দেশে হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ নানা অনৈতিক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়া এবং এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। দুপুর ১২টা ৫ মিনিট হতে ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মহাসড়কের আরিচাগামী লেন অবরোধ করে সেখানে সমাবেশ করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ”
গণঅভ্যত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন,”ঠিক এই স্থানে দাঁড়িয়েই মাত্র ৭ মাস আগে আমরা তৎকালীন ফ্যাসিস্ট এবং সৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলাম, এবং রাজপথে দাঁড়ানোর পরিণাম কি হয়েছে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। আপনারা দেখেছেন ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের সবার আশা আকাঙ্খার সরকার গঠিত হয়েছিল।
আমরা আশা করেছিলাম, আমার মা-বোনেরা নির্বিঘ্নে নিরাপদে যখন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা যেতে পারবে। আমরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা বানিজ্য করতে পারবো এবং নিরাপদে চলাচল করতে পারবো। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের যে সেক্টরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিলো সেই সেক্টরেই সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা এর মধ্যে একটি ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। এর আগে যখন এক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন তাকে আমরাই পদচ্যুত করতে বাধ্য করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম যে পরবর্তী সময়ে যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরনে সক্ষম হবেন। কিন্তু সেনাবাহিনী সরকার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে রাজপথে থাকার পরেও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা দিনদিন অবনতি হচ্ছে। যেখানে সেখানে ছিনতাই হচ্ছে, আমার বোনেরা বাসের মধ্যে ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে যা আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
জাসদ চরমপন্থী কতৃক আমার ভাইদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আমার মায়ের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। এগুলা দেখে সেই মাৎসন্যায়ের কথা মনে পরে যায়। আমরা আপনাদেরকে পদত্যাগ করার কোন আল্টিমেটাম দিচ্ছিনা আপনারা যদি সম্মানের সহিত আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তাহলে করেন নাহলে সম্মানের সহিত পদত্যাগ করেন।”
সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন,”সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের জনগণ রাতে বাইরে বের হলে জীবন হুমকির মুখে পড়তেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি যদি দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে গদি ছেড়ে দেন আমরা বিকল্প কাউকে ভেবে নেব। গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন জেলায় যখন বিপ্লবীদের উপর বিভিন্নভাবে হামলা হচ্ছিল তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডেভিল হান্ট নামে একটি অপারেশন চালু করে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবীদেরকেই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পদে এখনো আওয়ামী দোসররা বহাল রয়েছে। এইসব আওয়ামী দোসরদেরকে অনতিবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে। অন্যথায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যদি যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারেন তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কঠোরতর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।”
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ান বলেন,”স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনী ছয়মাস ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়েও কিছু করতে পারেনি। সারাদেশে সন্ত্রাসবাদ রুখতে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সারাদেশে প্রতিনিয়ত আমার মা-বোনদের সঙ্গে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে নিরাপদবোধ করছে না। দেশের মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। আগামী একঘন্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করলে আমরা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বাধ্য হবো।”
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর আগেও নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং তাদের এই কর্মসূচি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে তারা আশা করছে।