শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

সালফে সালেহিন যেভাবে হজ করতেন !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৬:০৩:৫৮ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ আগস্ট ২০১৭
  • ৭৯৫ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব আমলই আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যেই কাবা নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(স্মরণ করো) যখন আমি ইবরাহিমকে (আমার) ঘর নির্মাণের স্থান ঠিক করে দিলাম এই মর্মে যে, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং তাওয়াফ-কিয়ামকারী ও রুকু-সিজদাকারীর জন্য আমার ঘরকে পবিত্র করো।’ (সূরা হজ : ২৬)। সালফে সালেহিন হজের মৌসুমকে গনিমত মনে করতেন। তারা এ মৌসুমে আমলের যে প্রতীক ছিলেন, তা বর্তমান জমানায় কল্পনাও করা যায় না
হজ ইসলামের অন্যতম রুকুন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মোক্ষম সুযোগ। অতীতের গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। হাদিসে হজের ফজিলতে বলা হয়েছে, যে সব ধরনের পাপাচারমুক্ত হয়ে হজ করল, সে এমনভাবে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেমন তার জননী তাকে সদ্য প্রস্রব করেছে। (অর্থাৎ নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে)।  (বোখারি : ১৫২১; মুসলিম : ১৩৫০)।

হজে পূর্ববর্তী বুজুর্গানে কেরাম যে ঈমানি শক্তি, ইবাদতের শক্তি ও ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। এহরাম থেকে নিয়ে তাওয়াফে বিদা পর্যন্ত প্রভুভক্তি ও ইবাদত-বন্দেগিতে তারা একাগ্রতা এবং একনিষ্ঠতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। হজের পুরো সময় নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়েছেন। তাওহিদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক বর্জনে আপসহীন ছিলেন। হজের মৌলিক শিক্ষাই হচ্ছে তাওহিদের সঠিক জ্ঞানার্জন ও শিরক বর্জন। হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব আমলই আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যেই কাবা নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(স্মরণ করো) যখন আমি ইবরাহিমকে (আমার) ঘর নির্মাণের স্থান ঠিক করে দিলাম এই মর্মে যে, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং তাওয়াফ-কিয়ামকারী ও রুকু-সিজদাকারীর জন্য আমার ঘরকে পবিত্র করো।’ (সূরা হজ : ২৬)।

সালফে সালেহিন হজের মৌসুমকে গনিমত মনে করতেন। তারা এ মৌসুমে আমলের যে প্রতীক ছিলেন, তা বর্তমান জমানায় কল্পনাও করা যায় না। ইমাম জারিরি বলেন, আনাস বিন মালিক (রা.) ‘যাতে ইরাক’ (মিকাত) থেকে হজের এহরাম বাঁধেন। এরপর হজ থেকে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয়নি। অতঃপর হজ শেষে আমাকে তিনি বলেন, হে ভাতিজা, এহরাম এমনই হতে হয়। (তাবাকাতুল কুবরা ৭/২২)।

হজে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা নিষেধ। কম কথা বলা মুস্তাহাব। যেহেতু অধিক কথা মানুষকে মিথ্যা, গিবত ও অন্যান্য গোনাহে লিপ্ত করে, তাই সর্বাবস্থায় জবানের হেফাজতের নিমিত্ত কম কথা বলতে হয়। আর হজের মতো এমন মহৎ আমলের ময়দানে অধিক অপ্রয়োজনীয় কথা বলা একেবারেই অনুচিত। সালফে সালেহিন এর উত্তম দৃষ্টান্ত ছিলেন। মানসুর বিন মুতামির বলেন, কাজী শুরাইহ ইবনে হারিস (রহ.) এহরাম বাঁধার পর মনে হতো যেন তিনি একটি বধির সাপ যে আশপাশের কোনো কিছু শুনতে পাচ্ছে না। (তাবাকাতুল কুবরা : ৬/১৪১)।

মুহরিমের উচিত, নিজেকে সর্বদা আল্লাহভক্তি, তাকওয়া, তালবিয়া, জিকরুল্লাহ, কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজে লিপ্ত রাখা। সালফে সালেহিন এর উত্তম নমুনা ছিলেন। ইসহাক আসসাবিয়ি বলেন, মাসরুক (রহ.) (প্রখ্যাত তাবেঈ) হজের মৌসুমে সিজদা ছাড়া কপাল মাটিতে রাখেননি। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা : ৭/১৪৮)।

ইবনে রাবিয়া বলেন, আমরা ১৫০ হিজরিতে ইমাম আওজায়ি (রহ.) এর সঙ্গে হজ করি। হজের পুরো সময়ে আমি কখনও তাকে হাওদায় হেলান দিতে দেখিনি। সর্বদা তিনি নামাজ পড়তেন। (সিয়ার আলাম নুবালা : ৭/১১৯)।

রাবি ইবনে সুলাইমান বলেন, আমরা ইমাম শাফেঈ (রহ.) এর সঙ্গে হজ করেছি। এহরাম বাঁধার পর থেকে তিনি রাস্তাঘাটে, পাহাড়-পর্বতে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে ছিলেন।

সালফে সালেহিন কোনো নেক কাজে (যেমন হজ, সিয়াম) ইন্তেকাল হওয়াকে গৌরবের মনে করতেন এবং সর্বদা এটাই কামনা করতেন। ইতিহাসে পাওয়া যায়, অনেক প্রখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ হজের মৌসুমে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন।

অধিকন্তু তারা অধিক হজের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ ৮০ বার হজ ও ওমরা করেন। তাবেঈ তাউস ৪০ বার হজ করেন। সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা (রহ.) ৭০ বার হজ করেন। এছাড়াও সাইদ ইবনে মুস্যায়িব, আতা ইবনে রাবাহ, আইউব সিখতিয়ানি, জাফর আল খালদি (রহ.) প্রমুখ বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ৪০ বারের বেশি হজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সালফে সালেহিনের পথ ও আদর্শ অনুযায়ী হজ করার তৌফিক দান করুন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

সালফে সালেহিন যেভাবে হজ করতেন !

আপডেট সময় : ০৬:০৩:৫৮ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৫ আগস্ট ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব আমলই আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যেই কাবা নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(স্মরণ করো) যখন আমি ইবরাহিমকে (আমার) ঘর নির্মাণের স্থান ঠিক করে দিলাম এই মর্মে যে, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং তাওয়াফ-কিয়ামকারী ও রুকু-সিজদাকারীর জন্য আমার ঘরকে পবিত্র করো।’ (সূরা হজ : ২৬)। সালফে সালেহিন হজের মৌসুমকে গনিমত মনে করতেন। তারা এ মৌসুমে আমলের যে প্রতীক ছিলেন, তা বর্তমান জমানায় কল্পনাও করা যায় না
হজ ইসলামের অন্যতম রুকুন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মোক্ষম সুযোগ। অতীতের গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। হাদিসে হজের ফজিলতে বলা হয়েছে, যে সব ধরনের পাপাচারমুক্ত হয়ে হজ করল, সে এমনভাবে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেমন তার জননী তাকে সদ্য প্রস্রব করেছে। (অর্থাৎ নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে)।  (বোখারি : ১৫২১; মুসলিম : ১৩৫০)।

হজে পূর্ববর্তী বুজুর্গানে কেরাম যে ঈমানি শক্তি, ইবাদতের শক্তি ও ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। এহরাম থেকে নিয়ে তাওয়াফে বিদা পর্যন্ত প্রভুভক্তি ও ইবাদত-বন্দেগিতে তারা একাগ্রতা এবং একনিষ্ঠতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। হজের পুরো সময় নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়েছেন। তাওহিদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক বর্জনে আপসহীন ছিলেন। হজের মৌলিক শিক্ষাই হচ্ছে তাওহিদের সঠিক জ্ঞানার্জন ও শিরক বর্জন। হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব আমলই আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যেই কাবা নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(স্মরণ করো) যখন আমি ইবরাহিমকে (আমার) ঘর নির্মাণের স্থান ঠিক করে দিলাম এই মর্মে যে, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং তাওয়াফ-কিয়ামকারী ও রুকু-সিজদাকারীর জন্য আমার ঘরকে পবিত্র করো।’ (সূরা হজ : ২৬)।

সালফে সালেহিন হজের মৌসুমকে গনিমত মনে করতেন। তারা এ মৌসুমে আমলের যে প্রতীক ছিলেন, তা বর্তমান জমানায় কল্পনাও করা যায় না। ইমাম জারিরি বলেন, আনাস বিন মালিক (রা.) ‘যাতে ইরাক’ (মিকাত) থেকে হজের এহরাম বাঁধেন। এরপর হজ থেকে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয়নি। অতঃপর হজ শেষে আমাকে তিনি বলেন, হে ভাতিজা, এহরাম এমনই হতে হয়। (তাবাকাতুল কুবরা ৭/২২)।

হজে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা নিষেধ। কম কথা বলা মুস্তাহাব। যেহেতু অধিক কথা মানুষকে মিথ্যা, গিবত ও অন্যান্য গোনাহে লিপ্ত করে, তাই সর্বাবস্থায় জবানের হেফাজতের নিমিত্ত কম কথা বলতে হয়। আর হজের মতো এমন মহৎ আমলের ময়দানে অধিক অপ্রয়োজনীয় কথা বলা একেবারেই অনুচিত। সালফে সালেহিন এর উত্তম দৃষ্টান্ত ছিলেন। মানসুর বিন মুতামির বলেন, কাজী শুরাইহ ইবনে হারিস (রহ.) এহরাম বাঁধার পর মনে হতো যেন তিনি একটি বধির সাপ যে আশপাশের কোনো কিছু শুনতে পাচ্ছে না। (তাবাকাতুল কুবরা : ৬/১৪১)।

মুহরিমের উচিত, নিজেকে সর্বদা আল্লাহভক্তি, তাকওয়া, তালবিয়া, জিকরুল্লাহ, কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজে লিপ্ত রাখা। সালফে সালেহিন এর উত্তম নমুনা ছিলেন। ইসহাক আসসাবিয়ি বলেন, মাসরুক (রহ.) (প্রখ্যাত তাবেঈ) হজের মৌসুমে সিজদা ছাড়া কপাল মাটিতে রাখেননি। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা : ৭/১৪৮)।

ইবনে রাবিয়া বলেন, আমরা ১৫০ হিজরিতে ইমাম আওজায়ি (রহ.) এর সঙ্গে হজ করি। হজের পুরো সময়ে আমি কখনও তাকে হাওদায় হেলান দিতে দেখিনি। সর্বদা তিনি নামাজ পড়তেন। (সিয়ার আলাম নুবালা : ৭/১১৯)।

রাবি ইবনে সুলাইমান বলেন, আমরা ইমাম শাফেঈ (রহ.) এর সঙ্গে হজ করেছি। এহরাম বাঁধার পর থেকে তিনি রাস্তাঘাটে, পাহাড়-পর্বতে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে ছিলেন।

সালফে সালেহিন কোনো নেক কাজে (যেমন হজ, সিয়াম) ইন্তেকাল হওয়াকে গৌরবের মনে করতেন এবং সর্বদা এটাই কামনা করতেন। ইতিহাসে পাওয়া যায়, অনেক প্রখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ হজের মৌসুমে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন।

অধিকন্তু তারা অধিক হজের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ ৮০ বার হজ ও ওমরা করেন। তাবেঈ তাউস ৪০ বার হজ করেন। সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা (রহ.) ৭০ বার হজ করেন। এছাড়াও সাইদ ইবনে মুস্যায়িব, আতা ইবনে রাবাহ, আইউব সিখতিয়ানি, জাফর আল খালদি (রহ.) প্রমুখ বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ৪০ বারের বেশি হজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সালফে সালেহিনের পথ ও আদর্শ অনুযায়ী হজ করার তৌফিক দান করুন।