ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গায় প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম
নিউজ ডেস্ক:ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে তাঁর নিজ কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। এরপর সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘দুর্যোগের অবস্থা যেমনি হোক, থাকতে হবে আগাম প্রস্তুতি। সে ক্ষেত্রে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে। তবেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। জেলার সব এলাকায় পাকা স্থাপনা ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রসার ভবনগুলো মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারো ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে, তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে অথবা সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কোথায় গাছপালা-বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়লে দ্রুত তা সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
এ সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘দুর্যোগকালীন সময়ে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌর মেয়র, কাউন্সিলরসহ সব জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। যেন দুর্যোগ মোকাবিলায় আপনাদের ভূমিকা থাকে। সেই সঙ্গে যে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে বা জেলার বাইরে রয়েছেন, তাঁরা দ্রুত নিজেদের অফিসে যোগদান করবেন। দুর্যোগের আগে বা পরেও যেন সরকারি সেবা নির্বিঘœ থাকে।’
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিসে তিনটি, চার উপজেলায় চারটিসহ জেলার ৩৮টি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমাদের কর্মীরা সজাগ রয়েছে। ঝড় আঘাত হানলে কিংবা কোথাও দুর্যোগের কারণে দুর্ভোগ সৃষ্টি হলে, খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।’
দুর্যোগ-কবলিত বৈদ্যুতিক তাঁর, খুঁটিসহ যে কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকার নির্দেশ এবং তাৎক্ষণিক তা বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুদ্দীন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানান, ‘ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকা দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা নেই। তারপরেও বুলবুলের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় অনেকটা জায়গাজুড়ে আঘাত হানে। বুলবুলও অনেকটা জায়গা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। এখন পর্যন্ত যা গতি প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে, তাতে সুন্দরবন এবং তার আশপাশেই ‘বুলবুল’ আছড়ে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।’
সভায় উপস্থিত থেকে বিভিন্ন মতামত দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, জেলা তথ্য অফিসার আমিনুল ইসলাম, এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক এ বি এম লুৎফুল কবীর প্রমুখ।