নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গায় প্রাইভেট কারের চাকায় পিষ্ট হয়ে সোনা মিয়া (৩০) নামের এক ভেড়া পালনকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা গেছে ১১টি ভেড়া ও ৩টি ছাগল। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের হাজরাহাটি মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় গুরুতর আহত হন ভেড়া পালনকারী সোনা মিয়া। স্থানীয় ব্যক্তিরা গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সোনা মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে রেফার্ড করলে রাজশাহী নেওয়ার সময় পথের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত সোনা মিয়া হাজরাহাটি গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে।
জানা যায়, গতকাল সকালে প্রতিদিনের ন্যায় ভেড়া ও ছাগল চরাতে যান সোনা মিয়া। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সোনা মিয়া ভেড়া ও ছাগলের পাল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তিনি চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের হাজরাহাটি মোড়ে পৌঁছালে আলমডাঙ্গার দিকে থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে আসা ঢাকা মেট্রো-গ-১৯-২৪৫৩ নম্বরের একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেড়ার পালের মধ্য দিয়ে ছুটে যেয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। এ সময় সোনা মিয়া দ্রুতগতির প্রাইভেট কারের সঙ্গে ছিটকে যেয়ে গাছের সঙ্গে চেপটে যান এবং প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ১১টি ভেড়া ও ৩টি ছাগলের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এ সময় গুরুতর জখম সোনা মিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পরিবারের সদস্যরা সোনা মিয়াকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। অ্যাম্বুলেন্সটি নাটোর বনপাড়া এলাকা পৌঁছালে পথের মধ্যে মারা যান সোনা মিয়া। সোনা মিয়া মারা যাওয়ায় রাত ১১টার দিকে লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি হাজরাহাটি গ্রামে পৌঁছায়। তবে এ দুর্ঘটনার পর প্রাইভেট কার চালকের হদিস মেলেনি। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কারটি ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যান চালক। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রাইভেট কারটি পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রাইভেট কারটি যেভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে, তাতে গাড়ির ভেতরে থাকা চালক অবশ্যই আহত হবে। তবে চালককে আমরা দেখিনি। হয়তো গাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনো যানবাহনের সাহায্য নিয়ে সে পালিয়ে গিয়েছে।’ দুর্ঘটনার সময় প্রাইভেট কারে আর কোনো যাত্রী ছিল কি না বা তাঁদের মধ্যে কেউ আহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও জানা গেছে, এ ধরনের কোনো যাত্রী বা চালক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেননি।
এ দুর্ঘটনায় আহত সোনা মিয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সোনা মিয়ার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের হাজরাহাটি মোড়ে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় সোনা মিয়া নামের এক ভেড়া পালনকারী গুরুতর জখম হলে তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যরা নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় নিহতের লাশ হাজরাহাটিতেই রয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পেলেও পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হলেও গাড়ির চালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গাড়ির মালিক ও চালককে দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।