স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঝিনাইদহঃ অভাবের সংসারে ৭ম শ্রেণী পাশের পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি। পরিবারের প্রয়োজনে কিশোর বয়সেই কাজ শিখে কিছুদিন পরে যোগ দিয়েছিলাম কালীগঞ্জের বিদ্যুৎ অফিসের ক্যাজুয়াল শ্রমিক হিসেবে। সেখানে ২ বছর কাজ করে আসতো না কোন মাসিক বেতন। তবে শহরের লাইন মেরামতের কাজ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে যা পয়সা রোজগার হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু এ বিভাগের এক কর্মকর্তার একদিনের দুর্ব্যবহার আর অবহেলায় মনে প্রচন্ড দাগ কাটে। ঘটনাটি থেকে কষ্ট নিয়েই দেড় বছর আগে এ কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। তখন থেকে মনে জিদ আসে বিদ্যুৎ নিয়েই জীবনে এমন কিছু করবো যা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভুমিকা রাখবে। এরপর দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম আর সাধনায় নিজ প্রযুক্তিতে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছি। এখন কোন প্রকার জ্বালানী ব্যবহার না করেই নিজের প্রযুিক্ততে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে ইজিবাইক চার্জ দেয়ার কাজ। আমি মনে করি একদিন এ প্রযুক্তিই বিদ্যুতের অভাব পূরনে কাজে লাগবে। কথাগুলো ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার খয়েরতলা গ্রামের যুবক বিল্লাল হোসেনের। সে ওই গ্রামের আলী আকবর মুন্সির পুত্র। রাতে শহরের কলাহাটা মোড়ে আয়না ইজিবাইক চার্জার হাউজ নামের তার দোকানে গেলে দেখা যায়, ১ টি চার্জ কন্ট্রলার, ২ টি রাডার, ১ টি ডিসি মটর, ১ টি ডায়নামা, কয়েকটি পুলির সাথে সংযোগ দেয়া হয়েছে তার নিজের তৈরী ২ টি সার্কিট। প্রথমে ব্যাটারী দিয়ে মটরটি চালু করার সাথে সাথে ওই সংযোগ অটো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এরপর পুলিতে বেল্ট ঘুরতেই থাকছে। এ থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। সেই উৎপাদনকৃত বিদ্যুতেই চলছে ইজিবাইকের চার্জ দেয়ার কাজ। আত্মপ্রত্যয়ী যুবক বিল্লাল হোসেন আরো জানায়, তারা ৩ ভাই ১ বোন। অন্য ভাইয়েরা শ্রমিকের কাজ করে। আর একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেসহ ভাইয়েরা সকলেই কঠোর পরিশ্রম করে কোন রকমে সংসার চালায়। এমন অবস্থার মধ্যদিয়ে সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে কোন রকমের জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এটা কম খরচে বাসা বাড়িতেও ব্যবহার যোগ্য। সে জানায়, আরও বেশি ভোল্টেজের ডায়নামা কাজে লাগিয়ে একটি অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাহিদা পুরনের চিন্তা ভাবনার পাশাপাশি তার কাজ চলছে। তার দাবি এ প্রযুক্তিই পারে বিদ্যুতের অভাব মেটাতে। সে জানায়, এটা সফলের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদী কিনতে একাধিকবার ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে। যত কষ্টই হোক দীর্ঘদিনের গবেষণা আর পরিশ্রমের পর আজ সফলতা এসেছে। এখন বেশ ভালো লাগছে। তার এ প্রজেক্ট সফল করতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর নিজের পরিশ্রমতো হয়েইছে। কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা মাষ্টারপাড়ার ইজিবাইক চালক সুজিত দাস জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতে বিল্লালের উৎপাদিত বিদ্যুতে বাইক চার্জ দিয়ে সারাদিন ভাড়ায় ইজবাইক চালাচ্ছেন। এতে চার্জের কোন ঘাটতি হচ্ছেনা। তিনি বলেন, তার এ প্রযুক্তিতে উৎপন্ন বিদ্যুতে চার্জ দিতে খরচও কম লাগছে। ইজিবাইকের অন্য এক চালক শহরের কলেজপাড়ার প্রদীপ দাস জানান, ইজিবাইকে আগে অন্য স্থান বিদ্যুুৎ লাইনের একটি দোকান থেকে রাতে চার্জ দিতেন। এখন নতুন প্রযুক্তিতে উৎপন্ন বিদ্যুতে চার্জ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করলে বিদ্যুতের ওপর চাপ কমে যাবে। কালীগঞ্জ উপজেলা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী শেখ রেজা নাছিম জানান, আমি শুনেছি কালীগঞ্জের এক যুবক নিজ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছে। শুনেছি আমি এখানে যোগাদানের আগে এ ছেলেটি বিদ্যুৎ অফিসে ক্যাজুয়াল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। পারিবারিক প্রয়োজনে আপাতত কালীগঞ্জের বাইরে আছি। আমি ফিরেই তার এটা দেখতে যাবো। তবে যা শুনেছি যদি সঠিক হয় তাহলে অবশ্যই ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। এ বাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বরত (ডি.জি.এম) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহম্মদ আব্দুর রব জানান, কালীগঞ্জের এক প্রতিভাবান যুবক নিজের প্রযুক্তিতে কোন জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে কাজে লাগাচ্ছে এটা শুনে বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, যা শুনেছি তার সত্যতা রয়েছে। দেখলাম কোন রকমে জালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিভাবান এ ছেলেটি যে মেধা খাঁটিয়ে এ প্রযুক্তি তৈরী করেছে সেটা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভুমিকা রাখতে পারে।