শনিবার | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo ভারতীয় নাগরিকের গুলিবর্ষণে সিলেট সীমান্তে ২ বাংলাদেশি নিহত Logo সাতক্ষীরায় জুলাই যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল Logo সাংবাদিকদের পাশে থাকবে সরকার: ন্যায়বিচারের আশ্বাস Logo প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সুপরিকল্পিত: জাবিসাস Logo হাদি হত্যা ও হামলা-ভাঙচুর; জাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি Logo চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা কার্যালয় চাঁদপুরের যৌথ আয়োজনে চাঁদপুরে মাদক বিরোধী ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন Logo চাঁদপুরে সর্বোচ্চ একক রেমিট্যান্সে শীর্ষে জনতা ব্যাংক পিএলসি নতুন বাজার কর্পোরেট শাখা Logo বিজয় দিবসে প্যাপিরাস পাঠাগারের আলোচনা সভা ও কবিতাপাঠ Logo বিজয় দিবসে রাঙামাটি পুলিশের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পুলিশ পরিবারকে সংবর্ধনা Logo সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি আব্দুল লতিফের ৪দিন ও তার ছেলের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

নীলকরদের নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:২০:১২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিট্রিশ বেনিয়া নীলকর কর্তৃক এ দেশের সাধারণ কৃষকদের টর্চার সেল খ্যাত নীলকুঠিগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে কপোতাক্ষ তীরের নীলকুঠি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি সচেতন মহলের।

জানা গেছে, ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যে এ দেশে ইংরেজ শাসনের পতন হয়। ভাগ্য বদলের জন্য শত শত সাহেব এ দেশে আসে। তাদের একটা বড় অংশই ছিল নীলের ব্যবসায়ী নামে। এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতি বিজড়িত ‘নীলকুঠি’ মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষের কাছে কাছারি বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই নীলকুঠি। খালিশপুর বাজারের পশ্চিমপাশে ৯ একরের বেশি জায়গা নিয়ে নীলকুঠি বাড়িটি অবস্থিত। দালানটি আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল অনেকেরই এমনটিই ধারণা করেন।

এ কুঠি বাড়ি নির্মাণের মূল উদ্যেশ্য ছিল পূর্ববাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীলচাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এ কুটিবাড়ি থেকে এই অঞ্চলের নীলচাষ পরিচালনা করতেন। এই কুঠিরেই কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে ইংরেজরা উপ-মহাদেশে থেকে বিতাড়িত হলে কুঠির ভবনটি সিও অফিস হিসেবে ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৮৩-৮৪ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল। বর্তমানে কুঠিরটি জরাজীর্ণ, সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দাঁরপ্রান্তে অবস্থান করছে।
দক্ষিণমুখী এ ভবনের দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৩০ ফুট। দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলো আয়তনে বড়। চুন, সুরকি ও পাকা ইট দিয়ে তৈরি করা হয় ভবনটি। কুঠিরের নিচতলায় ছিল নীল চাষের খাজনা আদায় ও নির্যাতন কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আদায়কারীরা রাতযাপন করতেন। বিশ্রাম ও গোসল করার জন্য নির্মিত পাকা সিঁড়ি কপোতাক্ষের তীর পর্যন্ত নামানো। এখানে ১৮১০-১৮৫৮ সাল পর্যন্ত নীলকররা নীল চাষ পরিচালনা করত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় তৎকালীন নীলকুঠির মালিক জমিদারও জায়গাটি ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে স্থাপনাটি। কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের পর নীল ব্যবসায় ভাঁটা দেখা দেয়। সাহেবগণ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে থাকে। এ দেশীয় জমিদাররা কুঠিগুলো কিনে তাদের কাচারি স্থাপন করতে থাকে। খালিশপুর কুঠি নীল চাষের শেষ দিকে স্থাপন করা হয়েছিল। সাহেবদের কাছ থেকে কুঠিটি কিনে নেন পাবনার এক জমিদার। তিনি তার জমিদারির কাচারি স্থাপন করেন এখানে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। একজন নায়েব দেখাশুনা করতেন। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে নায়েবও এ কুঠি ছেড়ে চলে যান। ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত নীলকুঠি সরকারে খাসে নেওয়া হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতল এ কুঠিটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দিকে যেতে বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, খালিশপুর নীলকুঠির সঙ্গে নীলকর সাহেবদের প্রজাপীড়নের ভয়ঙ্কর ইতিহাস জড়িত আছে। ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বিলেত থেকে ব্রিটিশরা এসে কপোতাক্ষ তীরে খালিশপুরে কুঠি স্থাপন করে নীল চাষ শুরু করে। এ কুঠিটির দোতলা ভবন এখনো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

তথ্যমতে, ঝিনাইদহ যশোর অঞ্চলে ৬৭টি নীলকুঠি ছিল। অন্যগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনোটির চিহ্ন নেই। প্রতিটি নীলকুঠিতে অত্যাচারের স্মৃতি আকড়ে রেখেছে। নীলের ব্যবসায় মন্দা ও চারিদিকে নীল বিদ্রোহের আগুন জ¦লে উঠলে নীলকর সাহেবরা এখান থেকে চলে যেতে শুরু করে। খালিশপুরের কুঠিয়াল সাহেব কুঠি ও অন্যান্য সম্পত্তি মেদিনীপুরের এক জমিদারের কাছে বিক্রি করে বিলেতে চলে যান। জমিদার এখানে কাচারি স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার এই দেশত্যাগ করেন। তবে কাচারির কাজ চলত। সরকার জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করলে কুঠি ও জমি সরকারের মালিকানায় আসে। কুঠিবাড়ির চারদিকে ছিল আম ও লিচুবাগান। পুরোনো গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে কুঠির অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ঐতিহাসিক এই নীলকুঠি ভবনটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতীয় নাগরিকের গুলিবর্ষণে সিলেট সীমান্তে ২ বাংলাদেশি নিহত

নীলকরদের নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী

আপডেট সময় : ০৩:২০:১২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিট্রিশ বেনিয়া নীলকর কর্তৃক এ দেশের সাধারণ কৃষকদের টর্চার সেল খ্যাত নীলকুঠিগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে কপোতাক্ষ তীরের নীলকুঠি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি সচেতন মহলের।

জানা গেছে, ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যে এ দেশে ইংরেজ শাসনের পতন হয়। ভাগ্য বদলের জন্য শত শত সাহেব এ দেশে আসে। তাদের একটা বড় অংশই ছিল নীলের ব্যবসায়ী নামে। এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতি বিজড়িত ‘নীলকুঠি’ মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষের কাছে কাছারি বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই নীলকুঠি। খালিশপুর বাজারের পশ্চিমপাশে ৯ একরের বেশি জায়গা নিয়ে নীলকুঠি বাড়িটি অবস্থিত। দালানটি আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল অনেকেরই এমনটিই ধারণা করেন।

এ কুঠি বাড়ি নির্মাণের মূল উদ্যেশ্য ছিল পূর্ববাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীলচাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এ কুটিবাড়ি থেকে এই অঞ্চলের নীলচাষ পরিচালনা করতেন। এই কুঠিরেই কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে ইংরেজরা উপ-মহাদেশে থেকে বিতাড়িত হলে কুঠির ভবনটি সিও অফিস হিসেবে ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৮৩-৮৪ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল। বর্তমানে কুঠিরটি জরাজীর্ণ, সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দাঁরপ্রান্তে অবস্থান করছে।
দক্ষিণমুখী এ ভবনের দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৩০ ফুট। দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলো আয়তনে বড়। চুন, সুরকি ও পাকা ইট দিয়ে তৈরি করা হয় ভবনটি। কুঠিরের নিচতলায় ছিল নীল চাষের খাজনা আদায় ও নির্যাতন কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আদায়কারীরা রাতযাপন করতেন। বিশ্রাম ও গোসল করার জন্য নির্মিত পাকা সিঁড়ি কপোতাক্ষের তীর পর্যন্ত নামানো। এখানে ১৮১০-১৮৫৮ সাল পর্যন্ত নীলকররা নীল চাষ পরিচালনা করত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় তৎকালীন নীলকুঠির মালিক জমিদারও জায়গাটি ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে স্থাপনাটি। কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের পর নীল ব্যবসায় ভাঁটা দেখা দেয়। সাহেবগণ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে থাকে। এ দেশীয় জমিদাররা কুঠিগুলো কিনে তাদের কাচারি স্থাপন করতে থাকে। খালিশপুর কুঠি নীল চাষের শেষ দিকে স্থাপন করা হয়েছিল। সাহেবদের কাছ থেকে কুঠিটি কিনে নেন পাবনার এক জমিদার। তিনি তার জমিদারির কাচারি স্থাপন করেন এখানে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। একজন নায়েব দেখাশুনা করতেন। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে নায়েবও এ কুঠি ছেড়ে চলে যান। ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত নীলকুঠি সরকারে খাসে নেওয়া হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতল এ কুঠিটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দিকে যেতে বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, খালিশপুর নীলকুঠির সঙ্গে নীলকর সাহেবদের প্রজাপীড়নের ভয়ঙ্কর ইতিহাস জড়িত আছে। ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বিলেত থেকে ব্রিটিশরা এসে কপোতাক্ষ তীরে খালিশপুরে কুঠি স্থাপন করে নীল চাষ শুরু করে। এ কুঠিটির দোতলা ভবন এখনো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

তথ্যমতে, ঝিনাইদহ যশোর অঞ্চলে ৬৭টি নীলকুঠি ছিল। অন্যগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনোটির চিহ্ন নেই। প্রতিটি নীলকুঠিতে অত্যাচারের স্মৃতি আকড়ে রেখেছে। নীলের ব্যবসায় মন্দা ও চারিদিকে নীল বিদ্রোহের আগুন জ¦লে উঠলে নীলকর সাহেবরা এখান থেকে চলে যেতে শুরু করে। খালিশপুরের কুঠিয়াল সাহেব কুঠি ও অন্যান্য সম্পত্তি মেদিনীপুরের এক জমিদারের কাছে বিক্রি করে বিলেতে চলে যান। জমিদার এখানে কাচারি স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার এই দেশত্যাগ করেন। তবে কাচারির কাজ চলত। সরকার জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করলে কুঠি ও জমি সরকারের মালিকানায় আসে। কুঠিবাড়ির চারদিকে ছিল আম ও লিচুবাগান। পুরোনো গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে কুঠির অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ঐতিহাসিক এই নীলকুঠি ভবনটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।