এশীয় এলএনজি বাজারে দাম বাড়ার ইঙ্গিত, সরবরাহে শঙ্কা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে

দুই সপ্তাহের টানা দরপতনের পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে এশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বাজার। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার জেরে বাজারে এ পণ্যটির চাহিদা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠছে।

শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী এলএনজির সর্বশেষ গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ দশমিক ১০ ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ সেন্ট বেশি।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও বাণিজ্য চুক্তির ছায়া বাজার বিশ্লেষক ক্লাস ডোজম্যান মনে করছেন, রাশিয়ার জ্বালানি খাতে সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে রুশ এলএনজির প্রবাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক এলএনজি-ভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইইউ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি পণ্য আমদানি করবে।

এটি মার্কিন এলএনজির রফতানি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরবরাহে বিলম্ব, চাহিদায় মিশ্রতা রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে সুনামি সতর্কতা এবং কানাডার এলএনজি প্রকল্পে অগ্রগতির ধীর গতি বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

তবে চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এখনও গ্যাসের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম এবং মজুদ বেশি, ফলে বাজারে বড় ধরনের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশ্ববাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ইউরোপের বাজারেও মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নর্থওয়েস্ট ইউরোপে এমএমবিটিইউপ্রতি এলএনজির গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৪ ডলারে, যা ডাচ টিটিএফ ফিউচারের তুলনায় কিছুটা কম।

এদিকে আর্গাস ও স্পার্ক কমোডিটিজ জানায়, বাজারমূল্য রয়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৯ ও ১১ দশমিক ৩৭ ডলারে। মিসরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমে বেড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে দেশটি অতিরিক্ত এলএনজি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস থেকে একটি চালান পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আর্গাসের জ্বালানি বিশ্লেষক মার্টিন সিনিয়র। পরিবহন ব্যয়ে বিপরীত চিত্র এলএনজি পরিবহনেও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন প্রবণতা।

আটলান্টিক রুটে প্রতিদিনের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫০০ ডলারে, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে পরিবহন ব্যয় পাঁচ সপ্তাহ ধরে কমতে কমতে এখন নেমেছে ৩৩ হাজার ৫০০ ডলারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ ঘাটতি ও ভূরাজনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও, মজুদ যথেষ্ট থাকায় এবং বেশ কিছু অঞ্চলে চাহিদা কম থাকায় বাজারে বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতি এখনই প্রত্যাশিত নয়। আগামী সপ্তাহগুলোতে এলএনজির বাজার স্থিতিশীল থেকে সীমিত ওঠানামার মধ্যেই থাকবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

এশীয় এলএনজি বাজারে দাম বাড়ার ইঙ্গিত, সরবরাহে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫

দুই সপ্তাহের টানা দরপতনের পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে এশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বাজার। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার জেরে বাজারে এ পণ্যটির চাহিদা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠছে।

শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী এলএনজির সর্বশেষ গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ দশমিক ১০ ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ সেন্ট বেশি।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও বাণিজ্য চুক্তির ছায়া বাজার বিশ্লেষক ক্লাস ডোজম্যান মনে করছেন, রাশিয়ার জ্বালানি খাতে সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে রুশ এলএনজির প্রবাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক এলএনজি-ভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইইউ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি পণ্য আমদানি করবে।

এটি মার্কিন এলএনজির রফতানি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরবরাহে বিলম্ব, চাহিদায় মিশ্রতা রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে সুনামি সতর্কতা এবং কানাডার এলএনজি প্রকল্পে অগ্রগতির ধীর গতি বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

তবে চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এখনও গ্যাসের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম এবং মজুদ বেশি, ফলে বাজারে বড় ধরনের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশ্ববাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ইউরোপের বাজারেও মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নর্থওয়েস্ট ইউরোপে এমএমবিটিইউপ্রতি এলএনজির গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৪ ডলারে, যা ডাচ টিটিএফ ফিউচারের তুলনায় কিছুটা কম।

এদিকে আর্গাস ও স্পার্ক কমোডিটিজ জানায়, বাজারমূল্য রয়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৯ ও ১১ দশমিক ৩৭ ডলারে। মিসরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমে বেড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে দেশটি অতিরিক্ত এলএনজি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস থেকে একটি চালান পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আর্গাসের জ্বালানি বিশ্লেষক মার্টিন সিনিয়র। পরিবহন ব্যয়ে বিপরীত চিত্র এলএনজি পরিবহনেও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন প্রবণতা।

আটলান্টিক রুটে প্রতিদিনের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫০০ ডলারে, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে পরিবহন ব্যয় পাঁচ সপ্তাহ ধরে কমতে কমতে এখন নেমেছে ৩৩ হাজার ৫০০ ডলারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ ঘাটতি ও ভূরাজনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও, মজুদ যথেষ্ট থাকায় এবং বেশ কিছু অঞ্চলে চাহিদা কম থাকায় বাজারে বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতি এখনই প্রত্যাশিত নয়। আগামী সপ্তাহগুলোতে এলএনজির বাজার স্থিতিশীল থেকে সীমিত ওঠানামার মধ্যেই থাকবে।