জনতার প্রিয় হতে চাওয়ার কাতারে দাঁড়ানোর আকাঙ্খা, আগ্রহ, সখ এখন প্রায় সব মানুষের। হ্যালো ভিউয়ার্স বলে শুরু করে দিলেই- ‘আছি সাথে আছি ’ বলে অজস্র ভিউয়ার- ভাই বন্ধুরা দাঁড়িয়ে যায়। এটা কপালের কাল বলা যেতে পারে।
মধ্যরাতে ঘুম আসছে না দেখে বর্তমান জমানার এক তরুণ স্বামী ফাল দিয়ে উঠে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ফেলে।ঘুমন্ত স্ত্রীকে দেখায়- দেখুন ভিউয়ার্স, আমার স্ত্রী কিভাবে ঘুমায়। সেই বেচারী স্ত্রীর ঘুমখানা হয়ে দাঁড়ায় অতি চমৎকার এক বিনিয়োগ। তাতে অজস্র লাইক আসে, সে লাইক নিয়ে আসে টাকা, বাড়িয়ে দেয় নিজের দাম। একজনের ঘুম দর্শনের সুযোগ করে দিয়ে জীবনে এসে যায় বহু পরিবর্তন।
লাখ লাখ মানুষের প্রশ্রয়, সমর্থন পেলে ভুল ঠিকের ব্যবধান ঘুঁচে যায়। যে কোনও মানুষই নির্দ্বিধায় ভেবে নিতে পারে, আমি আর সাধারণ নেই। অসাধারণ হওয়া এতো সহজ হয়ে গেলে মনে হতেই পারে, পৃথিবীটা বিরাট কিছু নয়, তা আমার উঠানের বান্ধা গরুর মতো। ঠ্যাং-এ দড়ি লাগিয়ে নিজের উঠানের খুঁটিতে বেঁধে ফেলেছি তাকে, বিরাট এই পৃথিবীটাকে।
এই বেঁধে ফেলতে পারায়- সুখ, লাভবান হওয়ার অনুভব নিশ্চয়ই আছে, তার সাথে আছে খাল কেটে কুমীর আনার মতো জীবনে, সমাজে ভয়াবহ লোকসান ডেকে আনার ভূমিকাও। বাস্তবতা হচ্ছে সামনে নগদ লাভ যদি মেলে পিছনের লোকসানের কথা কে ভেবে দেখতে চাইবে, চায়?
ঘোলা জলে মাছ শিকারের মতো নব্য এই সংস্কৃতির জালে দেশের সিংহভাগ মানুষ ফেঁসে আছে। যা খুশী তাই করতে চাওয়া, করতে পারা জন ও মন অতি বিপদজনক। তেমন মনের কাছে নিজে ছাড়া কেউ, কিছুই মূল্যবান নয়।
লাইকে লাইকে ফুলে ফেঁপে ওঠা মন ও প্রাণ আপন আনন্দেই বিভোর থাকে। দেশ সমাজ, মানুষ ও মূল্যবোধ- এসব নিয়ে ভাবনা সে আনন্দের দেয়াল ভেদ করে মনের অন্দরে প্রবেশ করতেই পারেনা। ব্যক্তিগত আনন্দ সমষ্টির ভিতর থেকে শুষে নিচ্ছে আলো, ভালো ও প্রেম। বেলা ডোবার আগে কে দেখতে পায়, কার চোখে পড়ে কিভাবে গাঢ় হয় অন্ধকার?
লেখক : জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা