নারীরা দেশের সম্পদ, এটি সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষিত নারীরা যখন চাকরি নামে সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে একটা সময় নিজেকে বেকার তালিকায় নাম লেখায়, তখন তারা সম্পদে রূপান্তর না হয়ে দেশের ও সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই সঙ্কটময় সময় অকুতোভয় এক নারী চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরি দেয়ার পণ করে বসেন। তিনি তানিয়া ইশতিয়াক খান একজন সফল উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশে এখন উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে ধীরে ধীরে। উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন অনেকেই। অনেকেই এখন চাকরির পিছনে না ঘুরে হচ্ছেন উদ্যোক্তা।
আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। ঘরে বসে উপার্জন করছেন মাসে লক্ষাধিক টাকা। এ রকম উদ্যমী নারীদের নিজ অর্থায়ানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তানিয়া ইশতিয়াক খান ও তার সংগঠন “বিজয়ী” নারী উন্নয়ন সংস্থা ।
২০২০ সাল থেকে শত শত নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করছেন উদ্যোক্তা। যারা প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন। বেকারত্বে বাঁধা ডিঙিয়ে তারা আজ সফল। কাজ করছেন বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে।
চাঁদপুরের নতুন বাজারের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৯৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন তানিয়া ইশতিয়াক খান ।চাঁদপুর লেডি দেহলভি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চাঁদপুর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলতার সাথে ইংরেজি লিটারেচারে অনার্স ও মার্স্টাস করেন। ব্যক্তি জীবনে তানিয়া ইশতিয়াক খান দুই কন্যা সন্তানের জননী।
তার স্বামী তরুন সমাজ সেবক ও কলম সৈনিক আশিক খান ও নিলুফার করিম এর অনুপ্রেরনায় নারী উন্নয়নে কাজ করে সফলতার পথে তানিয়া ইশতিয়াক খান। কর্মজীবনে লেখা পড়ার পাশাপাশি চাঁদপুরের কালেক্টরেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং ইউসিবিএল ব্যাংকে চাকুরী করেন। করোনা কালীন সময়ে চাকুরি ছেড়ে ঘরে বসে উদ্যোক্তা লাইফের যাত্রা শুরু করে খান’স ধাবা নামাক রেস্তোরাঁর মাধ্যমে।
নারী উদ্যোক্তা সৃস্টি ও উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়া ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলার পুরান বাজারে অবস্থিত খান’স ধাবায় স্বপ্নদ্রষ্টা আশিক খানের সার্বিক সহযোগিতায় ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং সালে চাঁদপুরের নারীদেরকে নিয়ে একটি নারী উদ্যোক্তা সংগঠন” বিজয়ী” প্রতিষ্ঠা করেন।
দীর্ঘ দুই বছর ফ্রি প্রশিক্ষনসহ নানা রকম সামাজিক কার্যক্রম করে নভেম্বর ২০২২ ইং সালে বাংলাদেশ মহিলা অধিদফতর থেকে “বিজয়ী” – নারী উন্নয়ন সংস্থা নামে(রেজিষ্ট্রেশন নং- জেমবিককা/চাঁদ/ ১৫৩)) নিবন্ধন পায় এবং ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে যুউঅ/চাঁদ/২০২৩-০৩ নিবন্ধন সনদ পায় যা “বিজয়ী” – যুব নারী উন্নয়ন সংস্থা” নামে। নারী সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিজয়ী। ২০ টি ফ্রি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ২০২০-২০২২ সালে ৫০০+ নারীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষন প্রদান করে নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। ২০২৩ সালে বিজয়ী ১০০০+ নারীকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষন করানো হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৫০০+ নারীকে বিনামূল্যে নানা রকম হাতে কলমে প্রশিক্ষন করিয়েছে যা এ বছর ১০০০ নারীকে প্রশিক্ষন করানো হবে।
বিজয়ী থেকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের “বিজয়ী অ্যাওয়ার্ড” এর মাধ্যমে সনদপত্র ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করতে বিজয়ী এর সেলাই মেশিন প্রদান করেন। এছাড়া শুধু অনলাইন নয় অফলাইনে পন্য বিক্রয়ের জন্য বিজয়ী মেলার আয়োজন করে সেখানে উদ্যোক্তাদের ফ্রি স্টল প্রদান করে অফলাইনে পন্য ডিসপ্লে ও সেলস এর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বিজয়ী। বিজয়ী ফেসবুক গ্রুপে ১৪৫০০ + সদস্য নিয়ে অনলাইন মাকেটিং গ্রুপে পন্য ও সেবা ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছে ।তাছাড়া উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা সহ লাইভে তাদের পন্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারনার ব্যবস্থা করা হয় বিজয়ী এর মাধ্যমে। পুঁজির অভাব দূর করনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্প ইন্টারেস্টে বিনা জামানতে ঋনের ব্যবস্থা করেছে বিজয়ী এর ফাউন্ডার তানিয়া ইশতিয়াক খান ।
এক সাক্ষাৎকারে বিজয়ী এর ফাউন্ডার তানিয়া ইশতিয়াক খান বলেন – বিজয়ী সংগঠন এখন শত শত নারীদের উপার্জন করার পথও তৈরি করে দিচ্ছেন।
তানিয়া বলেন, অনেকেই চাকরির পিছনে ঘুরে ঘুরে চাকরি পাচ্ছে না। পাশ করে ঘরে বসে আছেন অনেকেই। কিন্তু বেকারত্বের তালিকায় নাম লিখে বসে আছে। ভাবছেন কি করবেন কি করা যায় তরুণদের জন্য অবশ্যই পরামর্শ থাকবে উদ্যোক্তা হওয়ার। দক্ষ ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ” গড়তে হলে উদ্যোক্তা হতে হবে। নারীদের সাবলম্বী হতে হবে। চাকরির ভরসায় না থেকে উদ্যোক্তা হোন সফলতা আসবেই। শুরুটা আমারও সুন্দর ছিল না কিন্তু মেধা, মনন ও পরিশ্রম দিয়ে আমি আজ উদ্যোক্তা হিসেবে অবস্থান গড়ে তুলেছি আমি এখন সফল, আলহামদুলিল্লাহ । আপনারাও চাকরির পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা তৈরি হোন সফলতা আসবেই।
সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় শিশু ও নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবা কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোগে বিভিন্ন ত্রান সামগ্রী বিতরন, গৃহনির্মাণ সামগ্রী বিতরন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবাসহ বিনামূল্যে ঔষধ বিতরন করে যাচ্ছে বিজয়ী।
শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরন এবং অসহায়দের মাঝে খাবার বিশুদ্ধ পানি বিতরন করা হয়। বাল্য বিবাহ রোধ, নারী নির্যাতন ও যৌতুক বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে বিজয়ী।
নারী উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে ‘বিজয়ী’।
প্রশিক্ষণই উদ্যোক্তা হওয়ার মূল চালিকা শক্তি।
নারী উদ্যোক্তাদের অবশ্যই ব্যবসা শুরু থেকে সফলভাবে পরিচালনার জন্যে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। ২০২০ সাল থেকে নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিজয়ী প্রতিনিয়তই নানা রকম ফ্রি প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণগুলো হচ্ছে :–
প্রশিক্ষণ (২০২০-২০২২) :
১. উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় ও ব্যবসা পরিচালনা কৌশল–নিলুফার করিম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ফেইথ বাংলাদেশ;
২. বেসিক স্কিন কেয়ার এবং হেলদি লাইফ স্টাইল–তাহমিনা মীম, চেয়ারম্যান এম এফ ইউ ট্রেডিং কোম্পানি;
৩. অনলাইন নেটওয়ার্ক মাকেটিং–ডাঃ ওমর ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যাক্স ওয়ান ইন্টারন্যাশানাল; ৪. বেসিক কেক বেকিং–তানিয়া ইশতিয়াক খান/ সীমা খান;
৫. হ্যান্ড মেইড হেড পিস–আসফিয়া জাহান;
৬. হ্যান্ড পেইন্ট কাঠের জুয়েলারী–মার্জিয়া মৌরি;
৭. হ্যান্ড মেইড জুয়েলারী–তাহমিনা মীম;
৮. বেসিক বাটিক তৈরি–তানজিলা রহমান ইলা;
৯. বেসিক ব্লক তৈরি–উম্মে হানী;
১০. বেসিক ব্রাইডাল মেক ওভার ও স্কিন কেয়ার–পুষ্পিতা পুষ্প;
১১.হ্যান্ড মেইড মেটাল জুয়েলারী–ফাতেমা খন্দকার কাশফি;
১২. পিৎজা তৈরি–জাহানারা খন্দকার নেহা;
১৩. বেসিক কেক বেকিং–মাহমুদা আক্তার;
১৪. ফাস্টফুড–নিলুফার ইশতিয়াক;
১৫. বিডীদ ক্রাফ্ট–সূচনা আক্তার;
১৬. ফ্লোরাল জুয়েলারী–উম্মে হানী ও নীলা খান;
১৭. বিডীদ হ্যান্ডিক্রাফ্ট–জান্নাতুল জিদনী;
১৮. হ্যান্ড মেইড হিজাব ব্রোজ –ইশরাত জাহান শশী; ১৯. পেশাজীবী নারীদের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাণ্ড-পুষ্টিবিদ এরশাদ খান সালমান;
২০. হ্যান্ড মেইড জুয়েলারি–উম্মে হানী ও তানিয়া ইশতিয়াক খান।
প্রশিক্ষণ (২০২৩) :
১. বেসিক ব্লক প্রশিক্ষণ (পুরাণবাজার হরিজন কলোনী)–সাদিয়া সুলতানা;
২. বেসিক বাটিক প্রশিক্ষণ (পুরাণবাজার হরিজন কলোনী)–তানজিলা রহমান ইলা;
৩. বেসিক পিৎজা প্রশিক্ষণ–(পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজ)–তানিয়া ইশতিয়াক খান;
৪. ফ্লোরাল জুয়েলারী (পুরাণবাজার গার্লস স্কুল)– উম্মে হানী;
৫. হ্যান্ড মেইড এন্ড পেইন্ট কাঠের গহনা (পুরাণবাজার গার্লস স্কুল)-সুমাইয়া আক্তার শ্রাবণী; ৬. বেসিক কেক বেকিং (২টি প্রশিক্ষণ)–তানিয়া ইশতিয়াক খান।
৭. বিডিট ক্রাফট (ওসমানিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা)–জান্নাতুল মরিয়ম জিদনী;
৮. এলিগেন্ট পার্টি মেকওভার–মুন্নি আলিশা;
৯. কেক বেকিং (হাজীগঞ্জ)–মাহমুদা আক্তার;
১১. বেসিক ব্লক প্রশিক্ষণ (পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়)–সাদিয়া সুলতানা;
১২. বেসিক হ্যান্ড মেইড জুয়েলারি (পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়)–সূচনা আক্তার;
১৩. নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও অনলাইনে ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশল–ডাঃ ওমর ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যাক্স ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্রাঃ লিঃ; ১৪. পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ (৭ দিন)–আয়েশা রহমান (ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, চাঁদপুর);
১৫. শিল্প উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (৫ দিন)–ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় বিসিক, চাঁদপুর; ১৬. আলুর বহুমুখী ব্যবহার কুকিং ডেমোনেসট্রেশন (৪টি, লেডি প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি এবং লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি)–তানিয়া ইশতিয়াক খান (ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, চাঁদপুর কার্যালয়);
১৭. বেসিক হেড পিস তৈরি (হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়)–আসফিয়া জাহান;
১৮. বেসিক এন্টিক জুয়েলারী তৈরি (হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়)–কাশফি আক্তার;
১৯. জুয়েলারী তৈরি (নূরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়)–উম্মে হানী;
২০. বেসিক ব্লক প্রশিক্ষণ (নূরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়)–প্রিয়সী রায়;
২১. বেসিক ব্লক তৈরি (বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ)–সাদিয়া সুলতানা;
২২. বেসিক জুয়েলারী ও চুড়ি তৈরি (বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ)–সূচনা আক্তার;
২৩. বেসিক বিডিড ক্রাফট ( মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়)–জান্নাতুল মরিয়ম জিদনী;
২৪. হেড পিস ও হ্যান্ড মেইড জুয়েলারি (মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়)–মার্জিয়া মৌরী।
প্রশিক্ষন (২০২৪):
১. শিল্প উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (৫ দিন)–ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় বিসিক, চাঁদপুর।
২.বেসিক পিজ্জা প্রশিক্ষন – ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় জাতীয় মহিলা সংস্থা।
৩. হেয়ার রিবন্ডিং – মারিয়া ইসলাম।
৪. কেক প্রশিক্ষন – তানিয়া ইশতিয়াক খান।
৫. আলুর বহুমুখী ব্যবহার কুকিং ডেমোনেসট্রেশন (৪টি, পুরান বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মধূসুধন উচ্চ বিদ্যালয়, ওসমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা )-তানিয়া ইশতিয়াক খান। (ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, চাঁদপুর কার্যালয়)
৬.ব্লক ও বাটিক প্রশিক্ষন – তানজিলা রহমান ইলা এবং সাদিয়া সুলতানা।
৭.উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষন -৪ টি,( ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, চাঁদপুর কার্যালয়)
৮.বেসিক ব্লক ও বাটিক প্রশিক্ষন – ৫ দিন ব্যাপি,
(ব্যবস্থাপনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, চাঁদপুর);
৯. বেসিক সেলাই প্রশিক্ষন – কামরিন নাহার, মুন্নি আক্তার, শ্রাবন কর্মকার।
অর্থের অভাব দূরীকরণ : ব্যবসা পরিচালনা করতে অর্থের অভাব দূর করার লক্ষ্যে বিজয়ীর সহযোগিতায় নারীদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে স্বল্প ইন্টারেস্টে লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। চাঁদপুরের নারীদের ব্যাংক লোনের বিষয়ে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট দিয়েছে বেসিক ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা।
মানসিক শক্তির অভাব দূরীকরণ : উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট, আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে রয়েছে যার অভাব। আর এই সাপোর্ট দেওয়ার জন্যে কাজ করছে ‘বিজয়ী’র ফাউন্ডার তানিয়া ইশতিয়াক খান।
বিপণন সহায়তা প্রদান : সীমিত চলাফেরার কারণে নারীরা তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। অর্থনৈতিক পরিবেশে তাদের পণ্য সফলভাবে বাজারজাত করতে সহায়তা করার জন্যে ‘বিজয়ী’ ফেসবুক গ্রুপে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে, যাদের কাছে ঘরে বসেই অনলাইনে ফ্রিতে পণ্য কেনাবেচা করতে পারছে।
এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য অফলাইনে বিক্রয়ের জন্যে একটি শোরুমের ব্যবস্থা করে দিবেন এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্যে বিজয়ীর নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে ট্রেড লাইসেন্স করতে শুধুমাত্র সরকারি ফি রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভা।
পারিবারিক সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ : পারিবারিক সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে কাউন্সেলিং করে বিজয়ী। বর্তমান ডিজিটাল যুগে নারীরা ঘরে বসে পর্দা মেইনটেইন করে যাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। নারীরা Tenson (দুশ্চিন্তা) নয় বরং Ten Son (দশজন পুত্রের) সমান।
যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি নির্বাচনে সহায়তা প্রদান : যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নির্বাচনে নারীদের সহায়তা প্রয়োজন। তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোতে সহায়তা প্রদানের জন্যে বিসিক ও যুব উন্নয়ন থেকে নানা রকম প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে ‘বিজয়ী’।
উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে নানা রকম সহয়তা প্রদান : ‘বিজয়ী’ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের “বিজয়ী অ্যাওয়ার্ড”-এর মাধ্যমে সনদপত্র ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
নতুন উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে ‘বিজয়ী’র প্রেসিডেন্ট খালেদা ইয়াসমিন রুবি এবং বিজয়ীর এডভাইজার নিলুফার করিম নিজ খরচে সেলাই মেশিন প্রদান করেছেন। এছাড়া শুধু অনলাইন নয়, অফলাইনে পণ্য বিক্রয়ের জন্যে মেলার আয়োজন করে সেখানে উদ্যোক্তাদের ফ্রি স্টল প্রদান করে অফলাইনে পণ্য ডিসপ্লে ও সেলস্-এর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ‘বিজয়ী’।
উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা সহ লাইভে তাদের পণ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয় ‘বিজয়ী’র মাধ্যমে।
নারী উন্নয়নে কাজ করে একজন নারী সংগঠক ও সংগঠন হিসেবে ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন সমূহ যা আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে –
১. সফল নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা – হাজীগঞ্জ ই কমার্স প্লাটফরম।
২. রীন নাম করা নারী পদক – রিন পাওয়ার ওয়াইট।
৩. নতুন কুড়ি সম্মাননা পদক- নতুন কুড়িঁ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
৪. শ্রেষ্ঠ নারী সংগঠক সম্মাননা পদক- ২০২৩,ক্রাইম এ্যাকশন ২৪ নিউজ ডট কম।
৫. শ্রেষ্ঠ নারী সংগঠক সম্মাননা – জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা
৬. শ্রেষ্ঠ নারী সংগঠন সম্মাননা পদক ২০২৩ – একাত্তর কন্ঠ ও একাত্তর ফাউন্ডেশন, ইউএসএ।
৭. জয়িতা এ্যাওয়ার্ড -২০২৩, – জাতীয় মহিলা অধিদপ্তর
৮. দৌষীতী এ্যাওয়ার্ড -২০২৪, টিম কমরেড।
৯. আলোকিত প্রজন্ম এ্যাওয়ার্ড -২০২৪, আলোকিত প্রজন্ম।
১০. শ্রেষ্ঠ নারী সংগঠক সম্মাননা পদক-২০২৪, ক্রাইম এ্যাকশন ২৪ নিউজ ডট কম।
১১. শ্রেষ্ঠ নারী সংগঠক পদক- ২০২৪, চাঁদপুর অনলাইন প্রেসক্লাব।
১২. শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা এ্যাওয়ার্ড -২০২৪, জাতীয় মহিলা সংস্থা।
প্রয়োজনীয়তা-
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হল প্রশিক্ষন। আমাদের স্কুল কলেজ গুলোতে শারিরীক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষন নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ১ টি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে, লেখা পড়ার পাশাপাশি সবসময়ে নারীরা ঘরে বসে বিভিন্ন পন্য তৈরি করতে পারবে আর স্কুল লাইফ থেকে সে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারবে।
এছাড়া সরকারি সহযোগিতা, নারী উদ্যোক্তাবান্ধব বাজেট থাকলে নারীরা সফলভাবে বিনিয়োগে আসবেন, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত হিসাবাদি, জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স, ব্যাংক ঋণ, বিএসটিআই অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্সের কাজ সহজীকরণ করলে এবং সেই সাথে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত কিছু প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন করলে তারা তাদের কাজ সামনে তুলে ধরতে পারবেন।
তাতে করে আমাদের উদ্যোক্তাদের পণ্য সামনা সামনি সবাই দেখতে পারবেন এবং এতে করে নেটওয়ার্কিং-এর একটা প্ল্যাটফর্মও তৈরি হয়। তাই একটা প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল শুধু বরাদ্দই নয়, একটি সুন্দর ও সুস্থ নারী উদ্যোক্তাবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় রূপরেখা ও দেশের অর্থনৈতিক বাজেট প্রণয়নের সময় অর্থনীতির পালে নারী উদ্যেক্তারা যে হাওয়ার যোগান দেন সেটিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, আমলে নিতে হবে।