নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিস্টিক প্রতিবন্ধীরা আমাদের বোঝা নয়। তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারলে তারাই হবে আমাদের সম্পদ। অটিস্টিক শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের অবহেলা করা যাবে না। তারা যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য সমাজের সুস্থ সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়ে আমি প্রতিবছর ঈদ কার্ড করি। যাদের ছবি দিয়ে এই কার্ড করি তাদেরকে পারিশ্রমিকও দেয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে সে জন্য ট্রাস্টে বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে তার পিছিয়ে পড়া সন্তানদের এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ব্যবস্থা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা এবং না থাকা উভয় অবস্থাতেই প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’প্রধানমন্ত্রী এ সময় সব প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থ বছরে ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ১০ লাখ প্রতিবন্ধীকে প্রতিমাসে ৭০০ টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৯০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’বাবা-মায়ের অবর্তমানে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিটি বিভাগে পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে মিরপুরে প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। সাভারে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য সংসদ ভবন সংলগ্ন জমিতে অনুশীলনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের বাবা-মায়ের অবর্তমানে দেখাশোনার জন্য প্রতিটি বিভাগে পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।’জন্মের শুরুতেই শিশুর অটিজম বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে তাকে চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশেষ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের ইনস্টিটিউট খোলার ঘোষণা দেন তিনি।এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য সুরক্ষা আইন-২০১৩ সহ ২০১৪ সালে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন ও অন্যান্য উদ্যোগের কথা বলেন তিনি।বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী সভাপতি রাশেদ খান মেনন বক্তব্য রাখেন।সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ। অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখা ও প্রতিবন্ধীদের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১১ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নীল বাতি প্রজ্জ্বলন করেন। এ সময় ‘আমরা করবো জয়’ গানটি বেজে ওঠে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’।