নিউজ ডেস্ক:
ইটালির টুরিন শহরে সম্প্রতি খোলা এক যৌনপল্লী তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই যৌনপল্লীতে নারী যৌনকর্মীর পরিবর্তে আছে সেক্স ডল। চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এটি ব্যবসাও করছে ভালো।
এই শহরের খ্যাতি গাড়ি আর চকোলেটের জন্য। কিন্তু সম্প্রতি আলোড়ন এবং বিতর্ক তৈরি করেছে সেখানে খোলা এক নতুন ব্যবসা – নতুন ধরনের এক যৌনপল্লী।
সেখানে নারী যৌনকর্মীর পরিবর্তে আছে কেবল যৌন পুতুল বা সেক্স ডল। এই পুতুলগুলোর সাথেই যৌন কর্ম করে খদ্দেররা।
এই যৌনপল্লীর প্রতিটি কক্ষে আছে একটি করে বিছানা। হালকা লাল আলো জ্বলছে ভেতরে। রুমের ভেতরেই আছে শাওয়ার। টেলিভিশন। আর আছে একটি করে সেক্স ডল।
পুতুলগুলো একেবারেই নরম। মোট ১২টি পুতুল আছে সেখানে। প্রতিটির চুলের স্টাইল আলাদা, দেহের গঠন আলাদা, পরনের পোশাকও আলাদা।
এসব পুতুল তৈরি করা হয়েছে সিলিকন দিয়ে। কিন্তু দেখতে একেবারে জীবন্ত। যৌনপল্লীর একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখানে এখানে ম্যাজিক বিক্রি করছি।
পুতুলের এই যৌনপল্লীটি চালান এক মহিলা। বয়স তার পঞ্চাশের কোঠায়। নিজের নাম বলতে চাইলেন না। কিন্তু তিনি কি আইন মেনে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন?
“অবশ্যই এখানে সবকিছু বৈধ, আইন মেনেই করা হচ্ছে। এখানে অনৈতিক কিছু হচ্ছে না, কাউকে শোষণ করা হচ্ছে না। এখানে লোকজন আসছে, ফুর্তি করছে। তারা কারও কোন ক্ষতি করছে না,” বলেন তিনি।
পরের ঘরটিতে ছিল একজন খদ্দের। নার্সের পোশাক পরা এক পুতুলের সঙ্গে বসে আছেন তিনি। যদি যৌন কাজের জন্যই তিনি এখানে এসে থাকেন, তাহলে একজন সত্যিকারের রক্তমাংসের মানুষের পরিবর্তে কেন একটা পুতুলকে তিনি বেছে নিচ্ছেন?
তিনি জবাব দিলেন, “একজন যৌনকর্মী একজন সত্যিকারের মানুষ। আপনি দেখতে কেমন, আপনি কি কল্পনা করেন, সেসব নিয়ে সে হয়তো আপনাকে বিচার করবে। কিন্তু একটা পুতুলের ক্ষেত্রে তার বালাই নেই। তখন আমাকে কেবল নিজের তৃপ্তির কথাটাই ভাবতে হবে। নিজেকে অনেক বেশি ভারমুক্ত মনে হবে।”
যৌনকর্মীর বদলে খদ্দেররা কেন যাচ্ছে সেক্স ডলের কাছে
প্লেবয় ম্যাগাজিনের ফটো শ্যুট চলছে একটা জায়গায়। মডেল মারিনার ছবি তোলা হচ্ছে। ফিতা দিয়ে চুল বাঁধা, নখে টকটকে লাল নেইল পলিশ, পায়ে ল্যাটেক্সের বুট। নিজের পেশা নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন মারিনা?
তিনি বলেন, “আমার পেশা নিয়ে আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই। এটাকে আমি প্রতিযোগিতা বলেই মনে করি না।”
সেক্স ডল কি ভবিষ্যতে যৌনকর্মীদের জায়গা নিয়ে নেবে?
“না, আমার তা মনে হয় না। তবে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। কারণ এই ব্যাপারটি হয়তো অনেকের কাছে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর মনে হতে পারে।”
এসব সেক্স ডল আসলে নারীকে একটা বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করছে বলে সমালোচনা আছে। তবে সেক্স ডলের মালিকরা দাবি করছেন, তারা এসব সেক্স ডলকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখেন। এদের একজন যুক্তরাজ্যের ডীন। তার নয়টি সেক্স ডল আছে।
স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ডীনের ছেলেমেয়েরাও তার কাছ থেকে চলে গেছে। নিঃসঙ্গ বোধ করছিলেন তিনি। তখন এসব সেক্স ডল নাকি তার শূন্যতা পূরণ করেছে। কিন্তু ব্যাপারটা কি খুব বিদঘুটে এবং একটু ভৌতিক নয়?
“কেন আপনার বিদঘুটে বা ভৌতিক মনে হচ্ছে? আমার পুতুলগুলো কাউকে বাছবিচার করে না। কোন বাজে কথা বলে না। আর তারা ব্রেক্সিটের জন্য ভোট দেবে না। আর এজন্যেই আমি তাদের পছন্দ করি,” ডীনের সোজা জবাব।
কিন্তু ডীন যদি আবার কোন নারীর সঙ্গে প্রেম শুরু করেন এবং সেই নারী যদি এই সেক্স ডলের ব্যাপারে আপত্তি জানান, তখন কী হবে?
তিনি বলেন, “না, আমি একে বাদ দিতে পারবো না। গত কয়েক বছরে ও আমাকে এত দিয়েছে যে, আমি ওকে ছাড়তে পারবো না। কখনোই না।”
ডীন বলছেন, এই সেক্স ডল তাকে সুখী করেছে। আর ইটালিতে এসব সেক্স ডল অর্থ নিয়ে আসছে। শুধু ইটালি নয়, এই সেক্স ডলের ব্যবসা এখন জমজমাট স্পেন, রাশিয়া, জার্মানিসহ আরো অনেক দেশে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।