শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গায় মারধর করে নগদ টাকা ছিনতাই Logo ধর্ষকদের  কলিজা ছিঁড়ে চৌরাস্তার মোড়ে টাঙানো হবে: সাফফাতুল ইসলাম Logo ধর্ষণ ও নারী সহিংসতার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ার সমাবেশ ও মশাল-মোমবাতি প্রজ্জলন Logo শহিদ আবু সাইদকে নিয়ে কটুক্তি করায় বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo নারী তুমি সর্বগুণান্বিতা, নির্ভীক Logo জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত Logo কচুয়ায় স্থানীয় সরকার দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা সভা Logo লামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির শপথ অনুষ্ঠান Logo পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo অদ্য অপরাহ্ন থেকে সাজেক পর্যটক ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত

অভিভাবকদের প্রতি কোরআনের নির্দেশ

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭০৫ বার পড়া হয়েছে
প্রতিটি মানুষ তার পরিবার-পরিজনকে ভালো রাখার জন্য প্রাণপন চষ্টা করে। তাদের জীবনকে আনন্দদায়ক করতে কত ত্যাগ করে। জীবনের মূল্যবান সময়, সম্পদ সব ব্যয় করে মানুষ তার প্রিয়জনদের একটি সুখী ও নিরাপদ জীবন উপহার দিতে চয়। মানুষ তার প্রিয়জনদের দুনিয়াবী শান্তি সফলতার জন্য যেমন চিন্তিত হয়, গুরুত্ব দেয়, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তাদের আখেরাতের জীবনের নিরাপত্তাকে। কারণ দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখেরাতের জীবন অধীক গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী আর আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। তাই প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব তার ও তার পরিবারের আখেরাতের জীবন সাজাতে সচষ্টে হওয়া। এমন কোনো কাজে লপ্তি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া, যা তাদের পরকালকে ধ্বংস করে দেয়। তাদের জাহান্নামের উপযুক্ত করে তোলে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হূদয় কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না, আর তারা তাই করে, তাদেরকে যা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ০৬)

অর্থাৎ কোনো কিছু দিয়েই সেই ফেরেশতাদের থামানো সম্ভব হবে না। যতক্ষণ আল্লাহর নির্দেশ না হবে। যদি কেউ সে কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে ও পরিবার-পরিজনদের বঁাচাতে চায়, তাহলে তাদের উচিত, একমাত্র মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজেদের পারিচালিত করা। আল্লাহর নাফরমানি থেকে নিজেদের বিরত রাখা। পরিবার-পরিজনের মায়ায় পড়ে তাদের আল্লাহর নাফরমানিতে সহযোগিতা না করা। কারণ দুনিয়াতে পরিবার-পরিজনের মন রাখতে গিয়ে তাদের অন্যায় আবদার রক্ষা করা, গুনাহের সুযোগ দেওয়া, অর্থায়ন করা সাময়িক ভাবে তাদের উপকার মনে হলেও, বাস্তবে এগুলোর মাধ্যমে তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। যা একজন সুস্থ মস্ত্রিষ্কের অভিভাবক কখনোই করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদের প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদের পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আজাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)

এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে মুআজ (রা.) বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টে দেওয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে এক মুহূর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, আগুন তাদের চামড়াকে এক দিনে সত্তর হাজারবার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, সঙ্গে সঙ্গে সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পূর্বের মতো হয়ে যাবে।’ (ইবনে কাসির :  ১/৫১৪)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)

জাহান্নামের সর্বনম্নি শাস্তি কতটা ভয়ংকর হবে, তার বর্ণনা পবিত্র হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। নোমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তিকে জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি প্রদান করা হবে তার পায়ের তালুর নিচে দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। তাতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৪)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন; এবং প্রিয়জনদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যদি সত্যিই আমাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসি, তবে আমাদের উচিত, সব ধরনের গুনাহ ও অনৈতিক কাজ থেকে তাদের বিরত রাখার সর্বোচ্চ চষ্টো করা। নিজেরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হতে বর্ণিত: যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল; সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৩৮)

মহান আল্লাহ সবাইকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় মারধর করে নগদ টাকা ছিনতাই

অভিভাবকদের প্রতি কোরআনের নির্দেশ

আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রতিটি মানুষ তার পরিবার-পরিজনকে ভালো রাখার জন্য প্রাণপন চষ্টা করে। তাদের জীবনকে আনন্দদায়ক করতে কত ত্যাগ করে। জীবনের মূল্যবান সময়, সম্পদ সব ব্যয় করে মানুষ তার প্রিয়জনদের একটি সুখী ও নিরাপদ জীবন উপহার দিতে চয়। মানুষ তার প্রিয়জনদের দুনিয়াবী শান্তি সফলতার জন্য যেমন চিন্তিত হয়, গুরুত্ব দেয়, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তাদের আখেরাতের জীবনের নিরাপত্তাকে। কারণ দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখেরাতের জীবন অধীক গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী আর আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। তাই প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব তার ও তার পরিবারের আখেরাতের জীবন সাজাতে সচষ্টে হওয়া। এমন কোনো কাজে লপ্তি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া, যা তাদের পরকালকে ধ্বংস করে দেয়। তাদের জাহান্নামের উপযুক্ত করে তোলে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হূদয় কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না, আর তারা তাই করে, তাদেরকে যা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ০৬)

অর্থাৎ কোনো কিছু দিয়েই সেই ফেরেশতাদের থামানো সম্ভব হবে না। যতক্ষণ আল্লাহর নির্দেশ না হবে। যদি কেউ সে কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে ও পরিবার-পরিজনদের বঁাচাতে চায়, তাহলে তাদের উচিত, একমাত্র মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজেদের পারিচালিত করা। আল্লাহর নাফরমানি থেকে নিজেদের বিরত রাখা। পরিবার-পরিজনের মায়ায় পড়ে তাদের আল্লাহর নাফরমানিতে সহযোগিতা না করা। কারণ দুনিয়াতে পরিবার-পরিজনের মন রাখতে গিয়ে তাদের অন্যায় আবদার রক্ষা করা, গুনাহের সুযোগ দেওয়া, অর্থায়ন করা সাময়িক ভাবে তাদের উপকার মনে হলেও, বাস্তবে এগুলোর মাধ্যমে তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। যা একজন সুস্থ মস্ত্রিষ্কের অভিভাবক কখনোই করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদের প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদের পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আজাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)

এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে মুআজ (রা.) বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টে দেওয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে এক মুহূর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, আগুন তাদের চামড়াকে এক দিনে সত্তর হাজারবার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, সঙ্গে সঙ্গে সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পূর্বের মতো হয়ে যাবে।’ (ইবনে কাসির :  ১/৫১৪)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)

জাহান্নামের সর্বনম্নি শাস্তি কতটা ভয়ংকর হবে, তার বর্ণনা পবিত্র হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। নোমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তিকে জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি প্রদান করা হবে তার পায়ের তালুর নিচে দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। তাতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৪)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন; এবং প্রিয়জনদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যদি সত্যিই আমাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসি, তবে আমাদের উচিত, সব ধরনের গুনাহ ও অনৈতিক কাজ থেকে তাদের বিরত রাখার সর্বোচ্চ চষ্টো করা। নিজেরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হতে বর্ণিত: যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল; সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৩৮)

মহান আল্লাহ সবাইকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।