বিএনপির তিনটি অফিসে অগ্নিকা- : ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: নির্বাচনী প্রচারে ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে। তবে এর সঙ্গে বাড়ছে সহিংসতাও। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মাহমুদ হাসান খান বাবুর জীবননগর উপজেলার প্রধান নির্বাচনী অফিসহ তিনটি নির্বাচনী অফিসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনটি অফিসে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা দুইটি টিভি, তিনটি মোটরসাইকেলসহ প্রায় সাড়ে চারশ’ প্লাস্টিক চেয়ার পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে তারা অভিযোগ করে। পরে জীবননগর ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, জীবননগরের পৃথকস্থানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর ও বিএনপি অফিসে আগুনের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জীবননগরের ভোটের পরিবেশ। যে কোন বড় ধরণের সংঘাতের আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে জীবননগর পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ড গোপালনগরে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অফিসে থাকা প্রায় ২০টির বেশি প্লাস্টিকের চেয়ার পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। এর কিছুক্ষণ পর পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ড আঁশতলাপাড়ার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা নোয়াব আলীর বাড়ির সামনে বিএনপির উপজেলা অফিস ও বর্তমানে বিএনপির প্রধান নির্বাচন অফিসে আগুন লাগে। পরে জীবননগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যেয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অফিসের মধ্যে থাকা ৩টি মোটরসাইকেল, দু’টি টেলিভিশন ও ১২০টি প্লাস্টিকের চেয়ার আগুণে পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। পরে রাত দুইটার দিকে লক্ষীপুর ব্রীজ মোড়ে ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচনী অফিসেও আগুন লাগে। এ অগ্নিকা-ে প্রায় ৫০টির বেশি প্লাস্টিকের চেয়ার পুড়ে ভষ্মিভূত হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন তোয়া ও জীবননগর পৌর বিএনপির সভাপতি শাজাহান কবির অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার রাতে জীবননগরে সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা নোয়াব আলীর বাড়ির সামনে আমাদের প্রধান নির্বাচনী অফিসে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মিরা রাতের আধারে গোপনে সঙ্গবদ্ধভাবে এসে অফিসের তালা ভেঙ্গে আগুণ লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় অফিসের মধ্যে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল, দু’টি টেলিভিশন ও ১২০টি প্লাস্টিকের চেয়ার, ৮-১০টি কাঠের চেয়ার ও একটি বড় টেবিল এবং ১টি ছোট টেবিল আগুণে পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। এছাড়া জীবননগর পৌর এলাকার ৩নং ও ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের কর্মিরা। এতে আমাদের তিনটি অফিসের প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার মালামালের ক্ষতি সাধন হয়েছে। আমরা সকালে (আজ শুক্রবার) থানায় অভিযোগ জানাবো বলে তারা সাংবাদিকদের জানান।জীবননগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মোশাররফ হোসেন জানান, জীবননগর আঁশতলাপড়ার বিএনপির নির্বাচনী অফিসে আগুণ লাগার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। আমাদের সাথে দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের টিমও যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে কাউকে দেখতে না পাওয়ায় আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুণ লাগতে পারে।
এ আগুন লাগার ঘটনায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মালামালের ক্ষতি সাধন হলেও আমরা প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। তিনি আরো জানান, আমরা ২টি মোটরসাইকেল, ১টি টিভি, ১টি ছোট (মন্টু) স্যালোমেশিন, ৮-১০টি চেয়ার, ২টি টেবিলসহ বেশকিছু পোস্টার পুড়ে যেতে দেখেছি। যার আনুমানিক ক্ষতি আড়াই লাখ টাকার মত হতে পারে।এ বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গনি মিয়া বলেন, আগুণ লাগার সংবাদ পেয়ে জীবননগর পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুণ নিয়ন্ত্রনে আনে। ঘটনাস্থলে কাউকে দেখা যায়নি। তবে আগুণ লাগার কারণ খতিয়ে দেখব।এদিকে, জীবননগর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আঁশতলাপাড়ায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ৬টি মোটরসাইকেলযোগে কিছু যুবক ৮নং ওয়ার্ড আঁশতলাপাড়ায় প্রবেশ করে এবং পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইখতিয়ারের বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসটি ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। জীবননগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তুজা জানান, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড আঁশতলাপাড়ায় নৌকা প্রতীকের অফিসে বিএনপির নেতাকর্মিরা হামলা করে ভাংচুর করেছে। এ বিষয়ে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। এ সংবাদ শুনে ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেন জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শেখ গনি মিয়া। তিনি বলেন, নৌকার নির্বাচনী অফিসে ভাংচুরের বিষয়ে অভিযোগ করলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গহন করবো। এদিকে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের ঘটনায় জীবননগর শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোন সময় হতে পারে রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনা।অপরদিকে, জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বাঁকা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৭টার দিকে সুটিয়া গ্রামের বিএনপি-জামায়াতের কর্মিরা রাতের আধারে হাতে রড, লাঠি সোটা নিয়ে অতর্কিতভাবে সুটিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায়। এতে অফিসের ভিতরে থাকা চেয়ার, টেবিলসহ আনুমানিক ১৫ হাজার টাকার মালামাল ভাংচুর করে এবং নৌকার পোস্টার ছিড়ে ফেলে দেয়। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঁকা ইউনিয়ন বিএনপির একনেতা অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার রাত ১টার দিকে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলযোগে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মি ঘোষনগর গ্রামে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীকের ব্যানার ছিড়ে গর্তের মধ্যে রেখে যায়। এ ব্যাপারে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গনি মিয়া জানান, সুটিয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের অফিসে ভাংচুরের বিষয়ে আমার কাছে তেমন কোন অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া অফিস ভাংচুরের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।