জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
ক্ষেতে ফুলের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন গান্না-পাইকপাড়া গ্রামের দু’ভাই সাজু মন্ডল ও সাহাবুল ইসলাম। করোনার কারণে ফুল বিক্রিতে ধস নামায় তারা ক্ষতির শিকার হন। এখন নতুন করে ফুলচাষ করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, করোনা সংক্রমণের আগে ফুলের আবাদ ছিল ১৭৬ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে লাভজনক এই আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের। ফুলচাষি সাজু মন্ডল জানান, সামনে বিজয় দিবস, বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি এসব দিবসে ফুলের ভালো দাম হয়। তাই করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চারা রোপণ করেছেন। আশা করছেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। মোটামুটি একই চিত্র জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ ফুল উৎপাদনকারী এলাকায়। অব্যাহত লোকসানে দিশেহারা চাষিদের অনেকেই ফুলের পরিবর্তে ধান কিংবা সবজির চাষ করেন। অনেক ফুলচাষি এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্নে কেউ নতুন করে চারা রোপণ করছেন কেউবা রোপণকৃত চারা পরিচর্যা করছেন। এখন থেকে পরিচর্যা করা গেলে দেড় থেকে দুই মাস পর ভালো মানের ফুল পাওয়া যাবে। ফুলচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যার কারণে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয় দেড় লাখ টাকার মতো।’ ফুল গাছ কেটে সেখানে ধান লাগিয়েছিলেন তিনি; আর অল্প একটু জমিতে সবজি। তবে যে জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন, সেখানে এখন আবার ফুল আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। জেলার সব থেকে বড় গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানান, করোনার সংকটে ব্যবসায়ীদের মার্কেটে লাখ লাখ টাকা অনাদায়ী রয়ে গেছে। ঢাকা, কুমিল্লাসহ বড় বড় শহরের ব্যাপারিদের কাছে তাদের টাকা আটকে আছে। যদি করোনার সংক্রমণ কমে যায় কিংবা সরকার যদি কমিউনিটি সেন্টার গুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবসসহ নানা উৎসব উদযাপনের অনুমতি দেয়, তাহলে ফুলের চাহিদা বাড়বে। এতে তাদের পাওনা-প্রান্তির পাশাপাশি ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, সামনের দিন গুলোতে চাষিরা যাতে ভালোমানের ফুল পেতে পারেন এজন্য উন্নতমানের চারা রোপণ, রোগ-বালাই দমন থেকে শুরু করে নানা কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে কম জমিতে কীভাবে বেশি ফুল উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়েও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।