চুয়াডাঙ্গায় আটকে আছে দুটি ট্রেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি!
নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে খুলনাগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে আটকে থাকা রূপসা আন্তনগর ও নকশীকাঁথা লোকাল ট্রেনের দুই হাজারের অধিক যাত্রী ছিল চরম দুর্ভোগে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে প্রবেশ করে রূপসা আন্তনগর ও রাত ৯টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে প্রবেশ করে নকশীকাঁথা লোকাল ট্রেন।
গতকাল রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন ও স্টেশন-সংলগ্ন ফার্মপাড়া রেলক্রসিংয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ফার্মপাড়াস্থ রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে রূপসা আন্তনগর ট্রেনটি। ট্রেনের ভেতর যাত্রীরা ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ প্রহর গুনছে। রূপসা আন্তনগর ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও পাওয়ার কার সচল থাকায় বগিতে বাতি জ্বলছে। বদ্ধ পরিবেশে ট্রেনের ভেতর শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হলেও অপরিচিত জায়গায় ট্রেন থেকে বাইরে নামতেও ভয় পাচ্ছে যাত্রীরা। লোকাল ট্রেনটির অবস্থা আরও খারাপ। অতিরিক্ত যাত্রী, তার ওপর বগিতে জ্বলছে না কোনো বাতি। অন্ধকারেই জবুথবু হয়ে বসে আছে শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু। বন্ধ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে গোল হয়ে বসে এক দল যুবককে ধূমপান করতে দেখা গেছে সেখানে।
তবে ট্রেনের এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বেশ হাসি-খুশি ও কর্মব্যস্ত দেখা গেছে ট্রেনের খাবার বগিতে কর্মরত কর্মীদের। তড়িঘড়ি করে ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীদের ক্ষুধা নিবারণে কাজ করছেন তাঁরা। বেচা-কেনা বেড়েছে কয়েকগুণ। খাবার বগিতে কর্মরত কর্মীদের ব্যস্তময় হাসি-খুশি চেহারা দেখে মনে হয়েছে, মাঝেমধ্যে এভাবে ট্রেন থমকে গেলে মন্দ হয় না তাঁদের।
আন্তনগর রূপসা ট্রেনের যাত্রী রেবেকা সুলতানা জানান, ঈশ্বরদী থেকে তিনি ট্রেনে উঠেছেন দুই কন্যা ও এক শিশু নিয়ে, যাচ্ছেন খুলনায় বাবার বাড়ি। অচেনা জায়গায় এভাবে ট্রেন থেমে থাকায় নিজের ও সন্তানদের জানমালের ভয়ে জড় হয়ে বসে আছেন তিনি। অপেক্ষা করছেন, কখন ট্রেন ছাড়বে। যশোরে সরকারি চাকরি করেন শাফায়েত হোসন। তিনি বলেন, ট্রেনটি এমন একটি জায়গায় থামিয়ে রাখা হয়েছে, জায়গাটি মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। ট্রেনটি এখানে না থামিয়ে প্লাটফর্মে থামিয়ে রাখলে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যেত।
চুয়াডাঙ্গার স্টেশন মাস্টার নাছরিন ফারহানা বলেন, রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা অভিমুখে যাওয়ার সময় কোটচাঁদপুর স্টেশনের ইউপি গেটে পৌঁছালে ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনার পর থেকে খুলনার সঙ্গে রাজশাহী, ঢাকাসহ সব রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে কোটচাঁদপুরে লাইনচ্যুত কপোতাক্ষ ট্রেনটি উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোটচাঁদপুরে লাইনচ্যুত কপোতাক্ষ ট্রেনটিকে সচল করতে ঈশ্বরদী থেকে একটি রিলিফ ট্রেন পোড়াদহ স্টেশন ছেড়ে এসেছে। রিলিফ ট্রেনটি গিয়ে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করার পরপরই চুয়াডাঙ্গায় অপেক্ষমান ট্রেনগুলি ছাড়ার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খুলনার সঙ্গে রাজশাহী, ঢাকাসহ সব রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল এবং রূপসা আন্তনগর ও নকশীকাঁথা লোকাল ট্রেন দুটি দুই হাজারের অধিক যাত্রী নিয়ে চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনের অদূরে আটকে ছিল।