আল্লাহকে খুশি করতে চাও, বাবাকে খুশি করো !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ আগস্ট ২০১৭
  • ৭৬৩ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

‘বাবা’, ‘আব্বু’, ‘আব্বা’- যে নামেই ডাকি না কেন একটি পরিবারে সর্বোচ্চ আস্থার নাম এই বাবা। বাবাহীন একটি পরিবার এবং বাবার ছায়াঘেরা একটি পরিবারের মাঝে মোটা দাগের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। যার বাবা নেই কিংবা যে পরিবারে বাবার কোনো ছায়া নেই- তারাই কেবল বাবার প্রকৃত অভাব অনুধাবন করতে সক্ষম।

ইসলাম ধর্ম আল্লাহ মহানের ইবাদত বন্দেগি পালনের পর যে কয়টি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছে তার মাঝে অন্যতম একটি হলো পিতা ও মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের হক বা অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা এবং তাদের সাথে কোনো প্রকারের খারাপ ব্যবহার বা অসৌজন্যমূলক আচরণ না করা।

পবিত্র কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)

মাতা বা মায়ের পাশাপাশি ইসলামে বাবা বা পিতার অবস্থানকে খুব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। একটি হাদিস রাসূল (সা.) বলেছেন, বাবা বা পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ মহান খুশি হন এবং পিতা বা বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ মহান অসন্তুষ্ট হন। (আল-হাদিস) এই একটি হাদিসের মর্মকথাই ইসলাম ধর্মে বাবার মর্যাদা বা তার অবস্থানগত গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য যথেষ্ঠ। মানব জাতির স্রষ্টা আল্লাহ মহানের সন্তুষ্টি হওয়াকে বাবা বা পিতার সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, একজন মুসলিমের জন্য এর চেয়ে বড় সতর্কবার্তা আর কী হতে পারে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আল্লাহ মহানের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে পিতা বা বাবাকে সন্তুষ্ট রাখার নেক তাওফিক দান করুন। আমিন।

এছাড়া পিতার মর্যাদা ও গুরুত্বের আলোচনা প্রসঙ্গে আরো একটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে। যেখানে পিতা ও মাতা উভয়ের কথাই আলোচিত হয়েছে দীর্ঘ একটি হাদিসে। হাদিসটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একবার রাসুল (সা.) জুমআর নামাজের আগে মিম্বরের প্রথম ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন; দ্বিতীয় ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন এবং তৃতীয় ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের (সা.) কাছে এভাবে তিনবার আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এই মাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) আমাকে তিনটি দোআ শোনালো এবং আমি তিনটি দোআতে তিনবার আমিন বলেছি। এক. যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ করাতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক; আমি বললাম, ‘আমিন’। দুই. সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়লো না, আমি বললাম, ‘আমিন’। তিন. হজরত জিবরাইল বললো, সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে তার বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমতে করার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হলো না। আমি বললাম, ‘আমিন’। কত বড় সতর্কতার কথা এই হাদিসটিতে উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) যে দোআতে ‘আমিন’ বলেছেন সে দোআ কবুল হবে না এমনটা ভাবাও উচিত না। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে, আল্লাহর রাসূলের (সা.) একজন অনুসারী হিসেবে পিতা বা বাবার সঠিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তাদের সঠিক খেদমত করা আমাদের একান্ত অবশ্য কর্তব্য।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আল্লাহকে খুশি করতে চাও, বাবাকে খুশি করো !

আপডেট সময় : ০৬:০৭:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ আগস্ট ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

‘বাবা’, ‘আব্বু’, ‘আব্বা’- যে নামেই ডাকি না কেন একটি পরিবারে সর্বোচ্চ আস্থার নাম এই বাবা। বাবাহীন একটি পরিবার এবং বাবার ছায়াঘেরা একটি পরিবারের মাঝে মোটা দাগের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। যার বাবা নেই কিংবা যে পরিবারে বাবার কোনো ছায়া নেই- তারাই কেবল বাবার প্রকৃত অভাব অনুধাবন করতে সক্ষম।

ইসলাম ধর্ম আল্লাহ মহানের ইবাদত বন্দেগি পালনের পর যে কয়টি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছে তার মাঝে অন্যতম একটি হলো পিতা ও মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের হক বা অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা এবং তাদের সাথে কোনো প্রকারের খারাপ ব্যবহার বা অসৌজন্যমূলক আচরণ না করা।

পবিত্র কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)

মাতা বা মায়ের পাশাপাশি ইসলামে বাবা বা পিতার অবস্থানকে খুব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। একটি হাদিস রাসূল (সা.) বলেছেন, বাবা বা পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ মহান খুশি হন এবং পিতা বা বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ মহান অসন্তুষ্ট হন। (আল-হাদিস) এই একটি হাদিসের মর্মকথাই ইসলাম ধর্মে বাবার মর্যাদা বা তার অবস্থানগত গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য যথেষ্ঠ। মানব জাতির স্রষ্টা আল্লাহ মহানের সন্তুষ্টি হওয়াকে বাবা বা পিতার সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, একজন মুসলিমের জন্য এর চেয়ে বড় সতর্কবার্তা আর কী হতে পারে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আল্লাহ মহানের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে পিতা বা বাবাকে সন্তুষ্ট রাখার নেক তাওফিক দান করুন। আমিন।

এছাড়া পিতার মর্যাদা ও গুরুত্বের আলোচনা প্রসঙ্গে আরো একটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে। যেখানে পিতা ও মাতা উভয়ের কথাই আলোচিত হয়েছে দীর্ঘ একটি হাদিসে। হাদিসটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একবার রাসুল (সা.) জুমআর নামাজের আগে মিম্বরের প্রথম ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন; দ্বিতীয় ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন এবং তৃতীয় ধাপে উঠার সময় বললেন, আমিন।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের (সা.) কাছে এভাবে তিনবার আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এই মাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) আমাকে তিনটি দোআ শোনালো এবং আমি তিনটি দোআতে তিনবার আমিন বলেছি। এক. যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ করাতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক; আমি বললাম, ‘আমিন’। দুই. সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়লো না, আমি বললাম, ‘আমিন’। তিন. হজরত জিবরাইল বললো, সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে তার বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তাদের খেদমতে করার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হলো না। আমি বললাম, ‘আমিন’। কত বড় সতর্কতার কথা এই হাদিসটিতে উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) যে দোআতে ‘আমিন’ বলেছেন সে দোআ কবুল হবে না এমনটা ভাবাও উচিত না। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে, আল্লাহর রাসূলের (সা.) একজন অনুসারী হিসেবে পিতা বা বাবার সঠিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তাদের সঠিক খেদমত করা আমাদের একান্ত অবশ্য কর্তব্য।