শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের মাতৃভূমি থেকে বিমুখ করতে পারবে না

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৪:০৬:১০ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৩৮ বার পড়া হয়েছে
আয়েশা মুহাম্মদ আবু সুলতান। ৮৬ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনি নারী। তীব্র শীতের কারণে তিনি তাঁবুর এক কোণায় বসে কাঁপছেন। তাঁর ফেটে যাওয়া ত্বকে দীর্ঘ দুর্ভোগের প্রতিফলন স্পষ্ট। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয় নাকবার সাক্ষী। এবার প্রত্যক্ষ করেছেন গাজার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। ভাগ্যাহত ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সংগ্রামের সাক্ষী এই নারীর কাছে আমি গিয়েছিলাম। বলেছিলাম আপনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিন। আমি ভেবেছিলাম, তিনি সংকটময় গাজায় ফিলিস্তিনিদের জনদুর্ভোগ নিয়ে অভিযোগ করবেন। কিন্তু আমি একজন বৃদ্ধ ফ্যাকাসে নারীর দেহে বীরঙ্গনাকে খুঁজে পেলাম।

তিনি বললেন, আমার ছেলে! আমরা ১৯৪৮ সালে বিপর্যয়কর নাকবার শিকার হয়েছিলাম। বিগত বছরগুলোতে আমরা দূরে সরে গিয়েছিলাম, আমাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবশেষে যা ঘটল তুফানে আকসা, তা সবকিছু উল্টে দিয়েছে। তুমি এটা ভেব না যে, আমরা বিনা মূল্যে (কোনো ত্যাগ ছাড়া) ঘরে ফিরে যেতে পারব অথবা আন্তর্জাতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। যারা এতে বিশ্বাস করে তারা বোকা।
১৯৪৮ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইহুদিরা আয়েশার পরিবারকে হামামা গ্রাম থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। তাঁর পরিবার উত্তর গাজার জাবালিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। আর তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। পরিবারটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালাতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত জাবালিয়ায় আশ্রয় নেয়। আয়েশা বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা জাবালিয়া ফিরে এলাম এবং শরণার্থী শিবিরে বসবাস শুরু করলাম। শুরুতে আমরা তাবুতে বসবাস করতাম। কেননা আমরা ভাবতাম, কিছু দিনের মধ্যে আমরা আমাদের গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারব। মিথ্যা আশ্বাসের জন্য আরব নেতাদের ও জাতিসংঘের প্রতি ধন্যবাদ। তারা এখনো আমাদেরকে অপেক্ষায় রেখেছে।

১৯৪৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়েশা কয়েক যুদ্ধ ও অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সে হতাশ হয়েছে। তাঁর ভাষায়—কোনো কিছুই আমাদের অনুকূলে ছিল না। প্রতিটি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান আমাদের গভীর ক্ষতকে আরো গভীর করেছে, নতুন ক্ষত যুক্ত করেছে। আমাদের ঘরে ফেরার স্বপ্ন ম্লান হয়েছে। তবে আমরা আশা ত্যাগ করিনি।
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে আয়েশা ও তাঁর পরিবার সাতবার বাস্তুচ্যূত হয়েছে। পূর্ববর্তী স্থল অভিযানের সময় আমরা জাবালিয়ার ভেতরে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা বাড়ি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলাম। কেননা আমরা জানি ছেড়ে যাওয়া মানে আর কখনো ফিরে না আসা।

অতীতের যে কোনো হামলার চেয়ে এবারের হামলা নৃশংস। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। আমরা স্থানান্তরের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কিন্তু তারা যখন আশ্রয় কেন্দ্র, হাসপাতাল ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় হামলা শুরু করল, তখন আমরা জাবালিয়া ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা শুরু করলাম। অভিযানের ৪৩তম দিন আমাদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় ইসরাইলি বুলডোজার আসার পর আমরা বাড়ি ছেড়ে যাই। আমরা বন্দুকের মুখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। সাথে কোনো কিছু আনার সুযোগ পাইনি। তিনদিন রাস্তায় থাকার পর এই তাবুতে আশ্রয় পেয়েছি।

তাবুতে আয়েশা নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন হন। ৮৬ বয়সী আয়েশা রক্তচাপসহ নানা ধরনের বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। তাঁর বিশেষ টয়লেট সুবিধা, আরামদায়ক বিছানা ও গরম কাপড়ের প্রয়োজন। এর কোনোটিই এখানে নেই। তিনি প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি এবং কোনো কিছু এখানে প্রবেশ করতেও দেওয়া হয় না। এত দুর্ভোগের পরও আয়েশার প্রত্যাশা জাবালিয়া নয়, তিনি হামামাতে ফিরে যাবেন। যেখান থেকে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা তাঁকে বের করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা ইসরাইলি বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে ভীত নয়। আমরা যদি এখানে থাকি, তবে এসব কিছুই কিছুই না। আর আমরা সেটাই করব। এই ভূমির সঙ্গে শিকড় ও সংযোগহীন লোকেরা এখান থেকে তাদেরকে অপসারণ করতে পারবে না যারা হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূমিতে বসবাস করছে, যাদের শিকড় এখানে প্রোথিত। যদিও তারা একটি বানোয়াট ইতিহাস তৈরি করে এবং সমগ্র পৃথিবীকে প্রতারিত করে। ইহুদিবাদীরা শিগড়ির অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমার ছেলে, আজ আমরা ১৯৪৮ সালে দখল করা আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি।

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাবানুবাদ

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের মাতৃভূমি থেকে বিমুখ করতে পারবে না

আপডেট সময় : ০৪:০৬:১০ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আয়েশা মুহাম্মদ আবু সুলতান। ৮৬ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনি নারী। তীব্র শীতের কারণে তিনি তাঁবুর এক কোণায় বসে কাঁপছেন। তাঁর ফেটে যাওয়া ত্বকে দীর্ঘ দুর্ভোগের প্রতিফলন স্পষ্ট। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয় নাকবার সাক্ষী। এবার প্রত্যক্ষ করেছেন গাজার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। ভাগ্যাহত ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সংগ্রামের সাক্ষী এই নারীর কাছে আমি গিয়েছিলাম। বলেছিলাম আপনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিন। আমি ভেবেছিলাম, তিনি সংকটময় গাজায় ফিলিস্তিনিদের জনদুর্ভোগ নিয়ে অভিযোগ করবেন। কিন্তু আমি একজন বৃদ্ধ ফ্যাকাসে নারীর দেহে বীরঙ্গনাকে খুঁজে পেলাম।

তিনি বললেন, আমার ছেলে! আমরা ১৯৪৮ সালে বিপর্যয়কর নাকবার শিকার হয়েছিলাম। বিগত বছরগুলোতে আমরা দূরে সরে গিয়েছিলাম, আমাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবশেষে যা ঘটল তুফানে আকসা, তা সবকিছু উল্টে দিয়েছে। তুমি এটা ভেব না যে, আমরা বিনা মূল্যে (কোনো ত্যাগ ছাড়া) ঘরে ফিরে যেতে পারব অথবা আন্তর্জাতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। যারা এতে বিশ্বাস করে তারা বোকা।
১৯৪৮ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইহুদিরা আয়েশার পরিবারকে হামামা গ্রাম থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। তাঁর পরিবার উত্তর গাজার জাবালিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। আর তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। পরিবারটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালাতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত জাবালিয়ায় আশ্রয় নেয়। আয়েশা বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা জাবালিয়া ফিরে এলাম এবং শরণার্থী শিবিরে বসবাস শুরু করলাম। শুরুতে আমরা তাবুতে বসবাস করতাম। কেননা আমরা ভাবতাম, কিছু দিনের মধ্যে আমরা আমাদের গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারব। মিথ্যা আশ্বাসের জন্য আরব নেতাদের ও জাতিসংঘের প্রতি ধন্যবাদ। তারা এখনো আমাদেরকে অপেক্ষায় রেখেছে।

১৯৪৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়েশা কয়েক যুদ্ধ ও অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সে হতাশ হয়েছে। তাঁর ভাষায়—কোনো কিছুই আমাদের অনুকূলে ছিল না। প্রতিটি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান আমাদের গভীর ক্ষতকে আরো গভীর করেছে, নতুন ক্ষত যুক্ত করেছে। আমাদের ঘরে ফেরার স্বপ্ন ম্লান হয়েছে। তবে আমরা আশা ত্যাগ করিনি।
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে আয়েশা ও তাঁর পরিবার সাতবার বাস্তুচ্যূত হয়েছে। পূর্ববর্তী স্থল অভিযানের সময় আমরা জাবালিয়ার ভেতরে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা বাড়ি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলাম। কেননা আমরা জানি ছেড়ে যাওয়া মানে আর কখনো ফিরে না আসা।

অতীতের যে কোনো হামলার চেয়ে এবারের হামলা নৃশংস। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। আমরা স্থানান্তরের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কিন্তু তারা যখন আশ্রয় কেন্দ্র, হাসপাতাল ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় হামলা শুরু করল, তখন আমরা জাবালিয়া ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা শুরু করলাম। অভিযানের ৪৩তম দিন আমাদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় ইসরাইলি বুলডোজার আসার পর আমরা বাড়ি ছেড়ে যাই। আমরা বন্দুকের মুখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। সাথে কোনো কিছু আনার সুযোগ পাইনি। তিনদিন রাস্তায় থাকার পর এই তাবুতে আশ্রয় পেয়েছি।

তাবুতে আয়েশা নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন হন। ৮৬ বয়সী আয়েশা রক্তচাপসহ নানা ধরনের বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। তাঁর বিশেষ টয়লেট সুবিধা, আরামদায়ক বিছানা ও গরম কাপড়ের প্রয়োজন। এর কোনোটিই এখানে নেই। তিনি প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি এবং কোনো কিছু এখানে প্রবেশ করতেও দেওয়া হয় না। এত দুর্ভোগের পরও আয়েশার প্রত্যাশা জাবালিয়া নয়, তিনি হামামাতে ফিরে যাবেন। যেখান থেকে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা তাঁকে বের করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা ইসরাইলি বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে ভীত নয়। আমরা যদি এখানে থাকি, তবে এসব কিছুই কিছুই না। আর আমরা সেটাই করব। এই ভূমির সঙ্গে শিকড় ও সংযোগহীন লোকেরা এখান থেকে তাদেরকে অপসারণ করতে পারবে না যারা হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূমিতে বসবাস করছে, যাদের শিকড় এখানে প্রোথিত। যদিও তারা একটি বানোয়াট ইতিহাস তৈরি করে এবং সমগ্র পৃথিবীকে প্রতারিত করে। ইহুদিবাদীরা শিগড়ির অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমার ছেলে, আজ আমরা ১৯৪৮ সালে দখল করা আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি।

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাবানুবাদ