অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, ব্যক্তির অপরাধের কারণে ব্যক্তি ট্রায়ালের শিকার হবে, তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা অভয় দিতে চাই। আপনারা আপনাদের কাজ করুন। তাদের জন্য এত বছর জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারেননি, এখন সুযোগ এসেছে সেদিকে নজর দিন।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে একটা সমস্যা হলো ট্রানজেকশনের (লেনদেন) একটা প্রভাব। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ মালিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার বা ঋণখেলাপির অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে ব্যক্তির অপরাধ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আছে। যে ব্যক্তি অপরাধ করেছে, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ব্যাবহার করে এবং সরকারের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে অর্থপাচার করেছে; তাদেরকে আমরা ট্রায়ালের আওতায় নিয়ে আসব। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় রাখার জন্যে সরকার সহযোগিতা করছে। খবর বিডিনিউজের।
এ বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকোর সাথে ৭০ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর জীবন জড়িত। তার মানে ৭০ হাজারটি পরিবারের জীবন সেখানে জড়িত। তো সেই প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার জন্যে সরকার সাহায্য করছে; তাদেরকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দ্রব্যমূল্যের একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই আমরা কার্যক্রম শুরু করি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তার কিছু সুফল আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, গত বছর একজন ভোক্তা হিসেবে দেখেছি যখন দামটা বাড়া শুরু করে, তখন সেটা অসীম পর্যায়ে চলে যায়। কাঁচামরিচের দাম ১২০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। দাম সঠিক সময়ে এবার নিয়ন্ত্রণ করায় আর বাড়তে পারেনি। শীতের সবজি আসছে। দাম আরও কমে আসবে বলে আশা রাখছি।
তিনি বলেন, এ সরকারে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি চেষ্টা করি। টাস্কফোর্সে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি। ট্রাফিক পুলিশিং যারা করেছিল, তাদেরকে পুলিশে পার্টটাইম কাজ করানোর কাজ চলমান আছে এবং যেকোনো কাজে তরুণদের অংশগ্রহণই এই সরকারকে সফল করতে পারে। তরুণদের কাজ করার স্পৃহা, নির্লোভ সত্তা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশের দিকে ধাবিত করতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উপদেষ্টা হওয়া আসিফ মাহমুদ বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনের বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি। আমরা দ্রব্যমূল্য লাঘবসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা দ্রুত দ্রব্যমূল্য লাঘবের চেষ্টায় আছি।
তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে সাহায্য করছি। কোনো প্রকার সিন্ডিকেট বা মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্য যেন না আসে সেদিকে তারা কাজ করছে। কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে যারা কাজ করছে, তাদেরকে সরকার সাহায্য করছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে গত ৫ সেপ্টেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব করে সরকার। শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে আমার সেক্রেটারি হিসেবে নেওয়ার কারণ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উনার কাজ দেখা। তাই আমি বলতে চাই, পদোন্নতির জন্য আপনি ঘুষ নয়, নিজের কাজ ভালোভাবে করলে পদোন্নতি হবে।
বর্তমান সরকার কোনো ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ইতিপূর্বে যে সরকারগুলো ছিল, তারা সবাই কর্পোরেটদের হাতে জিম্মি ছিল। আমরা কর্পোরেটদের হাতে বন্দি নই, আমরা স্বাধীন। আমরা যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি এবং নিচ্ছি। দেশের অন্যতম দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও কিন্তু ছাড় দেইনি।
মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় করাই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, একটা কাজ করতে গেলে আমাদের সদিচ্ছাগুলো আটকে যায় বাস্তবায়নে গিয়ে। আমরা মাঠ প্রশাসনে প্রভাব দেখতে পাই না। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে রদবদল করে সমাধান করার। দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে তারা যেন জনকল্যাণে কাজ করতে পারে সে নির্দেশনা দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, কিছুদিন আগে বন্যা হয়েছে, অনেক জেলায় ফসলহানি হয়েছে। বছরের এই সময়ে সারাদেশে কার্তিক–অগ্রহায়ণের মঙ্গা নামে পরিচিত শীতে কিছু ফসলের ঘাটতি হয়। এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু এটিকে আমরা অজুহাত হিসেবে নিতে চাই না। এটি তো আমরা আগে থেকেই জানতাম যে এসময় এমন হবে। তাই এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।