শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

কেয়ামতের দিন যাদের শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৯:০১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৩৯ বার পড়া হয়েছে

আখেরাত হলো মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য। যেখানে তার ইহজীবনের প্রতিটি কাজের বিচার হবে। ভালো কাজের পুরস্কার জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত আর মন্দ কাজের শাস্তি জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন। এই বিশ্বাস মানুষকে সত্ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাপ থেকে বিরত রাখে। আখেরাতের এই পুরস্কার ও শাস্তি আমাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দেয় এবং নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়তা করে।

তাই এই প্রবন্ধে কেয়ামতের দিন মন্দ কাজের শাস্তির নমুনা হিসেবে কয়েকটি হাদিসের ভাষ্য তুলে ধরা হলো, যা পাঠককে মন্দ কাজের পরিণতি সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে।

মিথ্যা অপবাদ ও সম্পদ আত্মসাত্রে ভয়াবহ শাস্তি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার নগদ অর্থ নেই, কোনো সম্পদও নেই। রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাত্ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, অন্য ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সত্ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)

যাদের নাড়ি-ভুঁড়ি জাহান্নামে জ্বলবে

হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উপরে (মিরাজে বা স্বপ্নে) জাহান্নামকে হাজির করা হয়। তাতে আমি বনু ইসরাইলের একজন মহিলাকে দেখলাম যাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। তাকে খেতেও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনে বিচরণ করে পোকা-মাকড় ইত্যাদি খেতে পারে। অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। তাছাড়া আমি সেখানে আমর ইবনু আমের আল-খুজাঈকে দেখলাম। সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে নিজের নাড়ি-ভুঁড়ি টেনে চলেছে। এ ব্যক্তিই সর্বপ্রথম দেব-দেবির নামে ষাঁড় ছেড়ে দেওয়ার কুপ্রথা চালু করেছিল’। (মুসলিম, হাদিস : ৯০১)

বে-আমল বক্তার চূড়ান্ত শাস্তি

নিজে সত্কাজে অনুগত না থেকে অন্যদের সত্কাজে আহ্বান করা এবং অন্যায় থেকে বিরত না থেকে নিষেধ করা এক বড় অপরাধ, যার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ মর্মে উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যাতে আগুনে পুড়ে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং গাধা যেমন গম পেষার সময় ঘানির চারপাশে ঘুরতে থাকে, অনুরূপভাবে সেও তার নাড়ি-ভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে। এ সময় জাহান্নামবাসীরা সেখানে জমা হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার ব্যাপার কি? তুমি না আমাদের সত্কাজের আদেশ করতে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করতে? জবাবে সে বলবে, আমি তোমাদের সত্কাজের আদেশ করতাম। কিন্তু আমি নিজে তা করতাম না। আর তোমাদেরকে অন্যায় কাজে নিষেধ করতাম। কিন্তু আমি নিজে তা করতাম’। (বুখারি, হাদিস : ৩২৬৭)

চার শ্রেণীর অপরাধের ভয়াবহ শাস্তির কথা

সামুরাহ বিন জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। একদিন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আজ কেউ স্বপ্ন দেখেছ কি? কেননা আমাদের কেউ এরূপ দেখে থাকলে তা বর্ণনা করত এবং তিনি আল্লাহ যা চাইতেন সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে দিতেন। যথারীতি একদিন (ফজর সালাত শেষে) তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ আজ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, কিন্তু আমি দেখেছি যে, দুজন ব্যক্তি আমার নিকটে আসল। অতঃপর তারা আমাকে পবিত্র ভূমির (শাম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখলাম (১) একজন ব্যক্তি বসে আছে এবং অপর ব্যক্তি একমুখ বাঁকানো ধারালো লোহার সাঁড়াশী হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সে উক্ত বসা ব্যক্তির গালের এক পাশ দিয়ে ওটা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে। অতঃপর গালের অপর পার্শ্ব দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে গালের প্রথমাংশটি ভাল হয়ে যায়। তখন আবার সে তাই করে (এই ভাবে একবার এগাল একবার ওগাল চিরতে থাকে)। আমি বললাম এটা কি? তারা দুজন বলল, সামনে চল। (২) অতঃপর আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছলাম, যে চিত্ হয়ে শুয়ে আছে। অপর ব্যক্তি একটা ভারি পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঐ পাথর ছুঁড়ে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছে। অতঃপর পাথরটি দূরে গড়িয়ে যায়। তখন লোকটি পাথরটি কুড়িয়ে আনতে যায়। ইতিমধ্যে তার মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায়। তখন পুনরায় সে পাথর ছুঁড়ে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল। (৩) আমরা সামনের দিকে চললাম। অবশেষে একটা গর্তের নিকটে এলাম। যা ছিল বড় একটা চুলার মত। যার উপরাংশ সংকীর্ণ এবং নীচের অংশ প্রশস্ত। যার তলদেশে আগুন জ্বলছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা আছে, তারাও উপরের দিকে উঠে আসত এবং তারা গর্ত থেকে বাইরে ছিটকে পড়ার উপক্রম হ’ত। আবার যখন আগুন নীচে নামত, তখন তারাও নীচে নেমে যেত। এর মধ্যে ছিল একদল উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল। (৪) অতঃপর আমরা অগ্রসর হয়ে একটা রক্তের নদীর কিনারে এসে পৌঁছলাম। দেখলাম নদীর মাঝখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে ও নদীর কিনারে একজন দাঁড়িয়ে। যার সামনে রয়েছে একটি পাথরের খন্ড। অতঃপর নদীর মধ্যের লোকটি যখনই তীরে ওঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে, তখনই তীরে দাঁড়ানো লোকটি তার চেহারা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ফলে লোকটি আবার সেখানে ফিরে যাচ্ছে, যেখানে সে পূর্বে ছিল। এভাবে যখনই লোকটি তীরের দিকে আসার চেষ্টা করে, তখনই কিনারে দাঁড়ানো লোকটি তার মুখের উপর পাথর মেরে তাকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল। আমি বললাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল।

… অতঃপর তারা আমাকে ব্যাখ্যা দিল যে, (১) প্রথম ব্যক্তি যাকে সাঁড়াশী দিয়ে গাল চেরা হচ্ছিল, ওটা হলো মিথ্যাবাদী। তার কাছ থেকে মিথ্যা রটনা করা হত। এমনকি তা সর্বত্র পৌঁছে যেত। ফলে তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে, যা তুমি দেখেছ। (২) যে ব্যক্তির মাথা পাথর ছুঁড়ে চূর্ণ করা হচ্ছে, ওটা হল সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন। অতঃপর সে কোরআন থেকে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও সে অনুযায়ী আমল করত না। অতএব তার সাথে কেয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে, যা তুমি দেখেছ। (৩) আগুনের চুলার গর্তে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হল জেনাকার। আর (৪) রক্তের নদীর মধ্যে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হ’ল সুদখোর’। … আর আমি হলাম জিবরিল এবং ইনি হ’লেন মিকাঈল’।
(বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

কেয়ামতের দিন যাদের শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ

আপডেট সময় : ০৯:০১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

আখেরাত হলো মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য। যেখানে তার ইহজীবনের প্রতিটি কাজের বিচার হবে। ভালো কাজের পুরস্কার জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত আর মন্দ কাজের শাস্তি জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন। এই বিশ্বাস মানুষকে সত্ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাপ থেকে বিরত রাখে। আখেরাতের এই পুরস্কার ও শাস্তি আমাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দেয় এবং নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়তা করে।

তাই এই প্রবন্ধে কেয়ামতের দিন মন্দ কাজের শাস্তির নমুনা হিসেবে কয়েকটি হাদিসের ভাষ্য তুলে ধরা হলো, যা পাঠককে মন্দ কাজের পরিণতি সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে।

মিথ্যা অপবাদ ও সম্পদ আত্মসাত্রে ভয়াবহ শাস্তি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার নগদ অর্থ নেই, কোনো সম্পদও নেই। রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাত্ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, অন্য ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সত্ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)

যাদের নাড়ি-ভুঁড়ি জাহান্নামে জ্বলবে

হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উপরে (মিরাজে বা স্বপ্নে) জাহান্নামকে হাজির করা হয়। তাতে আমি বনু ইসরাইলের একজন মহিলাকে দেখলাম যাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। তাকে খেতেও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনে বিচরণ করে পোকা-মাকড় ইত্যাদি খেতে পারে। অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। তাছাড়া আমি সেখানে আমর ইবনু আমের আল-খুজাঈকে দেখলাম। সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে নিজের নাড়ি-ভুঁড়ি টেনে চলেছে। এ ব্যক্তিই সর্বপ্রথম দেব-দেবির নামে ষাঁড় ছেড়ে দেওয়ার কুপ্রথা চালু করেছিল’। (মুসলিম, হাদিস : ৯০১)

বে-আমল বক্তার চূড়ান্ত শাস্তি

নিজে সত্কাজে অনুগত না থেকে অন্যদের সত্কাজে আহ্বান করা এবং অন্যায় থেকে বিরত না থেকে নিষেধ করা এক বড় অপরাধ, যার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ মর্মে উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যাতে আগুনে পুড়ে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং গাধা যেমন গম পেষার সময় ঘানির চারপাশে ঘুরতে থাকে, অনুরূপভাবে সেও তার নাড়ি-ভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে। এ সময় জাহান্নামবাসীরা সেখানে জমা হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার ব্যাপার কি? তুমি না আমাদের সত্কাজের আদেশ করতে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করতে? জবাবে সে বলবে, আমি তোমাদের সত্কাজের আদেশ করতাম। কিন্তু আমি নিজে তা করতাম না। আর তোমাদেরকে অন্যায় কাজে নিষেধ করতাম। কিন্তু আমি নিজে তা করতাম’। (বুখারি, হাদিস : ৩২৬৭)

চার শ্রেণীর অপরাধের ভয়াবহ শাস্তির কথা

সামুরাহ বিন জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। একদিন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আজ কেউ স্বপ্ন দেখেছ কি? কেননা আমাদের কেউ এরূপ দেখে থাকলে তা বর্ণনা করত এবং তিনি আল্লাহ যা চাইতেন সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে দিতেন। যথারীতি একদিন (ফজর সালাত শেষে) তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ আজ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, কিন্তু আমি দেখেছি যে, দুজন ব্যক্তি আমার নিকটে আসল। অতঃপর তারা আমাকে পবিত্র ভূমির (শাম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখলাম (১) একজন ব্যক্তি বসে আছে এবং অপর ব্যক্তি একমুখ বাঁকানো ধারালো লোহার সাঁড়াশী হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সে উক্ত বসা ব্যক্তির গালের এক পাশ দিয়ে ওটা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে। অতঃপর গালের অপর পার্শ্ব দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে গালের প্রথমাংশটি ভাল হয়ে যায়। তখন আবার সে তাই করে (এই ভাবে একবার এগাল একবার ওগাল চিরতে থাকে)। আমি বললাম এটা কি? তারা দুজন বলল, সামনে চল। (২) অতঃপর আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছলাম, যে চিত্ হয়ে শুয়ে আছে। অপর ব্যক্তি একটা ভারি পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঐ পাথর ছুঁড়ে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছে। অতঃপর পাথরটি দূরে গড়িয়ে যায়। তখন লোকটি পাথরটি কুড়িয়ে আনতে যায়। ইতিমধ্যে তার মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায়। তখন পুনরায় সে পাথর ছুঁড়ে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল। (৩) আমরা সামনের দিকে চললাম। অবশেষে একটা গর্তের নিকটে এলাম। যা ছিল বড় একটা চুলার মত। যার উপরাংশ সংকীর্ণ এবং নীচের অংশ প্রশস্ত। যার তলদেশে আগুন জ্বলছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা আছে, তারাও উপরের দিকে উঠে আসত এবং তারা গর্ত থেকে বাইরে ছিটকে পড়ার উপক্রম হ’ত। আবার যখন আগুন নীচে নামত, তখন তারাও নীচে নেমে যেত। এর মধ্যে ছিল একদল উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল। (৪) অতঃপর আমরা অগ্রসর হয়ে একটা রক্তের নদীর কিনারে এসে পৌঁছলাম। দেখলাম নদীর মাঝখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে ও নদীর কিনারে একজন দাঁড়িয়ে। যার সামনে রয়েছে একটি পাথরের খন্ড। অতঃপর নদীর মধ্যের লোকটি যখনই তীরে ওঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে, তখনই তীরে দাঁড়ানো লোকটি তার চেহারা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ফলে লোকটি আবার সেখানে ফিরে যাচ্ছে, যেখানে সে পূর্বে ছিল। এভাবে যখনই লোকটি তীরের দিকে আসার চেষ্টা করে, তখনই কিনারে দাঁড়ানো লোকটি তার মুখের উপর পাথর মেরে তাকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল। আমি বললাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল।

… অতঃপর তারা আমাকে ব্যাখ্যা দিল যে, (১) প্রথম ব্যক্তি যাকে সাঁড়াশী দিয়ে গাল চেরা হচ্ছিল, ওটা হলো মিথ্যাবাদী। তার কাছ থেকে মিথ্যা রটনা করা হত। এমনকি তা সর্বত্র পৌঁছে যেত। ফলে তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে, যা তুমি দেখেছ। (২) যে ব্যক্তির মাথা পাথর ছুঁড়ে চূর্ণ করা হচ্ছে, ওটা হল সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন। অতঃপর সে কোরআন থেকে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও সে অনুযায়ী আমল করত না। অতএব তার সাথে কেয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে, যা তুমি দেখেছ। (৩) আগুনের চুলার গর্তে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হল জেনাকার। আর (৪) রক্তের নদীর মধ্যে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হ’ল সুদখোর’। … আর আমি হলাম জিবরিল এবং ইনি হ’লেন মিকাঈল’।
(বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)