দ্বন্দ্বে মরছে মানুষ ও হাতি

আপডেট সময় : ০৪:০৭:৪৮ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫

বিশ্ব হাতি দিবসের আলোয় হাতি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার কথা সবাই স্মরণ করে। কিন্তু শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় পাদদেশে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে ভয়াবহ মানুষ–হাতি দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, আবার মানুষের প্রতিরোধে মরছে বন্যহাতি। তবে নেই কোনো স্থায়ী সমাধান।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৭০–৮০টি বন্যহাতির দল বসবাস করছে। ২০০০ সালের দিকে ভারত থেকে খাদ্যের সন্ধানে আসা কয়েকটি হাতি থেকে এ সংখ্যা বেড়ে এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অঞ্চলের মুসলিম, গারো, হাজং, কোচ, বানাই বর্মন ও হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কৃষি ও শ্রমজীবন নিয়ে বসবাস করেন। তাদের জীবন ও জীবিকা হাতির তাণ্ডবে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

গ্রামবাসীরা জানান, হাতির দল দিনে গভীর অরণ্যে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই খাদ্যের খোঁজে তারা লোকালয় ও ফসলি জমিতে আসে। রাতভর তারা হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাক–ঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হন না। পালাক্রমে হাতি বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের কৃষক উকিল উদ্দিন, এরশাদ আলম ও বাদশা মিয়া জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে অনেক জটিলতা পোহাতে হয়। পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ জমি ‘খ’ তফসিলভুক্ত হওয়ায় রেকর্ড না থাকলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। অনেকেই বছরের পর বছর ঘুরেও ক্ষতিপূরণ পান না।

২০১৬ সালে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৩ কিলোমিটার এলাকায় সোলার ফেন্সিং (বৈদ্যুতিক তারের বেড়া) স্থাপন করা হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।

শেরপুর জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের পর গারো পাহাড় এলাকায় হাতির হামলায় ৪২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। একই সময়ে মারা পড়েছে ৩৩টি বন্যহাতি।

বনবিভাগ ২৫টি ‘এলিফেন্ট রেসপন্স টিম’ (ইআরটি) গঠন করলেও সরকারি সুযোগ–সুবিধার অভাবে তাদের কার্যক্রম স্থবির।

মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, “স্থায়ী সমাধান এখনও নেই। তবে হাতির খাদ্যের সংকট মেটাতে কলাগাছসহ বিভিন্ন গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে তারা লোকালয়ে কম আসে। হাতির জন্য করিডর তৈরির প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা, পর্যাপ্ত খাদ্যভাণ্ডার ও নিরাপদ করিডর ছাড়া এই দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।