শুক্রবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া Logo জাতীয় ছাত্রশক্তি জাবি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা Logo জাবিতে ইলিয়াস ও পিনাকীর কুশপুত্তলিকা দাহন Logo পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ Logo সাতক্ষীরা-কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মদ ও ঔষধসহ আড়াই লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর ভূঁইয়ার ঘাট ডিঙ্গি মাঝি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo টেকনাফে বিজিবির অভিযানে সাগর পথে মানব পাচারকালে দুই দালালসহ ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার Logo দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে: তারেক রহমান Logo রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই কিয়েভের : জেলেনস্কি

মহানবী (সা.) যাকে একাধিক ভাষা শিখতে বলেছিলেন

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:০৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭৫৩ বার পড়া হয়েছে

নবীজি (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম একজন মেধাবী সাহাবি ছিলেন যায়েদ বিন সাবিত (রা.)। তিনি বর্ণাঢ্য জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সব খিদমত করেছেন। তিনি ছিলেন নবীজি (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া ওহির লেখক, কিরাত ও ফারায়েজ শাস্ত্রের ইমাম; কোরআন সংকলনকারীদের প্রধান; মদিনার প্রধান মুফতি ও বিচারপতি। নবীজি (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তাঁর বয়স ১১ বছর। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই কোরআন পড়া শুরু করেন। তাঁর মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখর। রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় গেলে লোকজন তাঁকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যান এবং বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ও বনু নাজ্জার গোত্রের বালক। ও আপনার ওপর নাজিল হওয়া ১৭টি সুরা হিফজ করে নিয়েছে।’ অতঃপর তিনি তা রাসুল (সা.)-কে পড়ে শোনালেন। রাসুল (সা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। অতঃপর বললেন, ‘তুমি ইহুদিদের লেখা শিখে নাও।’ যায়েদ (রা.) বলেন, আমি ১৫ দিনে তাতে দক্ষতা অর্জন করে ফেলি। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/৪২৮, ৪৩৩ পৃ.; তাহযিবুল আসমা ওয়াল-লুগাত ১/২০০—২০১পৃ., ক্র. ১৮৬; তাযকিরাতুল হুফফায ১/২৭—২৮ পৃ.)

এর পর থেকে তিনি রাসুল (সা.)-এর ওহির লেখকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কোনো আয়াত বা সুরা নাজিল হলে রাসুল (সা.) তাঁকে ডেকে তা লিখিয়ে নিতেন। তাই তিনি সদা দোয়াত-কলম নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের কাছে রাসুল (সা.)-এর দাওয়াতি চিঠি-পত্র লিখতেন এবং আগত পত্রগুলো রাসুল (সা.)-কে পড়ে শোনাতেন।

আগত চিঠিগুলোর বেশির ভাগ ছিল সুরইয়ানি ও ইবরানি ভাষায়, যা সাধারণত মুসলমানরা জানত না। তা জানত ইহুদিরা। রাসুল (সা.) যায়েদ (রা.)-কে এই দুই ভাষা শিখে নিতে বললেন। তিনি মাত্র ১৫ দিনে ইবরানি ভাষা এবং ১৭ দিনে সুরইয়ানি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অতঃপর ওই সব ভাষায় চিঠি লিখতেন এবং আগত চিঠি পড়ে শোনাতেন। এভাবে তিনি রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর লেখালেখির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এরপর হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালেও এ দায়িত্বে বহাল থাকেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/৪২৯ পৃ.; আল-ইসাবাহ : ২/২৯১ পৃ., ক্র.২৮৮৭; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৩—২৭৪ পৃ.; আল-ইসতিআব ২/৫৩৮ পৃ.; তাহযীবুল কামাল ১০/২৮ পৃ.)

খলিফা আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর যুগে তিনি পবিত্র কোরআনের সংকলন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজেও নেতৃত্ব দেন। যায়েদ (রা.) ফিকহশাস্ত্রে ছিলেন পারদর্শী। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনিও ফতোয়া দিতেন। তিনি ফতোয়া দানকারী ছয় সাহাবির একজন। চার খলিফার খিলাফতকাল ও মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনকালের পাঁচ বছর (মৃত্যু পর্যন্ত) তিনি ফতোয়ার মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৫ পৃ.)

তা ছাড়া তিনি আমৃত্যু মদিনার বিচারক ছিলেন এবং কিরাত ও ফারায়েজ শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন। (আল-ইসাবাহ : ২/২৯২ পৃ.)

ওমর (রা.) ও ওসমান (রা.) ফতোয়া, বিচার, ফারায়েজ ও কিরাতের ক্ষেত্রে কাউকে যায়েদ থেকে অগ্রাধিকার দিতেন না। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৪পৃ., তাযকিরাতুল হুফফায ১/২৮ পৃ.)

নবীজির এই প্রিয় সাহাবি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও ছিলেন অধিক সতর্ক ও সংযমী। ফলে তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা তুলনামূলক কম, অন্যথায় তিনি তো রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এবং সে সময়ে নিশ্চয়ই রাসুল (সা.)-এর অনেক কথা ও কাজ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন; স্মৃতিতে ধারণ করেছেন। তাঁর থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৯২।

ইন্তেকাল
হজরত যায়েদ (রা.)-এর মৃত্যুসন নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) ‘আল-ইসাবাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন, বেশির ভাগের মতে, তিনি ৪৫ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ওয়াক্বিদি (রহ.)-এর মতও তা-ই। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৬ বছর। মারওয়ান ইবনে হাকাম তখন মদিনার গভর্নর। তাঁর সঙ্গে যায়েদ (রা.)-এর অন্তরঙ্গতা ছিল। তিনিই তাঁর জানাজা পড়ান। (সূত্র : সাহাবায়ে কিরামের আলোকিত জীবন)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া

মহানবী (সা.) যাকে একাধিক ভাষা শিখতে বলেছিলেন

আপডেট সময় : ০৮:০৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

নবীজি (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম একজন মেধাবী সাহাবি ছিলেন যায়েদ বিন সাবিত (রা.)। তিনি বর্ণাঢ্য জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সব খিদমত করেছেন। তিনি ছিলেন নবীজি (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া ওহির লেখক, কিরাত ও ফারায়েজ শাস্ত্রের ইমাম; কোরআন সংকলনকারীদের প্রধান; মদিনার প্রধান মুফতি ও বিচারপতি। নবীজি (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তাঁর বয়স ১১ বছর। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই কোরআন পড়া শুরু করেন। তাঁর মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখর। রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় গেলে লোকজন তাঁকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যান এবং বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ও বনু নাজ্জার গোত্রের বালক। ও আপনার ওপর নাজিল হওয়া ১৭টি সুরা হিফজ করে নিয়েছে।’ অতঃপর তিনি তা রাসুল (সা.)-কে পড়ে শোনালেন। রাসুল (সা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। অতঃপর বললেন, ‘তুমি ইহুদিদের লেখা শিখে নাও।’ যায়েদ (রা.) বলেন, আমি ১৫ দিনে তাতে দক্ষতা অর্জন করে ফেলি। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/৪২৮, ৪৩৩ পৃ.; তাহযিবুল আসমা ওয়াল-লুগাত ১/২০০—২০১পৃ., ক্র. ১৮৬; তাযকিরাতুল হুফফায ১/২৭—২৮ পৃ.)

এর পর থেকে তিনি রাসুল (সা.)-এর ওহির লেখকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কোনো আয়াত বা সুরা নাজিল হলে রাসুল (সা.) তাঁকে ডেকে তা লিখিয়ে নিতেন। তাই তিনি সদা দোয়াত-কলম নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের কাছে রাসুল (সা.)-এর দাওয়াতি চিঠি-পত্র লিখতেন এবং আগত পত্রগুলো রাসুল (সা.)-কে পড়ে শোনাতেন।

আগত চিঠিগুলোর বেশির ভাগ ছিল সুরইয়ানি ও ইবরানি ভাষায়, যা সাধারণত মুসলমানরা জানত না। তা জানত ইহুদিরা। রাসুল (সা.) যায়েদ (রা.)-কে এই দুই ভাষা শিখে নিতে বললেন। তিনি মাত্র ১৫ দিনে ইবরানি ভাষা এবং ১৭ দিনে সুরইয়ানি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অতঃপর ওই সব ভাষায় চিঠি লিখতেন এবং আগত চিঠি পড়ে শোনাতেন। এভাবে তিনি রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর লেখালেখির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এরপর হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালেও এ দায়িত্বে বহাল থাকেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/৪২৯ পৃ.; আল-ইসাবাহ : ২/২৯১ পৃ., ক্র.২৮৮৭; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৩—২৭৪ পৃ.; আল-ইসতিআব ২/৫৩৮ পৃ.; তাহযীবুল কামাল ১০/২৮ পৃ.)

খলিফা আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর যুগে তিনি পবিত্র কোরআনের সংকলন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজেও নেতৃত্ব দেন। যায়েদ (রা.) ফিকহশাস্ত্রে ছিলেন পারদর্শী। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনিও ফতোয়া দিতেন। তিনি ফতোয়া দানকারী ছয় সাহাবির একজন। চার খলিফার খিলাফতকাল ও মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনকালের পাঁচ বছর (মৃত্যু পর্যন্ত) তিনি ফতোয়ার মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৫ পৃ.)

তা ছাড়া তিনি আমৃত্যু মদিনার বিচারক ছিলেন এবং কিরাত ও ফারায়েজ শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন। (আল-ইসাবাহ : ২/২৯২ পৃ.)

ওমর (রা.) ও ওসমান (রা.) ফতোয়া, বিচার, ফারায়েজ ও কিরাতের ক্ষেত্রে কাউকে যায়েদ থেকে অগ্রাধিকার দিতেন না। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/২৭৪পৃ., তাযকিরাতুল হুফফায ১/২৮ পৃ.)

নবীজির এই প্রিয় সাহাবি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও ছিলেন অধিক সতর্ক ও সংযমী। ফলে তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা তুলনামূলক কম, অন্যথায় তিনি তো রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এবং সে সময়ে নিশ্চয়ই রাসুল (সা.)-এর অনেক কথা ও কাজ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন; স্মৃতিতে ধারণ করেছেন। তাঁর থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৯২।

ইন্তেকাল
হজরত যায়েদ (রা.)-এর মৃত্যুসন নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) ‘আল-ইসাবাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন, বেশির ভাগের মতে, তিনি ৪৫ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ওয়াক্বিদি (রহ.)-এর মতও তা-ই। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৬ বছর। মারওয়ান ইবনে হাকাম তখন মদিনার গভর্নর। তাঁর সঙ্গে যায়েদ (রা.)-এর অন্তরঙ্গতা ছিল। তিনিই তাঁর জানাজা পড়ান। (সূত্র : সাহাবায়ে কিরামের আলোকিত জীবন)