প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে সম্ভব: খেলাফত মজলিস

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৩ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • ৭০৯ বার পড়া হয়েছে
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সংস্কার চায় খেলাফত মজলিস। আজ শনিবার (২২ মার্চ) সকালে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ অবস্থানের কথা জানান দলটির মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।

তিনি বলেছেন, আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে ঐকমত্য পোষণ করেছি। ১০টিতে ঐকমত্য হয়নি, আর ১৫টিতে আংশিকভাবে একমত। আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে করা সম্ভব। এটা অধ্যাদেশ জারি করে করা উচিত। বিদ্যমান সংস্কার নির্বাচনের আগেই সম্ভব।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আরও আলোচনার দরকার আছে মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, দ্বিমতের বিষয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি, উনারা চেষ্টা করেছেন। এক পর্যায়ে এসে আলোচনা ড্র হয়েছে। আরও সময় লাগবে। কিছু বিষয়ে উনারা বলেছেন, ‘বিবেচনা করব’।

তিনি আরও বলেন, আমরাও বলেছি, কিছু বিষয়ে আমরাও বিবেচনা করব। কৌশলগত কিছু বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হলে আমরা আপত্তি করব না।

বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা রয়েছে। এসবের পরিবর্তে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’র কথা সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এই বহুত্ববাদের প্রয়োজন খেলাফত মজলিস দেখছে না জানিয়ে আবদুল কাদের বলেন, সংবিধানে মহান আল্লার প্রতি আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে। বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রই এনাফ; উনারা অনেক যুক্তি দিয়েছিল। আমরা বলেছি গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা থাকলে সমাজে কোনো ধরনের বিভেদ থাকে না; বহুত্ববাদের কোনো প্রয়োজন নাই।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, বহুত্ববাদের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমের চেয়ে বৃহত্তর মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি আমরা। যেখানে দলিতদের জায়গা হবে, থার্ড জেন্ডার, এথনিক মাইনরিটি (জাতিগত সংখ্যালঘু), রিলিজিয়াস মাইনরিটি (ধর্মীয় সংখ্যালঘু) সবার জায়গা হবে। দলিত, থার্ড জেন্ডার থেকে শুরু করে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

সংবিধান পরিবর্তনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না খেলাফত মজলিস।

দলটির মহাসচিব কাদের বলেন, ৪০০ আসনেই নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার প্রস্তাব করেছি। সংসদের মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষে মত দিয়েছি। উচ্চকক্ষে (সিনেটে) সংখ্যানুপাতিকে ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের অনুরোধ করেছি। সংবিধান সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যায়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র উচ্চ আদালতের মতামত নিতে পারে। আমরা গণপরিষদের পক্ষে না।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে একটি বোর্ড থাকা উচিত। ব্যক্তিকে ক্ষমা দেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া উচিত না। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

ইসলাম বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না তার বিধান সংবিধানে থাকতে হবে; এটা সামাজিক, ধর্মীয় স্থিতিশীলতা রাখার জন্য। এখানে ধর্মবিরোধী আইন করা হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার সময় বলতো, ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করা হবে না’। এটা সত্তরে বলছিল, গত নির্বাচনেও বলছিল। এটা তারা বরাবরই বলে, কিন্তু অনুশীলন করে না।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর যারা- আগামী নির্বাচনে তাদের আসার সুযোগ নাই। তাদের বিচার করতে হবে। বিচারের পরে কেউ যদি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন আসতে পারে। এই মুহূর্তে কোনো সুযোগ নাই। অনেকের মতো আমরাও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে রাজি না। কারণ তারা খুন করে মানুষ মারার বিষয়ে ক্ষমা চায়নি।

খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের ৭ সদস্যের দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।

২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে গোটা বিশেক দল তাদের লিখিত মতামত জানিয়েছে। এরপর গেল বৃহস্পতিবার থেকে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে ঐকমত্য কমিশন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে সম্ভব: খেলাফত মজলিস

আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৩ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সংস্কার চায় খেলাফত মজলিস। আজ শনিবার (২২ মার্চ) সকালে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ অবস্থানের কথা জানান দলটির মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।

তিনি বলেছেন, আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে ঐকমত্য পোষণ করেছি। ১০টিতে ঐকমত্য হয়নি, আর ১৫টিতে আংশিকভাবে একমত। আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে করা সম্ভব। এটা অধ্যাদেশ জারি করে করা উচিত। বিদ্যমান সংস্কার নির্বাচনের আগেই সম্ভব।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আরও আলোচনার দরকার আছে মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, দ্বিমতের বিষয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি, উনারা চেষ্টা করেছেন। এক পর্যায়ে এসে আলোচনা ড্র হয়েছে। আরও সময় লাগবে। কিছু বিষয়ে উনারা বলেছেন, ‘বিবেচনা করব’।

তিনি আরও বলেন, আমরাও বলেছি, কিছু বিষয়ে আমরাও বিবেচনা করব। কৌশলগত কিছু বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হলে আমরা আপত্তি করব না।

বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা রয়েছে। এসবের পরিবর্তে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’র কথা সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এই বহুত্ববাদের প্রয়োজন খেলাফত মজলিস দেখছে না জানিয়ে আবদুল কাদের বলেন, সংবিধানে মহান আল্লার প্রতি আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে। বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রই এনাফ; উনারা অনেক যুক্তি দিয়েছিল। আমরা বলেছি গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা থাকলে সমাজে কোনো ধরনের বিভেদ থাকে না; বহুত্ববাদের কোনো প্রয়োজন নাই।

এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, বহুত্ববাদের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমের চেয়ে বৃহত্তর মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি আমরা। যেখানে দলিতদের জায়গা হবে, থার্ড জেন্ডার, এথনিক মাইনরিটি (জাতিগত সংখ্যালঘু), রিলিজিয়াস মাইনরিটি (ধর্মীয় সংখ্যালঘু) সবার জায়গা হবে। দলিত, থার্ড জেন্ডার থেকে শুরু করে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

সংবিধান পরিবর্তনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না খেলাফত মজলিস।

দলটির মহাসচিব কাদের বলেন, ৪০০ আসনেই নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার প্রস্তাব করেছি। সংসদের মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষে মত দিয়েছি। উচ্চকক্ষে (সিনেটে) সংখ্যানুপাতিকে ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের অনুরোধ করেছি। সংবিধান সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যায়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র উচ্চ আদালতের মতামত নিতে পারে। আমরা গণপরিষদের পক্ষে না।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে একটি বোর্ড থাকা উচিত। ব্যক্তিকে ক্ষমা দেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া উচিত না। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

ইসলাম বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না মন্তব্য করে আবদুল কাদের বলেন, ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না তার বিধান সংবিধানে থাকতে হবে; এটা সামাজিক, ধর্মীয় স্থিতিশীলতা রাখার জন্য। এখানে ধর্মবিরোধী আইন করা হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার সময় বলতো, ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করা হবে না’। এটা সত্তরে বলছিল, গত নির্বাচনেও বলছিল। এটা তারা বরাবরই বলে, কিন্তু অনুশীলন করে না।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর যারা- আগামী নির্বাচনে তাদের আসার সুযোগ নাই। তাদের বিচার করতে হবে। বিচারের পরে কেউ যদি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন আসতে পারে। এই মুহূর্তে কোনো সুযোগ নাই। অনেকের মতো আমরাও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে রাজি না। কারণ তারা খুন করে মানুষ মারার বিষয়ে ক্ষমা চায়নি।

খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের ৭ সদস্যের দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।

২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে গোটা বিশেক দল তাদের লিখিত মতামত জানিয়েছে। এরপর গেল বৃহস্পতিবার থেকে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে ঐকমত্য কমিশন।