শুক্রবার | ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo টেকনাফে ইঞ্জিন বিকল হওয়া যাত্রীবাহী বোটসহ ৪৫ জন যাত্রী উদ্ধার Logo খুবিতে ইউনেস্কো ও ইউজিসির উদ্যোগে পিয়ার-টু-পিয়ার ওরিয়েন্টেশন Logo সাতক্ষীরা–কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযান পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান Logo টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ Logo গাইবান্ধা এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে নিহত যুবক Logo খুবিতে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা: নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় সভা Logo প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির ‘হেমন্তসন্ধ্যা ও হাঁস পার্টি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে Logo টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ Logo সদরপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা

ঝিনাইদহের প্রভাত কুমার যেভাবে জঙ্গি আবদুল্লাহ

  • Nil Kontho
  • আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭
  • ৭৬৭ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ  ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল সেই বাড়ির মালিক একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার নাম আবদুল্লাহ। দেশজুড়ে এত সতর্কতা জারির পরেও আব্দুল্লাহ নিজের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে সে নিজেও জঙ্গি। তবে তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখার আগেই সে পরিবারসহ পালিয়েছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই সে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ঠনঠনেপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না।

স্থানীয়রা বলেন, আবদুল্লাহ’র বয়স প্রায় ৪০ বছরের মতো হবে। পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর আগে তার নাম ছিল প্রভাত কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বাউতি। মা সন্ধ্যা রানী। আবদুল্লাহরা তিন ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাস ও সবার ছোট আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ তিনটি বিয়ে করেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেশি আসলাম, ইউসুফ আলী ও চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আবদুল্লাহ পোড়াহাটির ঠনঠনেপাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে এই জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিন শেড বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা দাবি করেন, আবদুল্লাহ’র বাড়িতে কেউ যেত না।

মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু লোক তার বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো। বাড়িটি টিন দিয়ে চারিদিক থেকে ঘেরা ছিল। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিত না। সে সবার থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করতো।
তবে আবদুল্লাহ জঙ্গি হতে পারেন এই কথা জানার পর গ্রামের লোকজন বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। আসলেই দোষী হলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় আবদুল্লাহর বাড়িটি ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ রাতের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরদিন, শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণের থাবা) শুরু হয়।

অপারেশন চলাকালে ওই বাড়ি থেকে থেকে ২০ ড্রাম হাইপ্রোজেন পার অস্কসাইড, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫ টি জিহাদি বই, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটর সাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ২ টি বোমা নিস্ক্রিয় করা হয় বলে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি শেখ দিদার আহম্মেদ জানান।

ডিআইজি দিদার আহমেদ আরও জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এই বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের সবাই জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এই বাড়িতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করতো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে ইঞ্জিন বিকল হওয়া যাত্রীবাহী বোটসহ ৪৫ জন যাত্রী উদ্ধার

ঝিনাইদহের প্রভাত কুমার যেভাবে জঙ্গি আবদুল্লাহ

আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ  ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল সেই বাড়ির মালিক একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার নাম আবদুল্লাহ। দেশজুড়ে এত সতর্কতা জারির পরেও আব্দুল্লাহ নিজের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে সে নিজেও জঙ্গি। তবে তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখার আগেই সে পরিবারসহ পালিয়েছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই সে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ঠনঠনেপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না।

স্থানীয়রা বলেন, আবদুল্লাহ’র বয়স প্রায় ৪০ বছরের মতো হবে। পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর আগে তার নাম ছিল প্রভাত কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বাউতি। মা সন্ধ্যা রানী। আবদুল্লাহরা তিন ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাস ও সবার ছোট আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ তিনটি বিয়ে করেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেশি আসলাম, ইউসুফ আলী ও চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আবদুল্লাহ পোড়াহাটির ঠনঠনেপাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে এই জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিন শেড বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা দাবি করেন, আবদুল্লাহ’র বাড়িতে কেউ যেত না।

মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু লোক তার বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো। বাড়িটি টিন দিয়ে চারিদিক থেকে ঘেরা ছিল। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিত না। সে সবার থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করতো।
তবে আবদুল্লাহ জঙ্গি হতে পারেন এই কথা জানার পর গ্রামের লোকজন বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। আসলেই দোষী হলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় আবদুল্লাহর বাড়িটি ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ রাতের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরদিন, শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণের থাবা) শুরু হয়।

অপারেশন চলাকালে ওই বাড়ি থেকে থেকে ২০ ড্রাম হাইপ্রোজেন পার অস্কসাইড, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫ টি জিহাদি বই, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটর সাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ২ টি বোমা নিস্ক্রিয় করা হয় বলে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি শেখ দিদার আহম্মেদ জানান।

ডিআইজি দিদার আহমেদ আরও জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এই বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের সবাই জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এই বাড়িতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করতো।