মিসরে ভিন্ন আমেজে রমজান উদযাপন

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:০২:৩৯ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • ৭০৮ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছর মিসরে রমজান মাস অন্যরকম চেতনা ও অনুভূতির সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। গাজায় চলমান ইসরাইলি নৃশংসতা মিসরীয়দের রমজান উদযাপনকে পাল্টে দিয়েছে। মিসরের আলেকজেন্দ্রিয়ায় হাঁটলে যে কারো মনে হবে, মিসরীয়দের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতিফলন ঘটছে। তারা সবকিছুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে। যেমন রমজান মাসের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম তুলে ধরতে প্রতিবেশীরা মিলে রাস্তায় আলোকসজ্জা করে থাকে। এবার আলোকসজ্জায় ফিলিস্তিন সংশ্লিষ্ট প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পুরো মিসর এক ও অভিন্ন। সাধারণত আলোকসজ্জায় লণ্ঠন ও ফেয়ারি লাইটস (ঝালর বা তারা বাতি) ব্যবহার করা হয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। মিসরীয় বিভিন্ন শপিংমল তাদের লভ্যাংশের একাংশ ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। যেমন মধ্য আলেকজেন্দ্রিয়ার মানশেয়া জেলায় অবস্থিত হাক্কানিয়া বাজার। এটি মিসরের একটি বিখ্যাত খেজুর বাজার। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা রমজানে বিপুল পরিমাণ খেজুর বিক্রি করে। তারা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে খেজুরের নাম নির্ধারণ করেছে। যেমন ‘আরব গাজা খেজুর’ ও ‘মিসরীয় রাফাহ খেজুর’ ইত্যাদি। এই বাজারের একজন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ হামদান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য। যারা ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং যাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা এই বার্তাটিও দিতে চাই যে, ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে প্রতিটি আরব একমত।

তিনি আরো বলেন, যখন ক্রেতারা খেজুরের নাম সম্পর্কে জানতে চান, তখন আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেই। এভাবে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরির একটি সুযোগ আমাদের সামনে আসে। আমরা তাদের আবেগ ও অনুভূতি দেখে আপ্লুত হই। ক্রেতারাও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির উদ্যোগে আনন্দিত। ৫১ বছর বয়সী আহমদ সাঈদ বলেন, এই পরিকল্পনাটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরব গাজা খেজুর কিনে বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব। যদিও এটি সাধারণ একটি চিন্তা, তবুও এর মাধ্যমে সংহতি জানানো যায়। গৃহবধূ সালমা ফুয়াদও মনে করেন, ব্যবসার সাথে মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোতে দোষের কিছু নেই। ক্রেতারা শুধু পণ্য কিনে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে না, বরং তারা এজন্য দায়ী কিছু দেশের পণ্যও বর্জন করছে।

মিসরের রাস্তাঘাটে রমজান উপলক্ষ্যে যে আলোক সজ্জা করা হয়েছে, তাতে যুক্ত করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। একই সঙ্গে আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে মুখোশ পরানো লণ্ঠন। যা মূলত হামাসের আল কাসসাম বিগ্রেডের মুখপাত্র আবু উবায়দার দিকেই ইঙ্গিত করে। সাজসজ্জার এই পরিবর্তন শিশুদের ভেতরও গাজা ফিলিস্তিন সম্পর্কে কৌতুহলী করে তুলেছে। শিশুরা তাদের ঘরোয়া সজ্জায়ও ফিলিস্তিনের পতাকা ব্যবহার করছে এবং অভিভাবকদেরকে ফিলিস্তিন বিষয়ে প্রশ্ন করছে। ফাতেমা আল জাহরাকে তার ছেলে প্রশ্ন করেছিল, রাস্তায় কেন ভিন্ন একটি পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘গাজায় তোমার মতো অনেক শিশু আছে। তারা কষ্ট পাচ্ছে। এটা তাদের দেশের পতাকা। আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদেরকে সমর্থন করতে হবে।’

মিসরীয়রা বিশ্বাস করেন, এ বছর রমজান কেবল উপবাস বা আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির মাস নয়, বরং এটি সংহতি প্রকাশ ও প্রতিরোধের ধারণাকে সমর্থন করার মাস। ফলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের এমন কতগুলো মাধ্যম বেছে নিয়েছে যাতে মানুষ খুব সহজে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মিসরে ভিন্ন আমেজে রমজান উদযাপন

আপডেট সময় : ০৮:০২:৩৯ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
চলতি বছর মিসরে রমজান মাস অন্যরকম চেতনা ও অনুভূতির সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। গাজায় চলমান ইসরাইলি নৃশংসতা মিসরীয়দের রমজান উদযাপনকে পাল্টে দিয়েছে। মিসরের আলেকজেন্দ্রিয়ায় হাঁটলে যে কারো মনে হবে, মিসরীয়দের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতিফলন ঘটছে। তারা সবকিছুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে। যেমন রমজান মাসের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম তুলে ধরতে প্রতিবেশীরা মিলে রাস্তায় আলোকসজ্জা করে থাকে। এবার আলোকসজ্জায় ফিলিস্তিন সংশ্লিষ্ট প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পুরো মিসর এক ও অভিন্ন। সাধারণত আলোকসজ্জায় লণ্ঠন ও ফেয়ারি লাইটস (ঝালর বা তারা বাতি) ব্যবহার করা হয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। মিসরীয় বিভিন্ন শপিংমল তাদের লভ্যাংশের একাংশ ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। যেমন মধ্য আলেকজেন্দ্রিয়ার মানশেয়া জেলায় অবস্থিত হাক্কানিয়া বাজার। এটি মিসরের একটি বিখ্যাত খেজুর বাজার। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা রমজানে বিপুল পরিমাণ খেজুর বিক্রি করে। তারা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে খেজুরের নাম নির্ধারণ করেছে। যেমন ‘আরব গাজা খেজুর’ ও ‘মিসরীয় রাফাহ খেজুর’ ইত্যাদি। এই বাজারের একজন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ হামদান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য। যারা ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং যাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা এই বার্তাটিও দিতে চাই যে, ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে প্রতিটি আরব একমত।

তিনি আরো বলেন, যখন ক্রেতারা খেজুরের নাম সম্পর্কে জানতে চান, তখন আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেই। এভাবে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরির একটি সুযোগ আমাদের সামনে আসে। আমরা তাদের আবেগ ও অনুভূতি দেখে আপ্লুত হই। ক্রেতারাও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির উদ্যোগে আনন্দিত। ৫১ বছর বয়সী আহমদ সাঈদ বলেন, এই পরিকল্পনাটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরব গাজা খেজুর কিনে বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব। যদিও এটি সাধারণ একটি চিন্তা, তবুও এর মাধ্যমে সংহতি জানানো যায়। গৃহবধূ সালমা ফুয়াদও মনে করেন, ব্যবসার সাথে মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোতে দোষের কিছু নেই। ক্রেতারা শুধু পণ্য কিনে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে না, বরং তারা এজন্য দায়ী কিছু দেশের পণ্যও বর্জন করছে।

মিসরের রাস্তাঘাটে রমজান উপলক্ষ্যে যে আলোক সজ্জা করা হয়েছে, তাতে যুক্ত করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। একই সঙ্গে আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে মুখোশ পরানো লণ্ঠন। যা মূলত হামাসের আল কাসসাম বিগ্রেডের মুখপাত্র আবু উবায়দার দিকেই ইঙ্গিত করে। সাজসজ্জার এই পরিবর্তন শিশুদের ভেতরও গাজা ফিলিস্তিন সম্পর্কে কৌতুহলী করে তুলেছে। শিশুরা তাদের ঘরোয়া সজ্জায়ও ফিলিস্তিনের পতাকা ব্যবহার করছে এবং অভিভাবকদেরকে ফিলিস্তিন বিষয়ে প্রশ্ন করছে। ফাতেমা আল জাহরাকে তার ছেলে প্রশ্ন করেছিল, রাস্তায় কেন ভিন্ন একটি পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘গাজায় তোমার মতো অনেক শিশু আছে। তারা কষ্ট পাচ্ছে। এটা তাদের দেশের পতাকা। আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদেরকে সমর্থন করতে হবে।’

মিসরীয়রা বিশ্বাস করেন, এ বছর রমজান কেবল উপবাস বা আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির মাস নয়, বরং এটি সংহতি প্রকাশ ও প্রতিরোধের ধারণাকে সমর্থন করার মাস। ফলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের এমন কতগুলো মাধ্যম বেছে নিয়েছে যাতে মানুষ খুব সহজে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।