বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরে ১০ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান করে ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠিত হয়। মূলত তাদের প্রতিবেদনে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক ‘অবকাঠামো ও সংযোগ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক অংশটি করেন।
প্রকল্পের অধীনে যেন বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় না করা হয়, সে পরামর্শও প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জোর দেওয়া হয়েছে। লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, দুরন্তর মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে দ্বিতল ও বড় বাস বাড়ানোর কথাও টাস্কফোর্স কমিটি বলেছে।
প্রতিবেদনে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এখনই উড়াল সড়ক নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য চাষযোগ্য জমি বাঁচাতে শহরের বাইরে উড়াল সড়ক ও উড়াল রেলপথ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
চার মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল করতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি দিতে রাজি হয়নি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের সঙ্গে জমি–সংক্রান্ত জটিলতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। একই কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনকেও মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। রেলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ঘিরেও।
নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয় টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, ট্রাম, বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট), এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট), মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রোরেল ও রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সব ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সামছুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে, তা ‘জট লাগানো’ উন্নয়ন। এ জন্য লাখো কোটি টাকা খরচ করেও সুফল মিলছে না। তারা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, তা হচ্ছে জট ছোটানোর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এগুলো বাস্তবায়ন করে উপকৃত হয়েছে।