শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইসলাম যেখানে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১১:১০:০১ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৩৫ বার পড়া হয়েছে

ইসলাম যেভাবে নম্রতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, উদারতা, স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয়, সহযোগিতা, সহমর্মিতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে, তেমনি প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশনাও প্রদান করেছে। ইসলামে সাধারণত দ্বিনের স্বার্থে এবং নিরাপত্তার সাথে কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশনা আছে। ব্যক্তি স্বার্থে কঠোরতা অবলম্বনের কোনো বিষয় ইসলামে নেই।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ব্যক্তি স্বার্থে কারো থেকে প্রতিশোধ নেননি ও নিতে বলেননি; বরং ক্ষমা ও উদারতার শিক্ষা দিয়েছেন।

১. পরিবারকে দ্বিনের পথে আনতে কঠোরতা: পরিবার তথা স্ত্রী-সন্তানকে দ্বীনের পথে আনতে প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। যেমন: সন্তানের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স থেকে নামাজে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করতে হবে। ১০ বছর বয়সেও নামাজে অভ্যস্ত না হলে শাসনের ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে।

আবু সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনে মাবাদ জুহানি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামাজ শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়সে তার জন্য তাকে প্রহার করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪০৭; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪, দারেমি, হাদিস : ১৪৩১)

এভাবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে তাদের নরমভাবে বোঝাতে হবে। তাতে পরিবর্তন না হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দিতে হবে, যেন পৃথকতার দরুন সে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে। তাতেও সংশোধন না হলে কঠোরতা অবলম্বনের অবকাশ আছে।

আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪)

২. অন্যয় প্রতিহত করতে কঠোরতা: রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে যেসব কারণে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার অন্যতম একটি হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

কাজেই নিজ সাধ্য ও সার্মথ্যের আলোকে অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করা এবং তা নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের অপরিহার্য দাবি।

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, তবে কথা দিয়ে; তাও না পারলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (মুসলিম, হাদিস, ৭৪)

৩. অপরধের শাস্তি প্রদানে কঠোরতা: বিচারিক আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের গড়িমশি করা বা দয়াপরবশ হয়ে শাস্তি ছেড়ে দেওয়া কিংবা হ্রাস করার কোন অবকাশ ইসলামে নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে এক শ বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমানদার হও; আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)

৪. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরতা: জান ও মালের নিরাপত্তার বিষয়টি ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আল্লাহর দেওয়া অধিকার। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিহত হলে শহিদ। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মারা গেলে মহান আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দেবেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৮০; মুসলিম, হাদিস : ১৪১)

আবার যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে তাদের ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
তবে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে না, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না।

আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

ইসলাম যেখানে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়

আপডেট সময় : ১১:১০:০১ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসলাম যেভাবে নম্রতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, উদারতা, স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয়, সহযোগিতা, সহমর্মিতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে, তেমনি প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশনাও প্রদান করেছে। ইসলামে সাধারণত দ্বিনের স্বার্থে এবং নিরাপত্তার সাথে কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশনা আছে। ব্যক্তি স্বার্থে কঠোরতা অবলম্বনের কোনো বিষয় ইসলামে নেই।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ব্যক্তি স্বার্থে কারো থেকে প্রতিশোধ নেননি ও নিতে বলেননি; বরং ক্ষমা ও উদারতার শিক্ষা দিয়েছেন।

১. পরিবারকে দ্বিনের পথে আনতে কঠোরতা: পরিবার তথা স্ত্রী-সন্তানকে দ্বীনের পথে আনতে প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। যেমন: সন্তানের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স থেকে নামাজে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করতে হবে। ১০ বছর বয়সেও নামাজে অভ্যস্ত না হলে শাসনের ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে।

আবু সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনে মাবাদ জুহানি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামাজ শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়সে তার জন্য তাকে প্রহার করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪০৭; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪, দারেমি, হাদিস : ১৪৩১)

এভাবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে তাদের নরমভাবে বোঝাতে হবে। তাতে পরিবর্তন না হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দিতে হবে, যেন পৃথকতার দরুন সে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে। তাতেও সংশোধন না হলে কঠোরতা অবলম্বনের অবকাশ আছে।

আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪)

২. অন্যয় প্রতিহত করতে কঠোরতা: রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে যেসব কারণে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার অন্যতম একটি হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

কাজেই নিজ সাধ্য ও সার্মথ্যের আলোকে অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করা এবং তা নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের অপরিহার্য দাবি।

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, তবে কথা দিয়ে; তাও না পারলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (মুসলিম, হাদিস, ৭৪)

৩. অপরধের শাস্তি প্রদানে কঠোরতা: বিচারিক আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের গড়িমশি করা বা দয়াপরবশ হয়ে শাস্তি ছেড়ে দেওয়া কিংবা হ্রাস করার কোন অবকাশ ইসলামে নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে এক শ বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমানদার হও; আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)

৪. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরতা: জান ও মালের নিরাপত্তার বিষয়টি ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আল্লাহর দেওয়া অধিকার। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিহত হলে শহিদ। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মারা গেলে মহান আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দেবেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৮০; মুসলিম, হাদিস : ১৪১)

আবার যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে তাদের ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
তবে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে না, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না।

আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।