বৃহস্পতিবার | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ Logo সাতক্ষীরা-কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মদ ও ঔষধসহ আড়াই লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর ভূঁইয়ার ঘাট ডিঙ্গি মাঝি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo টেকনাফে বিজিবির অভিযানে সাগর পথে মানব পাচারকালে দুই দালালসহ ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার Logo দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে: তারেক রহমান Logo রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই কিয়েভের : জেলেনস্কি Logo তফসিল ঘোষণার পর বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান Logo চাঁদপুরে সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা আবদুস সামাদ মিয়ার ইন্তেকাল—সহকর্মীদের মাঝে গভীর শোক Logo পলাশবাড়ীতে পাক হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

মুসলিম বাংলার আভিজাত্যের প্রতীক

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১২:৫৯:৩৭ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • ৭৭১ বার পড়া হয়েছে
হাম্মামখানা উচ্চারণ করলেই কল্পনায় তুর্কি সুলতান বা মোগল সম্রাটদের কথা। যেন কোনো সুরম্য প্রাসাদের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফার্সি হাম্মাম শব্দটি আরবি হাম্মুন শব্দ থেকে নেওয়া। অর্থ উষ্ঞ বা গরম। সে হিসেবে হাম্মামখানা অর্থ গরম পানির স্থান। কিন্তু মুসলিম সভ্যতায় হাম্মামখানা বলতে সাধারণ গোসলখানা বা গোসলের স্থানকে বোঝায়। মুসলিম সমাজে হাম্মামের প্রচলন তুর্কিদের মাধ্যমে হয়েছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। তবে মুসলিম ইতিহাসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হাম্মামখানার বর্ণনাও পাওয়া যায়। বিশেষত তুর্কি নগরগুলোতে অর্থের বিনিময়ে উন্নত গোসলখানা ব্যবহারের সুযোগ ছিল।

বাংলা অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে হাম্মাম সংস্কৃতির আগমন ঘটে। বাংলায় স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে মধ্যযুগের শেষভাগে। সুলতানি ও মোগল যুগে যার ব্যাপক উত্কর্ষ সাধিত হয়। হাম্মাম বাংলার স্থাপত্য বিদ্যায় নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মুসলিম আমলে নির্মিত হাম্মামগুলোর ভেতর যশোরের কেশবপুরে অবস্থিত মির্জানগর হাম্মামটি অন্যতম। স্থাপত্যটি মির্জানগরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। হাম্মামখানাটি নওয়াববাড়ি ও হাফসিখানা নামেও পরিচিত। ১৯৯৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং সংস্কার করে।

কথিত আছে, সুবাহদার শাহ সুজার শ্যালক পুত্র মির্জা সাফসি খানের নামেই মির্জানগরের নামকরণ করা হয়েছে। মির্জা সাফসি খান ও নুরুল্লাহ খান যশোরের ফেৌজদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। মির্জানগরকে তাদের প্রাশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। এখানে তারা নওয়াব বাড়ি ও কেল্লা প্রতিষ্ঠা করেন। কপোতাক্ষ নদ ও বুড়িভদ্রা নদীর সঙ্গমস্থলটি কেৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ধীরে ধীরে মির্জানগর অত্র অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ জেমস রেনেল তঁার মানচিত্রে মির্জানগরকে যশোর অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মির্জানগর হাম্মামখানা নওয়াববাড়ি ও কেল্লারই অংশ ছিল। কালের আবর্তনে নওয়াব বাড়ি ও কেল্লা হারিয়ে গেলেও কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে হাম্মামখানা। জে. ওয়েস্টল্যান্ড সর্বপ্রথম মির্জানগরের ধ্বংসাবশেষকে ফেৌজদার ও নওয়াবদের বাসভবন হিসাবে চিহ্নিত করেন। এক সময় কেল্লাটি পরিখা ও সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষিত ছিল। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছিল কামান। কামানটি এখন যশোর মনিহার মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে।

মির্জানগর হাম্মামখানা মূলত একটি চার গম্বুজ বিশষ্টি ভবন। এর ভেতরে আছে চারটি খোলা কক্ষ এবং একটি পাথর ও চুন-সুরকির তৈরি বৃহৎ কূপ। হাম্মামে প্রবেশের একমাত্র পথটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। প্রবেশপথের সঙ্গে সংযুক্ত বর্গাকৃতির কক্ষটি ছিল প্রসাধন কক্ষ। কক্ষের চার পাশের প্রত্যেক দেয়ালে আছে একটি করে কুলুঙ্গি। প্রসাধন কক্ষ থেকে ধনুকাকার পথ দিয়ে সোজা অপর আরেকটি বর্গাকৃতি কক্ষে প্রবেশ করা যায়। কক্ষটি পোশাক বদলানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।

হাম্মামখানার উত্তর-দক্ষিণ কোণে আছে একটি ছোট জলাধার বা ট্যাঙ্ক। এই কক্ষের পূর্বে আছে দুইটি বর্ধিত গম্বুজাকৃতির কক্ষ যা ছিল সম্ভবত মূল গোসলখানা। এই কক্ষে কোনো বড় জানালা নেই। এর বাইরে পূর্ব পাশের লাগোয়া চারটি খোলা কক্ষ সম্ভবত জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জলাধারে পানি ধরে রেখে সেখান থেকে মাটির পাইপের মাধ্যমে ভেতরের গোসলখানার জলাধারে পানি সরবরাহ করা হতো। সম্পূর্ণ হাম্মামখানার মাঝ বরাবর আছে একটি পানি গরম করার চুলি্ল যা মাটির নীচ থেকে একটি টানা পাইপ দ্বারা সংযুক্ত।

তথ্যঋণ : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ

মুসলিম বাংলার আভিজাত্যের প্রতীক

আপডেট সময় : ১২:৫৯:৩৭ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
হাম্মামখানা উচ্চারণ করলেই কল্পনায় তুর্কি সুলতান বা মোগল সম্রাটদের কথা। যেন কোনো সুরম্য প্রাসাদের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফার্সি হাম্মাম শব্দটি আরবি হাম্মুন শব্দ থেকে নেওয়া। অর্থ উষ্ঞ বা গরম। সে হিসেবে হাম্মামখানা অর্থ গরম পানির স্থান। কিন্তু মুসলিম সভ্যতায় হাম্মামখানা বলতে সাধারণ গোসলখানা বা গোসলের স্থানকে বোঝায়। মুসলিম সমাজে হাম্মামের প্রচলন তুর্কিদের মাধ্যমে হয়েছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। তবে মুসলিম ইতিহাসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হাম্মামখানার বর্ণনাও পাওয়া যায়। বিশেষত তুর্কি নগরগুলোতে অর্থের বিনিময়ে উন্নত গোসলখানা ব্যবহারের সুযোগ ছিল।

বাংলা অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে হাম্মাম সংস্কৃতির আগমন ঘটে। বাংলায় স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে মধ্যযুগের শেষভাগে। সুলতানি ও মোগল যুগে যার ব্যাপক উত্কর্ষ সাধিত হয়। হাম্মাম বাংলার স্থাপত্য বিদ্যায় নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মুসলিম আমলে নির্মিত হাম্মামগুলোর ভেতর যশোরের কেশবপুরে অবস্থিত মির্জানগর হাম্মামটি অন্যতম। স্থাপত্যটি মির্জানগরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। হাম্মামখানাটি নওয়াববাড়ি ও হাফসিখানা নামেও পরিচিত। ১৯৯৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং সংস্কার করে।

কথিত আছে, সুবাহদার শাহ সুজার শ্যালক পুত্র মির্জা সাফসি খানের নামেই মির্জানগরের নামকরণ করা হয়েছে। মির্জা সাফসি খান ও নুরুল্লাহ খান যশোরের ফেৌজদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। মির্জানগরকে তাদের প্রাশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। এখানে তারা নওয়াব বাড়ি ও কেল্লা প্রতিষ্ঠা করেন। কপোতাক্ষ নদ ও বুড়িভদ্রা নদীর সঙ্গমস্থলটি কেৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ধীরে ধীরে মির্জানগর অত্র অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ জেমস রেনেল তঁার মানচিত্রে মির্জানগরকে যশোর অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মির্জানগর হাম্মামখানা নওয়াববাড়ি ও কেল্লারই অংশ ছিল। কালের আবর্তনে নওয়াব বাড়ি ও কেল্লা হারিয়ে গেলেও কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে হাম্মামখানা। জে. ওয়েস্টল্যান্ড সর্বপ্রথম মির্জানগরের ধ্বংসাবশেষকে ফেৌজদার ও নওয়াবদের বাসভবন হিসাবে চিহ্নিত করেন। এক সময় কেল্লাটি পরিখা ও সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষিত ছিল। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছিল কামান। কামানটি এখন যশোর মনিহার মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে।

মির্জানগর হাম্মামখানা মূলত একটি চার গম্বুজ বিশষ্টি ভবন। এর ভেতরে আছে চারটি খোলা কক্ষ এবং একটি পাথর ও চুন-সুরকির তৈরি বৃহৎ কূপ। হাম্মামে প্রবেশের একমাত্র পথটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। প্রবেশপথের সঙ্গে সংযুক্ত বর্গাকৃতির কক্ষটি ছিল প্রসাধন কক্ষ। কক্ষের চার পাশের প্রত্যেক দেয়ালে আছে একটি করে কুলুঙ্গি। প্রসাধন কক্ষ থেকে ধনুকাকার পথ দিয়ে সোজা অপর আরেকটি বর্গাকৃতি কক্ষে প্রবেশ করা যায়। কক্ষটি পোশাক বদলানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।

হাম্মামখানার উত্তর-দক্ষিণ কোণে আছে একটি ছোট জলাধার বা ট্যাঙ্ক। এই কক্ষের পূর্বে আছে দুইটি বর্ধিত গম্বুজাকৃতির কক্ষ যা ছিল সম্ভবত মূল গোসলখানা। এই কক্ষে কোনো বড় জানালা নেই। এর বাইরে পূর্ব পাশের লাগোয়া চারটি খোলা কক্ষ সম্ভবত জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জলাধারে পানি ধরে রেখে সেখান থেকে মাটির পাইপের মাধ্যমে ভেতরের গোসলখানার জলাধারে পানি সরবরাহ করা হতো। সম্পূর্ণ হাম্মামখানার মাঝ বরাবর আছে একটি পানি গরম করার চুলি্ল যা মাটির নীচ থেকে একটি টানা পাইপ দ্বারা সংযুক্ত।

তথ্যঋণ : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম